অযোধ্যার রামমন্দির। —ফাইল চিত্র।
দেশের রাজনীতির অন্যতম চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে অযোধ্যার রামমন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন। সেই বিতর্ক উঠে এল এই শহরে আলোচনা-সভায়। এক পক্ষের দাবি, রামলালার ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’র সুফল লোকসভা ভোটে প্রত্যাশিত ভাবেই গেরুয়া শিবিরের পক্ষে যাবে। অন্য পক্ষের পাল্টা দাবি, সাধারণ মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সমস্যাকে আড়াল করতেই মন্দিরকে রাজনীতির কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে!
একটি ইউটিউব চ্যানেল ও একটি সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেন্টার ফর স্টাডিজ় ইন কালচারাল ডাইভারসিটি অ্যান্ড ওয়েলবিং’-এর সহায়তায় নজরুল ভবনে আয়োজন করা হয়েছিল ‘মন্দির ও ভারতীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক আলোচনা-সভা। সেখানে বিজেপি নেতা স্বপন দাশগুপ্ত পুরো বিষয়টিকে ভারতবর্ষের পরিচয়, হিন্দুর ‘শ্রেষ্ঠত্ব’ ফিরে পাওয়ার লড়াই হিসেবেও উল্লেখ করেন। রামমন্দির প্রতিষ্ঠার সুফল বিজেপি যে লোকসভা ভোটে পাবে, সে ‘বিশ্বাসের’ কারণও ব্যাখ্যা করে তাঁর দাবি, “রামমন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠা মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করেছে।”
এই জায়গা থেকেই রামকে রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের হাতিয়ার হিসেবে বোঝানোর চেষ্টা করেন আইনজীবী, কংগ্রেসের অরুণাভ ঘোষ। তাঁর কথায়, “যাঁরা বলছেন রামের কথা, তাঁরা আসলে ক্ষমতার দিকে চেয়েই রামের কথা বলছেন। রামকে ভালবেসে নয়।” অন্য আঙ্গিকে কার্যত একই বক্তব্য তৃণমূলের পুরপ্রতিনিধি অরূপ চক্রবর্তীরও। ‘অসম্পূর্ণ মন্দিরে’ রামলালার প্রতিষ্ঠা নিয়ে প্রশ্ন তুলে, নাম না করে বিজেপিকে তাঁর তোপ, “ভগবান রামকে যদি ভোটের আগে প্রতিস্থাপন না করা যায়, তা হলে ভোটের সুফলটা পাওয়া যাবে না!”
সাংবাদিক পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা তুলনা টানেন ‘নরম হিন্দুত্ব বনাম কট্টর হিন্দুত্বের’ মধ্যে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের ‘হনুমান চালিশা’ পাঠ বা মধ্যপ্রদেশে ভোটের আগে কমলনাথের মন্দির-যাত্রার মতো ‘নরম হিন্দুত্বে’র উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের মনে হয়, কট্টর ও নরম হিন্দুত্বের লড়াইয়ে কট্টর হিন্দুত্বই সব সময় জিতবে।”
এমন আবহে শুক্রবারের সভার মূল বিষয়টি অতিক্রম করে কী ভাবে শুধু রাম ও রামমন্দির সংক্রান্ত আলোচনা হচ্ছে, তা অবচেতন মনস্তত্ত্বের আলোয় ব্যাখ্যা করেন আয়োজক সংগঠনের তরফে পীযূষরঞ্জন ঘোষ।
তবে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য, “চেতন মনেই বিভিন্ন মাধ্যমে এটা প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে, মন্দির মানেই রামমন্দির। দেবতা মানেই রাম।” তাঁর ব্যাখ্যা, “আসলে যখন মন্দার অর্থনীতি হয়, তখন মন্দির রাজনীতি করতে হয়!” তাঁর সিদ্ধান্ত: “ভারতের ভবিষ্যৎ হচ্ছে মিশ্র সংস্কৃতির ভবিষ্যৎ।” সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন অময় দেবরায় ও দেবস্মিতা সরকার।