প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
বিজেপি-র ইস্তাহার যে মোদীময় তা চোখ বুলোলেই স্পষ্ট। আর তার বয়ান বিশ্লেষণ করলে মালুম হবে শুধু পিএম এবং মোদী শব্দ দু’টিই তারা যথাক্রমে ৭০ এবং ৫৭ বার লিখেছে। এর সঙ্গে নরেন্দ্র, মোদীজি শব্দগুলি ধরলে ব্যবহারের আধিক্যে তা অন্য যে কোনও শব্দকে অনায়াসে ছাপিয়ে যাচ্ছে। ১২৫ বার ব্যবহৃত ভারত শব্দটিও পিছনে।
এর পাশে কংগ্রেস বা সিপিএম গভর্নমেন্ট শব্দটিতে জোর দিচ্ছে। কংগ্রেসের ইস্তাহারে সব থেকে ব্যবহৃত তিনটি শব্দ গভর্নমেন্ট বা সরকার ( ৯৫ বার), পাবলিক বা জনতা (৭৯ বার), রাইটস বা অধিকার (৫৪ বার)। সিপিএমের ক্ষেত্রে গভর্নমেন্ট (৭৫ বার) ইন্ডিয়া (৬৪ বার) এবং পিপল বা জনগণ ( ৪২ বার)। তৃণমূলের ক্ষেত্রে আবার টিএমসি (১৪৬ বার),গভর্নমেন্ট-এর (১৩৪ বার) সঙ্গে বেঙ্গল-ও ১১৪ বার এসেছে। “ইস্তাহারের বয়ান বা টেক্সট ঘেঁটে শব্দ ধরে ধরে অবশ্যই একটি রাজনৈতিক দলের ঝোঁক বোঝা যায়। শব্দ ব্যবহারের আধিক্য বা কোনও শব্দের অনুপস্থিতিতে সেই দলের লক্ষ্যবস্তু বা টার্গেট ভোটারও বোঝা সম্ভব”, বলছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানবিদ তথা সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের সিনিয়র ফেলো নীলাঞ্জন সরকার।
চারটি দলের ইস্তাহারের শব্দ ঝেড়েবেছে বিশ্লেষণ করেছেন প্রতীচী ট্রাস্টের গবেষক সাবির আহমেদ। তিনি বলছেন, “তৃণমূলের ইস্তাহারে উইমেন, ওম্যান, গার্ল শব্দগুলি সব মিলিয়ে ৭০ বার এসেছে। ওরা কিছুটা এগিয়ে অন্য দলের থেকে।” আবার বিজেপি-র ইস্তাহারে নারীশক্তির প্রসার প্রসঙ্গে নিখরচার উজ্জ্বলা গ্যাস প্রকল্পের কথা রয়েছে। তাতে তৃণমূলের মুখপাত্র, সাংসদ সুখেন্দুশেখর চক্রবর্তীর মন্তব্য, “বিজেপি-র চোখে মেয়েদের স্থান শুধু রান্নাঘরে। ভাবনার গোড়ায় গলদ।”
ইস্তাহার বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, গ্যারান্টি, রোবাস্ট (মজবুত) শব্দগুলি বিজেপি-র পছন্দের। নেতিবাচক অর্থে টেররজিম (জঙ্গিবাদ), করাপশন (দুর্নীতি) শব্দগুলি রয়েছে। সব থেকে বেশি ১২ বার ‘করাপশন’ শব্দটি সিপিএমের ইস্তাহারে। সিপিএম মুসলিম বা মুসলিমস ৩০ বার, সংখ্যালঘু ১৪ বার, আদিবাসী ৩০ বার, কাস্ট (জাত) ৮ বার এবং কমিউনাল (সাম্প্রদায়িকতা) শব্দটি ১৮ বার লিখেছে। কংগ্রেস এসসি, এসটি, ওবিসি, মাইনরিটি মিলিয়ে ৫৮ বার লিখেছে। বিজেপির ইস্তাহারে সেখানে মাইনরিটি ২ বার, মুসলিম এক বার। তারা এসসি, এসটি, ওবিসি মিলিয়ে ৩৪ বার লিখেছে। বিজেপি-র মুখপাত্র, সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলছেন, “আমাদের চোখে সব ভারতবাসী সমান। সংখ্যালঘু তোষণে আমরা নেই।” সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শমীক লাহিড়ীর কথায়, “মোদীর বক্তৃতায় মুসলিমদের প্রতি ঘৃণার প্রকাশেই বিজেপির দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট। এই দুঃসময়ে আমরা ধর্মনিরপেক্ষতা, বহুত্ব, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা রক্ষার কথাও বার বার বলেছি।” কংগ্রেসের ইস্তাহারে নেতিবাচক অর্থে ইনইকুয়ালিটি (অসাম্য), ডিসক্রিমিনেশনের (বৈষম্য) মতো শব্দগুলিও কিছুটা বেশি বার এসেছে। পরিবেশ, জলবায়ু, জঙ্গলও মোট ৩১ বার বলা হয়েছে কংগ্রেসের ইস্তাহারে। কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ বলেন, “দেশে রুটি, রুজির সঙ্কট থেকে বৈষম্য, অসাম্য আমরা দূর করার রাস্তা খুঁজেছি। দুর্ভাগ্যের, প্রধানমন্ত্রী এ কথাগুলি বিকৃত করেই সংখ্যালঘুদের নিশানা করেছেন।”