দুর্গাপুরে ভিড়িঙ্গি কালীমন্দিরে বিধায়ক অগ্নিমিত্রা। —নিজস্ব চিত্র।
জেলা নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বিজেপি-বিরোধী আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার কলকাতার রেড রোডে তৃণমূলের ধর্নামঞ্চের পিছনে ওই বৈঠকে দলের পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানের দলীয় নেতাদের তিনি স্পষ্ট বুঝিয়েছিলেন, বিজেপিকে নিশানা করার প্রশ্নে কোনও শিথিলতা বরদাস্ত করা হবে না। সেই নির্দেশ আসার এক দিনের মধ্যেই আসানসোলে পথে নামলেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।
তৃণমূল সূত্রের খবর, শুক্রবারের বৈঠকে দলনেত্রী জানিয়ে দেন, লোকসভা ভোটে আসানসোল কেন্দ্রে ফের প্রার্থী করা হবে শত্রুঘ্ন সিন্হাকে। শনিবার আসানসোলে ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দেয় তৃণমূল। আসানসোলের বিভিন্ন এলাকায় পথসভা করে তৃণমূল। তাদের প্রার্থীকে জেতানোর আহ্বান জানানো হয় সভা থেকে। শত্রুঘ্ন সিন্হাকে প্রার্থী করা প্রসঙ্গে আসানসোল উত্তরের বিধায়ক তথা শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটককে বলেন, ‘‘আমরা খুবই খুশি যে দলের নেত্রী শত্রুঘ্ন সিন্হার নাম চূড়ান্ত করেছেন। সকলে মিলে তাঁকে জেতাব।’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘উপনির্বাচনে তিন লক্ষের বেশি ভোটে দল জিতেছিল। এ বার ব্যবধান তার চেয়েও বেশি হবে।’’
তৃণমূলের একাধিক নেতার দাবি, জেলা নেতাদের একাংশ বিজেপিকে চড়া সুরে আক্রমণ করেন না বলে শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নালিশ করেন দুর্গাপুর পশ্চিমের প্রাক্তন বিধায়ক বিশ্বনাথ পাড়িয়াল। তাঁর নিশানায় ছিলেন মূলত আসানসোল শিল্পাঞ্চলের নেতাদের একাংশ। শুনে ‘উষ্মাপ্রকাশ’ করেন মুখ্যমন্ত্রী। সভা-সমাবেশে মলয়ের বক্তৃতার ভিডিয়ো তাঁকে পাঠানোর নির্দেশও দেন দলনেত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশ, বিজেপি-বিরোধিতায় ‘আগ্রাসী’ হতে হবে। একশো দিনের কাজ প্রকল্পের টাকা আদায়ে আন্দোলন তীব্র করা এবং বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে আরও আক্রমণাত্মক হওয়ার নির্দেশ দেন দলনেত্রী। সেই নির্দেশ আসার এক দিনের মধ্যে বিজেপি-বিরোধিতায় দলের আসানসোলের নেতাদের শরীরী ভাষা বদলে গিয়েছে, দাবি তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের।
উপনির্বাচনে জিতে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্র দখল করেছিল তৃণমূল। ওই ভোটে বিজেপি প্রার্থী করেছিল আসানসোল দক্ষিণের দলীয় বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালকে। কিন্তু তাঁকে ধরাশায়ী হতে হয়। লোকসভা ভোটের দিন ঘোষণার আগেই দলের অভ্যন্তরে আসানসোলের প্রার্থীর নাম জানিয়ে দেওয়াকে মুখ্যমন্ত্রীর মোক্ষম চাল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ভোট-যুদ্ধ শুরুর যা আসানসোলে তৃণমূলকে বিজেপির থেকে অনেকটা এগিয়ে দিল বলে মত রাজনীতির ওঠাপড়ার নিয়মিত পর্যবেক্ষকদের একাংশের।
আসানসোল কেন্দ্রের ফলাফল নিয়ে মলয়ের ভবিষ্যদ্বাণীকে কটাক্ষ করে অগ্নিমিত্রা বলেন, ‘‘তৃণমূলের সেই ইচ্ছা এ বার পূরণ হবে না। দেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি মানুষের সমর্থন যে অটুট, এই লোকসভা কেন্দ্রেও তার প্রতিফলন দেখা যাবে।’’ তাঁর অভিযোগ, উপনির্বাচনে ভোটই হয়নি। ‘তৃণমূল-আশ্রিত গুন্ডারা’ ভোটারদের বুথ পর্যন্ত যেতে দেয়নি। শত্রুঘ্ন সিন্হাকে প্রার্থী করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘কথা দিচ্ছি, আসানসোল থেকে আমাদের যিনি দাঁড়াবেন, তিনি তিন লক্ষ ভোটে জিতবেন। কারণ, তৃণমূল দুষ্কৃতীদের ছাড়া চলে না। শত্রুঘ্ন সিন্হাকে আসানসোলে গত দেড় বছরে দেখা যায়নি। সংসদে আসানসোল নিয়ে তিনি কিছু বলেছেন? উনি নিরুদ্দেশ। ভবানী ভবনকে (রাজ্য পুলিশের সদর দফতর) খোঁজ নিতে বলুন।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর পাল্টা খোঁচা, ‘‘বিজেপি বুঝে গিয়েছে, তাদের পায়ের তলায় মাটি নেই। তাই ফাঁকা আওয়াজ দিচ্ছেন নেতারা। তৃণমূলনেত্রী ফাঁকা বুলি আওড়াননি।”