রবিবার তমলুকের গনপতিনগরে, মুখ্যমন্ত্রীর সভার শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি..। ছবি : পার্থপ্রতিম দাস।
লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে আজ, সোমবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সফরে আসছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তমলুকের নিমতৌড়িতে জেলা প্রশাসনিক অফিস চত্বরে প্রশাসনিক সভা মঞ্চ থেকে জেলার একগুচ্ছ উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করার কথা মুখ্যমন্ত্রীর।
এ দিকে, রবিবার সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সফরের ঠিক আগে ইটাবেড়িয়া থেকে ১২টি তাজা বোমা এবং ১৫ কেজি বোমা তৈরির মশলা উদ্ধার করেছে ভূপতিনগর থানার পুলিশ। ফলে মুখ্যমন্ত্রীর সভার নিরাপত্তা আরও কড়া করা হয়েছে।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বেলা ১২ টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী হেলিকপ্টারে সভাস্থলের কাছে জেলা পুলিশ লাইন ময়দানের কাছে হেলিপ্যাডে পৌঁছোবেন। সভাস্থলে কড়া পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সভায় জেলার দুই মন্ত্রী অখিল গিরি ও বিপ্লব রায়চৌধুরী-সহ তৃণমূলের বিধায়ক ও জেলাপরিষদের সভাধিপতি-সহ কর্মাধ্যক্ষদের উপস্থিত থাকার কথা। লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলায় এসে সভা মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী জেলার জন্য নতুন কোনও প্রকল্প ঘোষণা করেন কিনা, সেই নিয়ে যেমন কৌতূহল রয়েছে, একই ভাবে ওই সভা মঞ্চ থেকেই রাজনৈতিক কোনও বার্তা দেন কি,না সেই দিকেও রাজনৈতিক মহলের দৃষ্টি থাকবে।
শনিবারই শুভেন্দুর ভাই সৌমেন্দু অধিকারীকে কাঁথি লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। শুভেন্দুর বাবা শিশির অধিকারীও এ দিন জানিয়েছেন, যে দিন শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন সে দিনই তাঁর গোটা পরিবার বিজেপিতে চলে গিয়েছে। তবে তিনি এবং তাঁর ছেলে দিব্যেন্দু অধিকারী যেহেতু এখনও খাতায় কলমে তৃণমূলের সাংসদ, তাই শিশির অধিকারীর মন্তব্য এবং সৌমেন্দুর প্রার্থী হওয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর তমলুকের সভা থেকে কোনও বার্তা দেন কিনা, সেই দিকে শাসক ও বিরোধী শিবির—উভয়েরই নজর থাকছে। তমলুকে বিজেপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে কিছু ‘হেভিওয়েট’ নাম বাতাসে ভাসছে। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতায় সেই বিষয়টিও উঠে আসে কিনা, সে বিষয়েও অনেকে নজর রাখছেন।
প্রশাসনিক ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ২০২৩ সালের অগস্ট মাসে জেলায় প্রশাসনিক সভা করতে দিঘায় এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রাত সাত মাস পরে জেলা সফরে এসে প্রশাসনিক সভা মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী জেলার বিভিন্ন স্থানে সম্পূর্ণ হওয়া প্রায় ৩৪৬ টি প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এ ছাড়াও প্রায় ১৪৭ টি নতুন উন্নয়ন প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন তিনি। শিলান্যাসের তালিকায় বড় প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে তমলুক শহরে রূপনারায়ণ থেকে উত্তোলিত জল পরিশ্রুত করে সরবরাহ করা। প্রায় ১০৭ কোটি টাকার ওই পানীয় জল প্রকল্পে কাজের জন্য ইতিমধ্যে দরপত্র প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ ছাড়া তমলুক শহরে স্টিমারঘাট এলাকায় বুদ্ধ পার্ক সহ রূপনারায়ণ তীর সৌন্দর্যায়নের প্রায় ২ কোটি টাকার প্রকল্প এবং দু’টি সুস্বাস্থ্যকেন্দ্রের কাজের শিলান্যাস হবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা সফর ঘিরে প্রশাসনিক তৎপরতার পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে শাসকদল তৃণমূলও তৎপর হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে তৃণমূলের তরফে কোলাঘাট থেকে তমলুকের নিমতৌড়ি পর্যন্ত হলদিয়া-মেচেদা জাতীয় সড়কে ও হলদিয়া-মেচেদা সড়কের বিভিন্ন জায়গায় তোরণ বসানো হয়েছে এবং ব্যানার লাগানো হয়েছে। দলীয় সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর সভায় লোকজন জমায়েতের জন্য প্রশাসনিক ভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি দলীয় ভাবে লোকজন আনার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে । তমলুক ব্লক তৃণমূলের তরফে সভায় লোকজন আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে।তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ’’মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যাকে স্বাগত জানানোর জন্য আমরা দলীয়ভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি।’’