PM Narendra Modi

রেশনের ব্যাগে নরেন্দ্র মোদীর ছবি, ব্যাগ কিনতে সরকারের খরচ প্রায় ১৫ কোটি টাকা!

তথ্যের অধিকার আইনে করা প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়েছে, এফসিআই-এর রাজস্থান আঞ্চলিক দফতর ১ কোটি ৭ লক্ষ ব্যাগের বরাত দিয়েছে। এর প্রতিটিতে ১০ কেজি করে খাদ্যশস্য রাখা যাবে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২৪ ০৮:০৩
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। — ফাইল চিত্র।

গরিব মানুষের হাতে বিনা পয়সায় খাবার তুলে দেওয়ার জন্য রেশনের ব্যাগে ছাপা হচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর ছবি। আর সেই ব্যাগ কিনতে সরকারি কোষাগার থেকে খরচের বহর প্রায় ১৫ কোটি টাকা। তথ্যের অধিকার আইনে করা এক প্রশ্নের জবাবে বিষয়টি সামনে আসতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক। মোদীকে নিশানা করে কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেছেন, ‘‘উনি কোনও সুযোগই হাতছাড়া করেন না। মোদীর ছবি ছাপা ব্যাগ কেনার জন্য ফুড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (এফসিআই) ১৫ কোটি টাকা খরচ করছে, এটা একটা কলঙ্কিত অধ্যায়।’’

Advertisement

লোকসভা ভোটের মুখে মোদীর ছবি ছাপা ওই ব্যাগে গরিব মানুষকে রেশন সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনায় দেওয়া সামগ্রী সরবরাহের জন্য বেসরকারি সংস্থার থেকে এই ব্যাগ কেনার বিষয়টি জানিয়েছে এফসিআই-এর পাঁচটি রাজ্যের আঞ্চলিক দফতর। বিষয়টি নিয়ে সরকারের কাছে প্রশ্ন করেছিলেন তথ্যের অধিকার কর্মী অজয় বসু।

জবাবে সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, এফসিআই-এর রাজস্থান, সিকিম, মিজ়োরাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের আঞ্চলিক দফতর খাদ্যশস্য বিতরণের জন্য মোদীর মুখের ছাপ সম্বলিত ব্যাগ কেনার দরপত্র চূড়ান্ত করেছে। প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনার আওতায় সরকার সুবিধাভোগীর কাছে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য পৌঁছে দিয়ে থাকে। ২০২০-২১ ও ২০২১-২২-এ প্রতিবছর প্রায় ৭৫ কোটি সুবিধাভোগীর কাছে পৌঁছনো গিয়েছে বলেও দাবি মোদী সরকারের।

Advertisement

তথ্যের অধিকার আইনে করা প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়েছে, এফসিআই-এর রাজস্থান আঞ্চলিক দফতর ১ কোটি ৭ লক্ষ ব্যাগের বরাত দিয়েছে। এর প্রতিটিতে ১০ কেজি করে খাদ্যশস্য রাখা যাবে। প্রতিটি ব্যাগের জন্য খরচ ১২ টাকা ৩৭ পয়সা। ফলে সবমিলিয়ে সরকারি কোষাগার থেকে খরচের অঙ্ক ১৩ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা। একই ভাবে মেঘালয়ের এফসিআই আঞ্চলিক দফতর সাড়ে ১২ টাকা দরে ৪ লক্ষ ২২ হাজার ব্যাগ কিনছে। তাদের খরচ ৫২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। মিজ়োরাম ও ত্রিপুরায় দরপত্রে নির্বাচিত হয়েছে একই সংস্থা। তাদের থেকে ওই ব্যাগ কেনা হচ্ছে আগের রাজ্যগুলির তুলনায় কিছুটা বেশি দামে। তারা প্রতিটি ব্যাগ দিচ্ছে ১৪ টাকা ৩০ পয়সায়। এফসিআই শিলং জানিয়েছে, তারা পৌনে দু লক্ষ মোদী-ব্যাগ কিনছে ২৫ লক্ষ টাকা দিয়ে। আর ত্রিপুরার ৫ লক্ষ ৯৮ হাজার ব্যাগের জন্য খরচ ৮৫ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা।

সিকিমের এফসিআই দফতর জানিয়েছে, রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনার ব্যাগ সরবরাহের জন্য একটি সংস্থাকে ঠিক করা হলেও এখনও পর্যন্ত মোদীর মুখ ছাপানো ব্যাগ কেনা হয়ে ওঠেনি। সেখানে ১৪ টাকা ৬৫ পয়সা দরে ৯৮ হাজার ব্যাগ কেনার পরিকল্পনা রয়েছে। খরচ হবে ১৪ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা। তথ্যের অধিকার আইনে করা প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে ব্যাগ সরবরাহের সংস্থা খোঁজার পর্ব চলছে।

কেন্দ্রীয় সরকারের খাদ্য এবং সরবরাহ মন্ত্রকের এক জন আধিকারিক জানিয়েছেন, অতিমারির শুরুর সময়ে, ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনায় খাদ্যশস্য সরবরাহের কাজ শুরু হয়েছিল। তবে সে সময় ৫০ কেজির চটের বস্তা ব্যবহার করা হতো কারও ছবি ছাড়াই। রাজনীতিকের ছবি ছাপা ব্যাগ গরিব মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা অবশ্য ২০২৪-এর ভোটের আগে শুরু হয়েছে।

স্বাভাবিক ভাবেই বিষয়টি নিয়ে উত্তপ্ত হয়েছে রাজনীতির অঙ্গন। কংগ্রেস নেতা ও প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বিষয়টি নিয়ে এক্স হ্যান্ডলে সরব হয়েছেন। চিদম্বরমের প্রশ্ন, ভোটের মুখে এই ধরনের কাজ কি আচরণবিধি ভঙ্গের নিদর্শন নয়? কংগ্রেস নেতার কথায়, ‘‘ভোট যদি দোরগোড়ায় না-ও থাকতো, তাহলেও এটা কি শাসক দলের রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য জনগণের টাকা অপচয়ের নমুনা নয়?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement