—প্রতীকী ছবি।
আবু তাহের কি পারবেন তাঁর মুর্শিদাবাদ সংসদীয় আসন পুনরুদ্ধার করতে? না কি সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম মুর্শিদাবাদে জিতে ইতিহাস গড়বেন রাজ্যের তৃণমূল ও বিজেপি বিরোধী জোট রাজনীতিতে?
ভোট গণনার দিন যতই এগিয়ে আসছে, তৃণমূল ও সিপিএম দুই শিবিরেই ততই উত্তেজনা বাড়ছে ভোটের ফল নিয়ে।
আবু তাহেরের দাবি, তিনি এ বার মুর্শিদাবাদে অন্তত দেড় লক্ষ ভোটে জিতবেন। অন্য দিকে সিপিএমের জেলা সম্পাদক জামির মোল্লার মতে, মহম্মদ সেলিমের জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা।
রাজ্যে যে ক’টি আসনে নজর রয়েছে মানুষের, তার মধ্যে বহরমপুরের পরেই রয়েছে মুর্শিদাবাদ। কারণ এই দুই আসনে অধীর চৌধুরী ও মহম্মদ সেলিমের জয় এ রাজ্যে বাম-কংগ্রেস জোট রাজনীতিকে ২০২৬ সালের আগে যথেষ্ট শক্তিশালী করবে তাই নয়, দলের কর্মীরাও সেক্ষেত্রে হতাশা কাটিয়ে ফের উঠে দাঁড়াতে পারবেন।
বিদায়ী তৃণমূল সাংসদ আবু তাহেরের দাবি, ‘‘বুথ কর্মীদের সঙ্গে পর্যালোচনা বৈঠকের পরে যে পরিসংখ্যান উঠে এসেছে তাতে খুব খারাপ ফল হলেও অন্তত দেড় লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জয় প্রায় নিশ্চিত। গত বারের চেয়ে ব্যবধান বাড়লেও অবাক হব না। কারণ লক্ষ্মীর ভান্ডার। এর ফলে এই কেন্দ্রেও মেয়েরা কাতারে কাতারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করেছেন। অন্য দিকে বিরুদ্ধে লড়াই করছে জোট। সিপিএমকে কংগ্রেস সরাসরি সমর্থন করেছে। কোথাও লড়াই হবে সেলিমের সঙ্গে, কোথাও বিজেপির সঙ্গে। প্রায় ২ হাজার বুথ রয়েছে মুর্শিদাবাদ লোকসভায়। গড়ে প্রতি বুথে ১০০ করে লিড ধরলে প্রায় ২ লক্ষ ভোটে এগিয়ে থাকার কথা।”
সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিমের সর্বক্ষণের প্রচার সঙ্গী ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা। তিনি বলেন, “আবু তাহের প্রার্থী। জেতার জন্যই তো দাঁড়িয়েছেন। তাই বলছেন। আমাদের দলের সামগ্রিক যে মূল্যায়ন তাতে মহম্মদ সেলিমের জয় নিয়ে কোনও সংশয় নেই। জোটের দুই দলের কর্মীরাই শক্তি উজার করে খেটেছেন। কোথাও দলের কোনও কর্মীর মধ্যে মহম্মদ সেলিমকে নিয়ে সামান্যতম সংশয় ছিল না। সাধারণ মানুষের মধ্যেও স্বতঃস্ফূর্ততা ছিল। তাই জয় নিয়ে কোনও অনিশ্চয়তা নেই।”
এই কেন্দ্রে বিজেপির উপস্থিতি পুরোপুরি উপেক্ষার নয়। ২০১৯ সালে বিজেপির প্রার্থী ছিলেন বর্তমান তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবির। পেয়েছিলেন ২৪৭৮০৯টি ভোট। বিজেপি প্রার্থী বিধায়ক গৌরীশঙ্কর ঘোষ বলছেন, ‘‘এগিয়ে থাকব করিমপুর, মুর্শিদাবাদে। ডোমকল ও ভগবানগোলা নিয়ে কিছুটা চিন্তা আছে। যা ভোট হয়েছে তাতে সাড়ে তিন লক্ষের বেশি ভোট পেয়ে লড়াই দেব, যা এত দিন দলের কেউ পারেনি।”
৭২ শতাংশ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদ আসনে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ১৪.৫৪ লক্ষ্য অর্থাৎ ৮৪.২৯ শতাংশ ভোট পড়েছিল। আবু তাহের পেয়েছিলেন ৬০৪৩৪৬টি ভোট। কংগ্রেস পায় ৩৭৭৯২৯টি। সিপিএমের ভোট ছিল ১৮০৭৯৩টি। বাম ও কংগ্রেসের মিলিত ভোট ৫৫৮৭২২টি। নাগরিকত্ব বিবাদ নিয়ে সংখ্যালঘু রোষ তখন ছিল চরমে। এ বারে ভোট পড়েছে ৮১.৫ শতাংশ, অর্থাৎ ১৫.৩০ লক্ষ। নাগরিকত্ব ইস্যু সে ভাবে প্রাধান্য পায়নি। বরং শাসক দলের বিরুদ্ধে ভুরি দুর্নীতির অভিযোগ। গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের কথা খোদ আবু তাহেরই স্বীকার করেছেন।তৃণমূলের প্লাস পয়েন্ট বলতে লক্ষ্মীর ভান্ডার। সেই কারণেই মহিলা ভোট পড়েছে পুরুষ ভোটের চেয়ে প্রায় ৯ শতাংশ বেশি।