Lok Sabha Election 2024

বিক্ষোভের মুখে শুরু, শেষে তাপস অবশ্য স্বস্তিতেই

বুথ থেকে তাপস যখন গাড়িতে চাপছেন, তখনও এ সব হুমকি নিয়ে কোনও তাপ-উত্তাপ নেই। বরং, ভোট যা হচ্ছে, তাতে তিনি বেশ সন্তুষ্ট বলেই মনে হল। শেষ বিকেলে বেলেঘাটা, ফুলবাগান এলাকাতেই চক্কর কাটলেন তিনি।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২৪ ০৮:৩৮
Share:

কলকাতার সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার অঞ্চলে বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়। শনিবার। ছবি: সুমন বল্লভ।

ভোটের শেষ বিকেলে বেলেঘাটার চাউলপট্টির একটি প্রাথমিক স্কুলের বুথ থেকে বেরোচ্ছিলেন পদ্ম-প্রার্থী তাপস রায়। হঠাৎই পিছন থেকে ‘কাকু, কাকু’ বলে ছুটে এলেন বিজেপির এজেন্ট। হাত-পা নেড়ে যা বোঝালেন, তার মর্মার্থ, ভোট শেষে বুথ ছেড়ে বেরোলেই মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে। পোড়-খাওয়া তাপস নিরুত্তাপ! শুধু বললেন, ‘‘ভয়ের কিছু নেই। ভোট শেষে বাড়ি ফিরে যেয়ো।’’ তার পরেই দলীয় কর্মীদের ডেকে নির্দেশ দিলেন, ওই এজেন্টকে যেন জল-টল দেওয়া হয়।

Advertisement

বুথ থেকে তাপস যখন গাড়িতে চাপছেন, তখনও এ সব হুমকি নিয়ে কোনও তাপ-উত্তাপ নেই। বরং, ভোট যা হচ্ছে, তাতে তিনি বেশ সন্তুষ্ট বলেই মনে হল। শেষ বিকেলে বেলেঘাটা, ফুলবাগান এলাকাতেই চক্কর কাটলেন তিনি।

ভোটের শনিবারের সকালে অবশ্য পদ্ম-প্রার্থীর মুখ দেখে মনে হয়েছিল, এই বুঝি মেঘ জমছে, পর ক্ষণেই মেঘ কেটে বেরোচ্ছে রোদ! ঠিক যেন আবহাওয়ার মতো! সাতসকালেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন তাপস। বেলেঘাটায় ঢুকতেই পড়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের মহিলা বাহিনীর বিক্ষোভের মুখে। শুনেছিলেন, ‘চোর, চোর’ স্লোগান, সঙ্গে বাছাই করা শব্দবন্ধ। ভোটের আগে দল বদলানো রাজনীতিবিদের জন্য এমন ঘটনা বিনা মেঘে বজ্রপাত নয় ঠিকই। তবুও তাপসের মুখে যেন মেঘের ছায়া নেমে এসেছিল। বেলেঘাটা সেল্‌স ট্যাক্সের বুথে যখন ঢুকছেন, মুখ বেশ ভার। শুধু বললেন, ‘‘মহিলাদের মুখের ভাষা শুনেছিলেন? এমন ঘটনা যদি ওঁদের প্রার্থীর সঙ্গে হয় ভাল লাগবে?’’ বলেই বুথ পরিদর্শন সেরে এসইউভি চেপে ছুটলেন তিনি।

Advertisement

বেলেঘাটা, এন্টালি, ট্যাংরা ঘুরে থামলেন ক্যালকাটা বয়েজ স্কুলে। এ তো শুধু বুথ নয়, একেবারে প্রতিপক্ষ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি! তড়িঘড়ি বুথ পরিদর্শন সেরে এ বার গন্তব্য সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার। একদা প্রতিপক্ষ এবং অধুনা সতীর্থ সজল ঘোষের বাড়ির সামনে ছাউনিতে বসলেন। জল-টল খেলেন। তার পর উঠতেই ফের বিক্ষোভ। কাছেই বঙ্গবাসী কলেজ স্কুলের সামনে এক দল তৃণমূল সমর্থকের রীতিমতো রণং দেহি মেজাজ। মিনিট কয়েকের বিক্ষোভ শেষে তাঁরা শান্ত ভাবেই সরে গেলেন। সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার ছেড়ে বেরিয়ে এ বার উত্তর এবং মধ্য কলকাতার বুথ পরিদর্শন সেরে তাপস এসে বসলেন মানিকতলায় দলীয় ক্যাম্পে। বড় মাপের অশান্তি নেই, তেমন ছাপ্পা ভোটের খবরও আসছে না। তবুও তাপসের মুখে মেঘ কাটছে না। কাকতালীয়, আকাশও তখন মেঘলা। মনে হচ্ছে, এই বুঝি বৃষ্টি নামবে!

মেঘ কাটল টালায় মোহিত মৈত্র মঞ্চের বুথের সামনে এসে। একের পর এক ফোন এল তাপসের কাছে। বদলে গেল মুখ-চোখের অভিব্যক্তি। তাপস সংবাদমাধ্যমকে বললেন, ‘‘ভোটারদের আবেদন করছি, বাড়ি থেকে বেরিয়ে গণতন্ত্রের স্বার্থে নির্ভয়ে ভোট দিন।’’ তত ক্ষণে আকাশেও মেঘ কেটেছে। রোদ বেরিয়ে পড়েছে। সকাল থেকে কার্যত ছুটে বেড়ানো তাপস গাড়ি ছুটিয়ে বাড়িতে পৌঁছলেন। কিছু ক্ষণ পরে মধ্যাহ্নভোজ সেরে যখন বেরোলেন, আপাতগম্ভীর মুখে যেন স্বস্তির ছাপ ধরা পড়ছে।

ভোটের আগেই তৃণমূল ছেড়ে এসে উত্তর কলকাতায় সুদীপের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠা তাপসের উপরে যেমন দিনভর নজর ছিল সংবাদমাধ্যম এবং রাজনৈতিক শিবিরের, তাঁর ‘স্যর’ প্রদীপ ভট্টাচার্যের জন্য তেমন নয়! তৃতীয় পক্ষ হিসেবেই কংগ্রেসের বর্ষীয়ান প্রার্থী ঘুরে বেড়িয়েছেন উত্তর থেকে মধ্য কলকাতার নানা ওয়ার্ডে। ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ পেলে বুথে গিয়ে প্রতিবাদ করেছেন, নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছেন। প্রয়াত নেতা সোমেন মিত্রের ৪৫, আমহার্স্ট্র স্ট্রিটের পুরনো বাড়িতে খোলা কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কার্যালয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার ছুটেছেন। পড়ন্ত বিকেলে তাঁর মন্তব্য, ‘‘কিছু গোলমালের চেষ্টা হয়েছেই। সব ভোটই আসল পড়েছে, এমন নয়। তবু বহু মানুষ বেরিয়ে নিজেদের ভোট দিয়েছেন। বাকিটা বাক্স খুললে বোঝা যাবে!’’

দিনের দ্বিতীয়ার্ধে তাপসের চেহারায় আবার স্বস্তির ছাপ ধরা পড়েছে কুলিয়া ট্যাংরা সেকেন্ড লেনে পুরসভার প্রাথমিক স্কুলের বুথে। বিজেপি এজেন্ট উত্তেজিত হয়ে বলছেন, ‘‘অবাধে ছাপ্পা দিয়েছে। সিসি ক্যামেরায় সব দেখা গিয়েছে!’’ তাপস অবশ্য সংযত, নিরুত্তাপ। শান্ত ভাবে এজেন্টকে বুথে পাঠিয়ে বলেছেন, ‘‘ঠিক আছে, অভিযোগ শুনেছি। দেখছি।’’

ট্যাংরার দেবেন্দ্রচন্দ্র দে রোডের একটি বুথের সামনে পৌঁছতেই খবর এল, মধ্য কলকাতার একটি স্কুলে নাকি বহিরাগতেরা ছাপ্পা দিতে এসেছে। সঙ্গে সঙ্গে ফোন গেল ভোট পর্যবেক্ষকের কাছে। অভিযোগ, জনৈক অমিত মিশ্র নাকি হাওড়া থেকে লোকজন নিয়ে বুথে এসেছে। এ-ও জানাতে ভুললেন না যে, এই খবরের সত্যতা তৃণমূল শিবির থেকেও তাঁর কাছে এসেছে। ওই ফোন রাখার পরে আবার এক জনকে ফোন করলেন তাপস। ফোনের ও-পারে কে আছে বোঝা গেল না। শুধু বলতে শোনা গেল, ‘‘ঠিক আছে যা করেছিস, করেছিস। আর করিস না!’’ তার পরে বেলেঘাটার চাউলপট্টির একটি প্রাথমিক স্কুলের বুথে বিজেপির এজেন্টকে ওই হুমকির কাণ্ড।

রাজ্যের শাসক দল, তিন বারের সাংসদ, পোক্ত সংগঠনের বিরুদ্ধে গেরুয়া শিবিরের লড়াই সহজ নয়। তার উপরে বেলেঘাটা, এন্টালির মতো আগমার্কা এলাকা। কিন্তু এ দিন ভোট-পর্ব যেন অনেক বেশি চুপচাপ। কেউ কেউ অবশ্য তামাশা করে বলেছেন যে, এক সময় তৃণমূল বলত, ‘চুপচাপ, ফুলে ছাপ।’

ফুল তো বটেই। কিন্তু কোন ফুল?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement