প্রচারে বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র (বাঁ দিকে), জনসংযোগ সারছেন তৃণমূল প্রার্থী হাজি নুরুল (ডান দিকে)। — নিজস্ব চিত্র।
জমে উঠেছে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের লড়াই। সন্দেশখালি পর্বের পর এই আসন এখন জাতীয় আকর্ষণের কেন্দ্রে। তৃণমূল তাদের তারকা প্রার্থী নুসরত জাহানকে এই আসনে আর টিকিট দেয়নি। তাঁর জায়গায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে এই আসনের প্রাক্তন সাংসদ হাজি নুরুল ইসলামকে। অন্য দিকে, চমক দিয়ে বিজেপি এই কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে সন্দেশখালিতে মহিলাদের শাহজাহান-বিরোধী আন্দোলনের প্রথম সারির মুখ গৃহবধূ রেখা পাত্রকে। প্রবল গরম উপেক্ষা করে দু’জনেই সমানতালে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। মঙ্গলবার টাকির কালীমন্দিরে পুজো দিয়ে প্রচারে বেরোন রেখা। অন্য দিকে, তৃণমূলের হাজিকে দেখা গেল সুন্দরবনে জনসংযোগ সারতে।
মঙ্গলবার বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভার টাকি ফুলেশ্বরী কালীমন্দিরে পুজো দিয়ে ভোটপ্রচার শুরু করলেন রেখা। তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির জেলা নেতৃত্ব। রেখা পাত্র বলেন, ‘‘ঘরের মেয়ের সম্মান রক্ষা করবেন বসিরহাটের মানুষ। আমার বিশ্বাস, বসিরহাটের মানুষ আমার পাশেই থাকবেন। বসিরহাটের মানুষই আমাকে জেতাবেন। আর আমি জেতার পরে বসিরহাটের মানুষের ঘরের মেয়ে হয়ে থাকব। বসিরহাটের প্রতিটা মানুষ আমার পরিবারের মতো। তাঁদের পরিবারের সুখ-দুঃখ আমি নিজের সুখ-দুঃখের সঙ্গে ভাগ করে নেব।’’
প্রচারে খামতি রাখছেন না তৃণমূল প্রার্থীও। মঙ্গলবার সকাল সকাল হাজি নুরুল পৌঁছে যান সুন্দরবন এলাকায়। হিঙ্গলগঞ্জের সুন্দরবন লাগোয়া দুলদুলিতে ভোটের প্রচার সারেন হাজি নুরুল। তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে এলাকায় প্রচারের পাশাপাশি, বাইক র্যালিও ছিল। নুরুল বলেন, ‘‘২০০৯ সালে বসিরহাটের সাধারণ মানুষ-সহ সুন্দরবন লাগোয়া হিঙ্গলগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ আমার পাশে ছিল। আমিও ২০০৯ সালে আয়লা ঝড়ের পরে বসিরহাটের প্রত্যন্ত এলাকার আয়লায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সঙ্গে ছিলাম, পাশে ছিলাম। এ বারও বসিরহাটবাসী-সহ সুন্দরবন এলাকার মানুষ আমার পাশে থাকবেন এবং আমিও তাঁদের পাশে থাকব। জেতার ব্যাপারে আমি একশো ভাগ আশাবাদী। জিতব তো অবশ্যই শুধু ব্যবধান কতটা বৃদ্ধি করতে পারব, সেটাই দেখছি।”
গত লোকসভা ভোটে প্রবল মোদী হওয়ার মধ্যেও বসিরহাট আসন হতাশ করেনি তৃণমূলকে। সে বার নুসরত প্রায় ৫৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিজেপির প্রার্থী সায়ন্তন বসু তাঁর কাছে হেরেছিলেন সাড়ে তিন লক্ষেরও বেশি ভোটে। বিধানসভা ভোটেও কার্যত লোকসভারই পুনরাবৃত্তি করে তৃণমূল। বসিরহাট লোকসভার অন্তর্গত সন্দেশখালি, হাড়োয়া, বাদুড়িয়া, মিনাখাঁ, বসিরহাট উত্তর, বসিরহাট দক্ষিণ এবং হিঙ্গলগঞ্জ— এই সাতটি বিধানসভাতেই বিপুল ব্যবধানে জয় পান তৃণমূল প্রার্থীরা। ফলে স্রেফ রাজনীতির পাটিগণিতের হিসাবে বিজেপির লড়াই সত্যিই কঠিন। যদিও কেবল পাটিগণিতে রাজনীতির অঙ্ক সব সময় মেলে না। সন্দেশখালিতে তৃণমূল নেতা শাহজাহান-বিরোধী যে আন্দোলন হয়েছিল, বিজেপির আশা সেই আন্দোলনের রেশ ছড়িয়ে পড়বে গোটা লোকসভা এলাকা জুড়ে। আর তাতে চেপেই বসিরহাটে বাজিমাত করবেন রেখা।