তৃণমূল ছেড়ে আবার বিজেপিতে অর্জুন। —ফাইল চিত্র।
অবশেষে তাঁকে নিয়ে জল্পনার অবসান ঘটালেন ব্যারাকপুরের অর্জুন সিংহ। বৃহস্পতিবার জানালেন, তিনি বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার রাতের বিমানেই রওনা দেবেন দিল্লির উদ্দেশে। দিল্লিতে গিয়ে শুক্রবার যোগদান করবেন পদ্মশিবিরে। তার পরে ওই দিনই ফিরে আসবেন বাংলায়। নতুন করে শুরু করবেন কাজ। তবে ব্যারাকপুরে তিনি বিজেপির টিকিটে লোকসভা ভোটে লড়বেন কি না তা তাঁর দল অর্থাৎ বিজেপিই ঠিক করবে বলে জানালেন অর্জুন।
অর্জুন বৃহস্পতিবার এ-ও জানিয়েছেন যে , তিনি একা নন, তাঁর সঙ্গে বিজেপিতে যোগ দেবেন আরও এক তৃণমূল নেতা। যদিও তিনি কে, তা খোলসা না করে অর্জুন বলেন, ‘‘খুব তাড়াতাড়িই জানতে পারবেন। আমার কাছে এ ব্যাপারে নিশ্চিত খবর আছে।’’
১০ মার্চ ব্রিগেডে তৃণমূলের প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করার পরই দলের প্রতি ক্ষোভের কথা জানিয়েছিলেন অর্জুন। পরে তাঁর দফতর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি নামিয়ে নরেন্দ্র মোদীর ছবি লাগানো হয়। তার পর থেকেই একরকম নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল যে, অর্জুন বিজেপিতেই যোগ দিচ্ছেন। তবে অর্জুন প্রকাশ্যে তা বলেননি। বৃহস্পতিবার বললেন। একই সঙ্গে তৃণমূলকে কটাক্ষ করে অর্জুন বলেন, ‘‘আমি সে দিন ব্রিগেডের মঞ্চে ছিলাম। তা সত্ত্বেও আমাকে শুনতে হল আমি বিজেপির সাংসদ। তা হলেই বুঝুন দলটার এখন কী অবস্থা!’’
অর্জুনের দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে বুধবারই তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘ও তো এখনও বিজেপিরই সাংসদ।’’ বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর সেই মন্তব্যকে টেনে এনেই জবাব দিয়েছেন ব্যারাকপুরের বিদায়ী সাংসদ। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে তৃণমূলের টিকিট না পেয়েই বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন অর্জুন। ব্যারাকপুর থেকে জিতে পরে আবার তিনি তৃণমূলে ফিরে আসেন। তাই তিনি এখনও খাতায়কলমে বিজেপিরই সাংসদ। অর্জুন তৃণমূল ছাড়ার বিষয়টি স্পষ্ট করার পর মমতা সে কথাই মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। বিজেপিতে যোগদান করছেন জানানোর পর প্রাক্তন নেত্রীকে পাল্টা বিঁধেছেন অর্জুনও। তিনি বলেন, ‘‘আমি ওঁকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। উনি অনেক বড় মাপের নেত্রী। এত নথি, এত প্রমাণ থাকার পরও উনি এক জন বিজেপি সাংসদকে ওঁর দলের রাজনৈতিক সভার মঞ্চে চার ঘণ্টা বসতে দিয়েছেন। ওঁকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ’’
তবে তৃণমূলে ফেরা যে তাঁর ভুল ছিল, তা স্বীকার করেছেন অর্জুন। এক সাক্ষাৎকারে অর্জুন বলেন, ‘‘দেড় বছর আগে তৃণমূলে ফেরা ভুল হয়েছিল। তবে আর আমি তৃণমূল করছি না। এ বার বিজেপিতে থেকেই রাজনীতি করব।’’ একই সঙ্গে অর্জুন জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে বিজেপিতে যোগ দেবেন ব্যারাকপুরের হাজার হাজার মানুষ।
কবে কোথায় বিজেপিতে যোগ দেবেন, সে ব্যাপারে দল (বিজেপি) সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছিলেন অর্জুন। বৃহস্পতিবার বিশেষ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবারই দিল্লিতে বিজেপিতে যোগদান করছেন অর্জুন। রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন, তাঁর ব্যারাকপুরে টিকিট পাওয়াও সময়ের অপেক্ষা।
বৃহস্পতিবার অবশ্য অর্জুন জানিয়েছেন, যে মুহূর্তে আনুষ্ঠানিক ভাবে তিনি বিজেপিতে যোগ দেবেন, তার পরে তাঁর প্রথম কাজ হবে নৈহাটি গিয়ে সেখানকার ‘বড়মা’র মন্দিরে পুজো দেওয়া। তার পরে বজরংবলীর মন্দিরে পুজো দিয়ে নৈহাটি থেকেই তাঁর লোকসভার প্রচারের কাজ শুরু করবেন তিনি।
উল্লেখ্য, এই নৈহাটিরই বিধায়ক পার্থ ভৌমিককে ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করেছে তৃণমূল। যা নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অর্জুনের ক্ষোভের সূত্রপাত। তৃণমূল ছাড়ার সিদ্ধান্তও। সেই নৈহাটিকেই কেন তিনি তাঁর প্রচারের সূচনাস্থল হিসাবে বেছে নিচ্ছেন, তা জানতে চাওয়া হলে অর্জুন বলেন, ‘‘তার কারণ, তৃণমূলের যিনি ব্যারাকপুরের প্রার্থী, তিনি এই নৈহাটির মানুষের উপর অত্যাচার চালিয়েছেন। তিনি কী কী অত্যাচার করেছেন, তা জানাতে চাই। বড়মার মন্দিরে গিয়েও এই অত্যাচারিত মানুষজনের মুক্তির জন্য পুজো দিয়ে আসব।’’
উল্লেখ্য, ভাটপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক অর্জুন ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের মুখে বিজেপিতে যোগ দেন। সে বারও ব্যারাকপুর থেকে লোকসভা ভোটে তৃণমূলের টিকিট না পেয়েই বিজেপিতে গিয়েছিলেন অর্জুন। জিতেওছিলেন। তৃণমূলের প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদীকে বড় ব্যবধানে হারিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ২০২২ সালে আবার তিনি তৃণমূলে ফিরে আসেন। ঠিক দেড় বছরের মাথায় ফের দলবদলের ঘোষণা করলেন অর্জুন। এ বারও কারণ সেই একই। ব্যারাকপুরের লোকসভা কেন্দ্রের টিকিট তাঁকে না দিয়ে নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিককে দিয়েছে দল। তার পরেই বেসুরে বাজতে শুরু করেন ব্যারাকপুরের বিদায়ী সাংসদ।