সোমবার আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী হুগলির কামারপুকুর রামকৃষ্ণ মঠে পুজো দিলেন মিতালি বাগ। নিজস্ব চিত্র।
নতুন প্রার্থী। প্রার্থিপদ ঘোষণার এক দিন পরে, সোমবার বিকেল পর্যন্ত খানকতক দেওয়াল লিখন ছাড়া আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থী মিতালি বাগের প্রচার সে ভাবে শুরু হয়নি। বরং, গোঘাটের ‘ভূমিকন্যা’কে প্রার্থী করা নিয়ে দলের অন্দরে কাটা-ছেঁড়া অব্যাহত। প্রকাশ্যে তাঁর বিরুদ্ধে মন্তব্য করতেও শোনা যাচ্ছে দলের ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতাদের একাংশকে। সোমবার সকালে কামারপুকুর রামকৃষ্ণ মঠে পুজো দিতে যাওয়ার সময় মিতালির সঙ্গে মেরেকেটে দলের জনা ২০ অঞ্চলের নেতা-কর্মী ছিলেন।
মিতালি জেলা পরিষদের সদস্য। তাঁর দাবি, ‘‘জেলা পরিষদ যাওয়ার পথে আচমকা মঠে পুজো দিতে যাই। তাই ভিড় ছিল না।’’ একইসঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘ঘরের প্রার্থী পেয়ে দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ উচ্ছ্বসিত। দলের মান-অভিমান করা নেতা-কর্মীদের প্রত্যেককে ফোন করেছি। সবাই আশীর্বাদ করেছেন। পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন।’’ তাঁকে নিয়ে উচ্ছ্বাস অবশ্য চোখে পড়েনি।
আজ, মঙ্গলবার দলের আরামবাগ সাংগঠনিক জেলার বৈঠকের পরেই পুরোদমে প্রচার শুরু হবে জানিয়ে মিতালি বলেন, ‘‘ভোটে আমি কার কাছে কেমন, সেটা বিষয় নয়। এখানে জোড়াফুল ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করতে দল ঝাঁপাবে এবং মানুষ ভোট দেবেন।’’
প্রার্থী হওয়ার পরে মিতালি দলের যে সব নেতাদের ফোন করেছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আতাউল হক, কার্তিক সাঁতরা, মকবুল হোসেন, সাহাবুদ্দিন খান, অণিমা কাটারি প্রমুখ। তাঁরা এলাকায় ‘ভোট করানোর কারিগর’ বলে পরিচিত। পঞ্চায়েত ভোটে টিকিট না পেয়ে তাঁরা ‘ক্ষুব্ধ’ হয়ে নিজেদের নিষ্ক্রিয় রেখেছেন। বর্ষীয়ান নেতা আতাউল বলেন, ‘‘প্রার্থীকে আশীর্বাদ করেছি। কিন্তু ভোটে নামব না বলে দিয়েছি।’’
মিতালি ‘রাজনৈতিক গুরু’ বলে যাঁকে মানেন, হাজিপুরের সেই নেতা, প্রৌঢ় কার্তিক বলেন, ‘‘গুরু সম্বোধন করে মিতালি ফোন করেছিলেন। আশীর্বাদ করি। মিতালি চান, শুধু আশীর্বাদ করলেই হবে না, কোমর বেঁধে নামতে হবে। আমি নামব না, জানিয়ে দিয়েছি।’’ কার্তিকের মন্তব্য, ‘‘স্পষ্টই বলছি, যোগ্য প্রার্থী হয়নি। দলের প্রতীকই ভরসা।’’ একই বক্তব্য মকবুল, অণিমা, সাহাবুদ্দিনদেরও।
ওই নেতানেত্রীদের মতে, আরামবাগের মতো ‘হাই ভোল্টেজ’ আসন, যেখানে নরেন্দ্র মোদী রাজ্যের প্রচার শুরু করছেন, যেখানে বিজেপির বাড়বাড়ন্ত, সেখানে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করার মতো এক জন প্রার্থীর আশা ছিল, যাঁর রাজনৈতিক চৌহদ্দির বাইরেও নিজস্ব ইমেজ থাকবে।
এ নিয়ে আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি রামেন্দু সিংহরায় অবশ্য বলেন, ‘‘কোথাও কোনও সমস্যা নেই। বরং স্থানীয়প্রার্থী হওয়ায় সুবিধা হয়েছে।মানুষ প্রার্থীকে সবসময় কাছে পাবেন।’’ তিনি জানান, প্রচারের কৌশল নিয়ে মঙ্গলবার জেলার বৈঠক আছে। সেখানে প্রার্থী এবং অঞ্চল, ব্লক, জেলা স্তরের কর্মীদের ডাকা হয়েছে। কর্মীদের সঙ্গে প্রার্থীরপরিচয় এবং প্রচারের রূপরেখা তৈরির পরে প্রথমে প্রতি ব্লকে কর্মী ও নেতৃত্বদের সঙ্গে একটি করেবৈঠক হবে। তার পরে পুরোদমে জনসংযোগ চলবে।