Lok Sabha Election 2024

মিল্টনের সঙ্গে প্রচারে না, সাত নেতাকে বহিষ্কার কংগ্রেসের

বহিষ্কৃত নেতারা পাল্টা আঙুল তুলেছেন তৃণমূলের সৈয়দ সিরাজ জিম্মির সঙ্গে মিল্টনের ‘ঘনিষ্ঠতা’ নিয়ে। বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল ও বিজেপি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:৪৩
Share:

বহিস্কৃত নেতাদের নাম লেখা কাগজ হাতে সাংবাদিক বৈঠক করছেন মিল্টন রসিদ। নিজস্ব চিত্র।

বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে জোট প্রার্থী মিল্টন রশিদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানানো এবং তাঁর হয়ে প্রচার না করার সিদ্ধান্ত জানানোর পরেই জেলার সাত নেতাকে বহিষ্কার করল কংগ্রেস। সোমবার জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা প্রার্থী মিল্টন রশিদ একটি সাংবাদিক বৈঠকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। মিল্টনের অভিযোগ, এই নেতারা বিজেপির সঙ্গে গোপন আঁতাত করেছেছে। বহিষ্কৃত নেতারা পাল্টা আঙুল তুলেছেন তৃণমূলের সৈয়দ সিরাজ জিম্মির সঙ্গে মিল্টনের ‘ঘনিষ্ঠতা’ নিয়ে। বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল ও বিজেপি।

Advertisement

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেও জেলায় কংগ্রেসের প্রার্থী নির্বাচন এবং বামেদের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছিলেন কংগ্রেসের জেলা কার্যকরী সভাপতি মৃণালকান্তি বসু, প্রাক্তন জেলা সভাপতি তথা প্রদেশ কংগ্রেসের আমন্ত্রিত কমিটির স্থায়ী সদস্য সঞ্জয় অধিকারী, প্রদেশ কমিটির সদস্য অপূর্ব চৌধুরী, সত্যব্রত ভট্টাচার্য, দেবকুমার দত্ত, জেলার সাধারণ সম্পাদক তথা প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সদস্য রথীন সেন ও সাধারণ সদস্য বিবেকানন্দ সাউ। লোকসভা নির্বাচনের আগে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধেই প্রকাশ্যে ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করলেন জেলা কংগ্রেসের ওই নেতারাই৷ তার পরে তাঁদের বহিষ্কার করা হল।

সঞ্জয়ের অভিযোগ, “প্রার্থী নির্বাচন থেকে প্রচারের কৌশল— কোনও বিষয়েই দলের নেতাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা করছেন না মিল্টন। নিজের ঘনিষ্ঠ কয়েক জনকে সঙ্গে নিয়েই নিজের খুশিতে দল চালাচ্ছেন৷ তাই আমরা জেলার প্রায় ৫০ জন নেতা একত্রে আলোচনা করে ঠিক করেছি, মিল্টনের হয়ে আমরা প্রচার করব না। আমরা কাউকে ভোট দিতেও বলব না।” একই সঙ্গে সঞ্জয়ের দাবি, “আমরা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে নই, আমরা মিল্টনের বিরুদ্ধে। রাজ্যের অন্যত্র কংগ্রেস প্রার্থীদের হয়ে আমরা প্রচার করব।”

Advertisement

তবে এই ‘বিষোদগার’কে প্রকাশ্যে আসতেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বলেন, ‘‘মিল্টন রশিদ একাই কাফি। যাঁরা সহযোগিতা করবে না বলে ধমকি দেখাচ্ছেন, কংগ্রেস তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করবে না। সে দক্ষ সংগঠক। মিল্টন রশিদের বীরভূমে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল।’’

এর পরেই মিল্টন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, “দলের সঙ্গে ওদের আর কোনও সম্পর্ক রইল না। ওঁরা যদি ভবিষ্যতে কংগ্রেসের নাম ব্যবহার করে কোনও রাজনৈতিক কাজ করে, তা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তাঁর অভিযোগ, ‘‘বিজেপি প্রার্থী দেবাশিস ধরের সঙ্গে গোপন আঁতাত রয়েছে ওই নেতাদের।” যদিও সঞ্জয় বলেন, “আমরা কংগ্রেসের একনিষ্ঠ কর্মী। দেবাশিস ধরকে আমি চিনি না। বিজেপি আমাদের দলের বিরোধী, তাই আমরাও বিজেপির বিরোধী। কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের কোনও বিরোধ নেই। কিন্তু আমাদের জেলা সভাপতি আমাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগই রাখেন না। তাই আমরা তাঁর বিরোধিতা করেছি। এর জন্য যদি দল আমাদের সাসপেন্ড করে, তা হলে আমরা সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।”

একই সঙ্গে বিদ্রোহীদের খোঁচা, “প্রাক্তন কংগ্রেস এবং অধুনা তৃণমূল সৈয়দ সিরাজ জিম্মির শিষ্য মিল্টন রশিদ। আমাদের সঙ্গে বিজেপি প্রার্থীর আঁতাতের মিথ্যা অভিযোগ না তুলে, ওঁদের গুরু-শিষ্যের মধ্যে কী বোঝাপড়া আছে, সেটা খুঁজে দেখা উচিত।”

যদিও কংগ্রেসের জোট সঙ্গী সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা আশা করি যাঁরা কেন্দ্রে বিজেপি এবং রাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চান, তাঁরা সকলেই জোটে থাকবেন। যাঁরা থাকবেন না, তাঁদের প্রকৃত উদ্দেশ্য খুঁজে দেখতে হবে।’’

তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা সম্পূর্ণ কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তবে, যাঁদের দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেসের পতাকা বয়ে বেড়াতে দেখেছি, তাঁদের সাসপেন্ড হতে দেখে খারাপ লাগছে। সিপিএমের হাতে কংগ্রেসের রক্ত লেগে আছে। তাদের সঙ্গে যৌথ কর্মসূচি করতে গিয়ে দলের পুরনো নেতাদের সরিয়ে দেওয়ার অত্যন্ত লজ্জাজনক।’’ কটাক্ষ করে বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, ‘‘কংগ্রেস নিশ্চয় আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগছে। যা অবস্থা, শেষ পর্যন্ত ওঁদের প্রার্থীই না বিজেপিতে চলে আসেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement