শতাব্দী রায়। —ফাইল চিত্র।
পরিসংখ্যান বলছে, গত কয়েকটি লোকসভা নির্বাচনে বীরভূম জেলার দু’টি আসনেই তৃণমূল প্রতি বারই তাদের ব্যবধান বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। অথচ লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে শহর এলাকায় তারা বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে। চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষিত হয়েছে। এই নির্বাচনে কি তৃণমূল তাদের হারানো ভোট পুনরুদ্ধার করতে পারবে? না ফের শহরের মানুষ তৃণমূলের প্রতি বিমুখ হবেন— তাই নিয়েই এখন চলছে চর্চা। বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে এবারও তৃণমূলের প্রার্থী শতাব্দী রায়। তিনবারের সাংসদ শতাব্দীকে শহরের মানুষের ভোট নিয়ে মাঝেমধ্যেই দলীয় কর্মিসভায় নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে।
শনিবার শতাব্দী রায় তারাপীঠে পুজো দিয়ে প্রচার শুরু করেছেন। তিনি বলেন, “শহরে কেন হার হয় সেটা এখানকার বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসা করা দরকার। শহরে যে কাজগুলি করেছি, তাতে শহরের বাসিন্দারা উপকৃত।” শতাব্দী উদাহরণ দিয়ে রামপুরহাট ছ’ফুঁকো রেল সেতুর সংস্কারের কথা তুলে ধরেন। তিনি আরও বলেন, “২০০৯ সাল থেকে অনেক কাজ করেছি। তার ফলে শহরের মানুষ অনেক সুবিধাও পেয়েছেন। শহরের মানুষের হয় তো আলাদা মানসিকতা রয়েছে। কিন্তু তাতেও তো আমি অনেক বেশি ভোটে জয়ী হয়েছি।”
শহরবাসীর বিমুখতা নিয়ে দলীয় কর্মিসভায় বারবার প্রশ্ন তুলেছেন শতাব্দী। দুবরাজপুরে গত জানুয়ারি মাসে একটি কর্মিসভায় স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের সরাসরি প্রশ্ন ছুড়ে দেন সাংসদ। তিনি বলেন, “আপনারা বা আপনাদের লোক যে ওয়ার্ডে জেতেন সেখানে আমি হারি কী করে? তা হলে যে গুরুত্ব দিয়ে নিজেদের ভোট করেন, সেটা আমার বেলায় হয় না? আমি প্রত্যেকটি নির্বাচনে এসেছি। প্রত্যেক কাউন্সিলরের জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে আমি বৈঠক করেছি। প্রত্যেক কাউন্সিলরের কাছে আমার প্রশ্ন, যদি আপনারা জিততে পারেন, তা হলে আমার নির্বাচনে ওই ওয়ার্ডগুলি হারে কী করে?” শুধু দুবরাজপুর নয়, সিউড়ি, রামপুরহাট, সাঁইথিয়াতেও শতাব্দীকে একই ভাবে শহরের ভোট নিয়ে ক্ষোভ জানাতে দেখা গিয়েছে।
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের অধীন সিউড়ি, দুবরাজপুর, সাঁইথিয়া, রামপুরহাট, নলহাটি এই পাঁচটি পুরসভা এলাকায় একমাত্র নলহাটি ছাড়া বাকি চারটি পুরসভায় তৃণমূল বড় ব্যবধানে বিজেপির কাছে হেরেছিল। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দুবরাজপুরে জয়ী হয়েছিল বিজেপি। বাকি বিধানসভাগুলিতে তৃণমূল জয়ী হলেও রামপুরহাট, সাঁইথিয়ার শহরাঞ্চলের ভোটে মানুষ ছিলেন তৃণমূল বিমুখ।
তথ্য অনুযায়ী, গত লোকসভা নির্বাচনে রামপুরহাট বিধানসভা এলাকায় তৃণমূল ১৪ হাজারের কিছু বেশি ভোটে বিজেপির থেকে পিছিয়ে ছিল। তার মধ্যে রামপুরহাট শহরে পিছিয়ে ছিল ৯ হাজার ২৩৫ ভোটে। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে ফের সেই ভোটের ব্যবধান কমে হয় ৬ হাজার ১৬৭। সিউড়ি শহরের ক্ষেত্রে ২০১৯ সালে তৃণমূল ৫ হাজার ৬৩১ ভোটে বিজেপির থেকে পিছিয়ে ছিল। আবার বিধানসভা সেই ব্যবধান কমে গিয়ে হয় ৭৫৮। সাঁইথিয়া শহরে গত লোকসভা ভোটে সাড়ে ৯ হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। বিধানসভা ভোটে সেই ব্যবধান কমে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৯০০।
জানা গিয়েছে, শহরের ভোটে তৃণমূলের পিছিয়ে থাকা নিয়ে দলের অন্দরে চলেছে আলোচনা। দলের জেলা চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “লোকসভা ভোটে শহর এলাকায় এবারে অন্য কৌশল অবলম্বন করা হবে। পঞ্চায়েত ও পুরভোটের মতো কর্মীদের নিজের নিজের এলাকায় ভোটের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”