কীর্ণাহারে পিয়া সাহার বিরুদ্ধে পোস্টার। —নিজস্ব চিত্র।
বোলপুরে কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থী পিয়া সাহার বিরুদ্ধে ক্ষোভ ক্রমেই বাড়ছে বিজেপির বোলপুর সাংগঠনিক জেলার কর্মীদের একাংশের মনে।
বোলপুরে প্রার্থী বদলের দাবি তুলে দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ই-মেল করলেন বিজেপি নেতা-কর্মীদের একাংশ। পাশাপাশি কীর্ণাহারের বিভিন্ন জায়গায় পিয়া-বিরোধী পোস্টার দেখা গিয়েছে মঙ্গলবার সকালে। পোস্টারে কোথাও লেখা রয়েছে, ‘পিয়া সাহাকে প্রার্থী মানব না, মানছি না’। আবার কোথাও বা ‘পিয়া সাহা হটাও, বিজেপি বাঁচাও’ জাতীয় স্লোগান। বোলপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডলের খাসতালুক হিসাবে পরিচিত কীর্ণাহারেই দলীয় প্রার্থীর নামে পোস্টার পড়ায় নেতৃত্বের বিড়ম্বনা আরও বেড়েছে।
প্রসঙ্গত, দলীয় প্রার্থী হিসাবে সাঁইথিয়ার বাসিন্দা পিয়া সাহার নাম ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই বোলপুর সাংগঠনিক জেলার বিজেপি কর্মীদের একটি অংশ প্রশ্ন তুলেছিলেন, বোলপুর কেন্দ্রের জন্য আরও যোগ্য, পরিচিত মুখকে কেন প্রার্থী করা হল না। গত বিধানসভা নির্বাচনে সাঁইথিয়ায় প্রার্থী হয়েছিলেন পিয়া। তখনও তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে দলের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন একাধিক নেতা। এ বারেও প্রার্থিপদ ঘোষণার পরে সমাজমাধ্যমে নাম না-করে কটাক্ষ তাঁকে করেছেন দলের ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতা অনুপম হাজরা।কয়েক দিন আগে বিজেপির বৈঠকে রাজ্য নেতার সামনেই প্রার্থী নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিজেপির একাংশ কর্মী সমর্থক।
এ বার প্রার্থী বদলের দাবি জানিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে ই-মেল করেছেন বিজেপির একাংশ কার্যকর্তা। ই-মেলে দাবি করা হয়েছে, ২০২১ সালের নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর থেকে পিয়া নিজেকে সংগঠন থেকে দূরে রেখেছিলেন। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সভা, কর্মসূচি এমনকি সম্প্রতি সন্দেশখালি ঘটনার বিরুদ্ধেও প্রতিবাদসভাতেও অনুপস্থিত থেকেছেন পিয়া। এ ছাড়াও ই-মেলে অভিযোগ করা হয়েছে, তৃণমূলের সঙ্গে পিয়া ও তাঁর স্বামীর যোগ রয়েছে। যোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে মেলে।
ক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীদের একাংশ বলছেন, “বোলপুরের মতো গুরুত্বপূর্ণ আসনে এমন প্রার্থী পেয়ে আমরা হতাশ। তাই এখনও পর্যন্ত দলের একটি বড় অংশের কর্মী সমর্থকেরা প্রচার থেকে দূরে রয়েছেন। আমরা চাই কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্ব বিষয়টি দেখে যোগ্য প্রার্থীকে দাঁড় করান।” এ বিষয়ে পিয়ার প্রতিক্রিয়া, “বিষয়টি আমার জানা নেই। কারা ই-মেল করেছেন, তা-ও জানি না। তাই এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে পারব না। তবে, দলে কারও মধ্যে কোনও ক্ষোভ নেই।” জেলা সভাপতি সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল বলেন, “বিষয়টি না জেনে মন্তব্য করতে পারব না।”
অন্য দিকে, কীর্ণাহারে পিয়া-বিরোধী পোস্টার প্রসঙ্গে সন্ন্যাসীচরণ বলেন, ‘‘আমাদের দলে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। কোনও পদাধিকারী ওই কাজ করেননি। সাধারণ কর্মীরা করে থাকতে পারেন। তবে তাতে নির্বাচনে কোনও প্রভাব পড়বে না।’’ পিয়াও বলেছেন, ‘‘আমাদের দলের কেউ ওই কাজ করবেন বলে মনে হয় না। তৃণমূলের লোকেরা করে থাকতে পারেন।’’
অনুপম হাজার অনুগামী হিসাবে পরিচিত বিজেপি নেতা বিনয় ঘোষ অবশ্য প্রার্থীর বক্তব্য নস্যাৎ করে পাল্টা দাবি করেছেন, ‘‘তৃণমূল কেন ওই পোস্টার দিতে যাবে? তারা তো পিয়া সাহার মতো দুর্বল প্রার্থীকেই প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে পেতে চাইবে! আমাদের দলের অনেকেই ওঁকে প্রার্থী হিসাবে মেনে নিতে পারছেন না। হয়তো তাঁরাই পোস্টার দিতে পারেন।’’ তৃণমূলের নানুর ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বিজেপি নিজেদের গোষ্ঠী কোন্দল ঢাকতে আমাদের দলের নামে দোষ চাপাচ্ছে।’’
বিজেপি-র জেলা নেতাদের নামে পোস্টার পড়া অবশ্য এই প্রথম নয়। এর আগেও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জনসভার আগের রাতে সাঁইথিয়া ও রামপুরহাটে দলের দুই সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা এবং সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ সহ অপসারণের দাবিতে পোস্টার পড়েছিল।