(বাঁ দিক থেকে) কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এবং কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। — ফাইল চিত্র।
ভোটের কেরলে ‘ইন্ডিয়া’র দুই শরিক সিপিএম এবং কংগ্রেসের তরজা ক্রমশই তুঙ্গে উঠেছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ বার সেই সংঘাতে শামিল হলেন দু’দলের শীর্ষ স্তরের নেতারাও।
শুক্রবার ভোটের প্রচারে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য পিনারাই বিজয়নকে নিশানা করেন রাহুল। তিনি বলেন, ‘‘বিরোধী দলগুলির নেতা-নেত্রীরা অহরহ কেন্দ্রীয় এজেন্সির নিশানা হচ্ছেন। কিন্তু একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে সিবিআই, ইডির মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সি গ্রেফতার, এমনকি জিজ্ঞাসাবাদও করছে না?’’
কোঝিকোড়ে সিপিএমের সমাবেশ থেকে রাহুলের ওই মন্তব্যের ‘জবাব’ দেন বিজয়ন। সেই সঙ্গে নাম না-করে অতীতে রাহুলের নামের সঙ্গে ‘পাপ্পু’, ‘আমূল বেবি’র মতো শব্দ জুড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গও তোলেন তিনি। বিজয়ন বলেন, ‘‘রাহুল গান্ধী, আপনার পুরনো নাম আছে। এখনও সেই ভাবমূর্তি থেকে আপনি সরে আসতে পারেননি। এমন পরিস্থিতি থাকা উচিত নয়।’’ রাহুলের ঠাকুমা ইন্দিরা গান্ধী দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে বাম নেতাদের দেড় বছর কারাবন্দি করেছিলেন বলেও মন্তব্য করেন বিজয়ন।
প্রসঙ্গত, মোদী জমানার গোড়া থেকেই বিজেপি ‘পাপ্পু’ বলে নিশানা করেছে রাহুলকে। অতীতে কেরলের সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভিএস অচ্যুতানন্দন রাহুলকে ‘আমূল বেবি’ বলেছিলেন। সম্প্রতি অসমের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাও রাহুল এবং প্রিয়ঙ্কাকে ‘আমূল বেবি’ বলে নিশানা করেছেন। কোঝিকোড়ের সভায় শব্দ উচ্চারণ না করে রাহুল সম্পর্কে অচ্যুতানন্দনের মন্তব্যের উল্লেখ করেন বিজয়ন।
বরাবরের মতোই এ বার লোকসভা ভোটেও কেরলে মূল লড়াই সিপিএম নেতৃত্বাধীন জোট এলডিএফ এবং কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফের মধ্যে। ভোটের লড়াইয়ে উত্তেজনার পারদ চড়ছে দু’তরফেই। সম্প্রতি বিজয়ন বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রাহুল গান্ধীর দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাঁর দাবি ছিল, রাহুল সত্যিই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইকে গুরুত্ব দিলে হিন্দিবলয়ের কোনও আসনে বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটের ময়দানে নামতেন। কেরলের ওয়েনাড়ে বামেদের বিরুদ্ধে লড়াই করতেন না। বিজয়নের মন্তব্য সম্পর্কে কেরলের কংগ্রেস নেতা রমেশ চেন্নিথলা শনিবার বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীকে খুশি করার জন্য বিজয়ন আমাদের নেতাদের খুব নিম্নরুচির ব্যক্তিগত আক্রমণ করে চলেছেন।’’
কেরলের কংগ্রেস নেতা তথা বিধানসভার বিরোধী দলনেতা ভিডি সতীশন বলেছিলেন, ‘‘বিজয়নের উদ্দেশ্য বিজেপিকে সাহায্য করা। তাই গত এক মাস ধরে ধারাবাহিক ভাবে কংগ্রেস এবং রাহুলকে আক্রমণ করে চলেছেন।’’ তাঁর সরকারের নানা দুর্নীতি ও অপকর্মগুলি আড়াল করাও বিজয়নের অন্যতম উদ্দেশ্য বলে অভিযোগ করেন সতীশন। কূটনৈতিক যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে আরব থেকে বেআইনি ভাবে সোনা আমদানি, কারুভান্নুর সমবায় ব্যাঙ্ক দুর্নীতি-সহ বিভিন্ন আর্থিক কেলেঙ্কারিতে বিজয়ন সরকার জড়িত বলেও অভিযোগ করে সতীশন বলেছিলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্ত এড়াতেই বিজয়ন বিজেপিকে সুবিধা করে দিতে চাইছেন। তাই ধারাবাহিক ভাবে নিশানা করছেন কংগ্রেস এবং রাহুলকে।’’