(বাঁ দিকে) বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে রাজু বিস্তা এবং অনীত থাপা। —ফাইল চিত্র।
জল্পনাই সত্যি হল। লোকসভা ভোটের আগে আবার বিজেপির হাত ধরল বিমল গুরুংয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। রবিবার সাংবাদিক বৈঠক করে গুরুং জানিয়ে দেন, তাঁর দল দার্জিলিঙের বিজেপি প্রার্থী রাজু বিস্তাকেই সমর্থন করবে। এ নিয়ে অবশ্য চিন্তিত নন পাহাড়ের বর্তমান শাসকদল প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার প্রধান অনীত থাপা। তিনি সমর্থন করেছেন রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের প্রার্থী গোপাল লামাকে। অনীতের কটাক্ষ, পঞ্চায়েতেও সকলে একজোট হয়েছিল। তাতে কী লাভ হয়েছে?
শনিবার বিকেলে দিল্লি থেকে ফিরে সোজা দার্জিলিঙে গিয়ে সিংমারিতে মোর্চার সদর দফতরে গুরুংয়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেনন রাজু। সেখানে দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। তখন থেকেই জল্পনা ছিল, গতবারের মতো এ বারও বিজেপিকে সমর্থনের পথে হাঁটছেন গুরুং। এর পর রবিবার মোর্চা প্রধান জানিয়ে দিলেন, মোর্চার সব ক’টি শাখা সংগঠনই বিজেপি প্রার্থীকে জেতানোর জন্য লড়াই করবে। বিমলের কথায়, ‘‘বিগত কয়েক দিন ধরেই দফায় দফায় আলোচনা চলেছে। গোর্খাদের একাধিক দাবি নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। আমাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। কাজেই আমরা সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এ বার বিজেপিকেই সমর্থন করব। রাজু বিস্তাকে সমর্থন করব। কিন্তু আগামী পাঁচ বছরে কাজ করতেই হবে।’’ শুধু দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রই নয়, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি আসনেও কিছু গোর্খা ভোট রয়েছে। মোর্চা সূত্রে খবর, সেখানেও তাঁরা বিজেপি প্রার্থীকে জেতানোর জন্য প্রচার চালাবেন।
২০০৯ সাল থেকে পর পর তিন দফায় বিজেপিকে লোকসভায় সমর্থন করেছিলেন গুরুং। কিন্তু এ বার গুরুংয়ের অবস্থান নিয়ে বিস্তর জল্পনা চলেছে। গত পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির শিবিরে ছিলেন গুরুং। কিন্তু ভোটে ‘মহাজোট’ মুখ থুবড়ে পড়তেই বেরিয়ে এসেছিলেন গুরুং। লোকসভা ভোটের আবহেও বিজেপির বিরুদ্ধে পাহাড়ে স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান ও ১১ জনজাতির স্বীকৃতির দাবি পূরণে পদক্ষেপ না করার অভিযোগ তুলেছে। শুধু তা-ই নয়, কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে বিকল্প প্রার্থী দেওয়ার কথাও ভেবেছে মোর্চা। সেই প্রার্থী বিমলও হতে পারেন বলে কানাঘুষো শোনা যায়। এ সবের মধ্যে মোর্চা প্রধানকে কংগ্রেসের প্রশংসা করতেও দেখা গিয়েছে। তাতে আরও বিভ্রান্তি ছড়ায়। শেষমেশ পুরনো পথে হেঁটে বিজেপির সঙ্গেই হাত মেলালেন গুরুং।
গত ১৫ বছরে গুরুংয়ের সমর্থনে পাহাড়ে তিন জন সাংসদ পেয়েছে বিজেপি। অনেকের মত, এ বার পরিস্থিতি তেমন নয়। ২০২১ সালের পর থেকে পাহাড়ে গুরুংয়ের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ কমতে শুরু করে। ২০১৭ সালে পাহাড় ছাড়ার পরে সাড়ে তিন বছর বাইরে ছিলেন মোর্চা প্রধান। সেই সময় তাঁর সংগঠনের বেশির ভাগই অনীতের প্রজাতান্ত্রিক মোর্চায় মিশে গিয়েছে। গত বিধানসভায় গুরুংয়ের দলের প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের জন্য অনীতেরা কার্শিয়াং এবং দার্জিলিং আসনটি হারেন। কিন্তু ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ) ভোট থেকে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। গুরুং ভোটের বিরোধিতা করায় তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। পুরসভা ভোটেও গুরুংয়ের দলের কার্যত অস্তিত্ব ছিল না। গত পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি শিবিরে থাকলেও তেমন কোনও ফলই হয়নি।
পদ্মশিবিরের অবশ্য বক্তব্য, গত তিন বছরে পাহাড়ে একদলীয় শাসন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন দল ভোট পাচ্ছে। সেখানে মোর্চা, মন ঘিসিংদের জিএনএলএফ-কে এক জোট করে লোকসভাতেও লড়াই করার পক্ষপাতী তারা। আগের মতো না হলেও গুরুংকে নিয়ে এখনও যে কিছু কিছু জায়গায় আবেগ রয়েছে, তা কেউই অস্বীকার করতে পারবেন না।
গুরুংয়ের বিজেপিকে সমর্থন নিয়ে অনীত অবশ্য ভাবিত নন। তিনি বলেন, ‘‘এর আগেও বিমল গুরুং বা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা, বিজেপি ও সব দল এক হয়ে পঞ্চায়েতে লড়াই করেছিল। কিন্তু তাতে কী লাভ হয়েছে! বেশি দিনের তো কথা নয়। কাজেই এটা কোনও বিষয়ই না।’’ দার্জিলিং জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র বেদব্রত দত্ত বলেন, ‘‘এক সময় পাহাড়কে অশান্ত করার মূল নায়ক ছিলেন এই ব্যক্তি। আজকের তারিখে উনি পাহাড়ের বুকে অপ্রাসঙ্গিক। পাহাড়ের মানুষ এখন উন্নয়ন চান। পাহাড়ের মানুষ এই ধরনের বিভেদের রাজনীতিকে সমর্থন করে না। কাজেই এই ধরনের ব্যক্তি কাকে সমর্থন করলেন, কার বিরুদ্ধে গেলেন, তাতে পাহাড়ের মানুষের কিছু আসে যায় না। এ সবই নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য।’’