মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
উদ্বেগ রয়েছে। তাই জেলা সফরে মুখ্যমন্ত্রী রানাঘাট লোকসভা নিয়ে বার্তা দিয়েছেন দলের কাছে। মানুষের কাছে তৃণমূলকে সমর্থন করার অনুরোধ করেছেন। রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্র নিয়ে তৃণমূলের মধ্যে উদ্বেগের ছবি ধরা পড়েছে আগেও। তাই মুখ্যমন্ত্রীর বার্তার পর রানাঘাট লোকসভায় নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার পথে কোমর বাঁধছেন দলের নেতা-কর্মীরা।
গত কয়েক বছর ধরেই রানাঘাট লোকসভা তৃণমূলের কাছে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটে বিজেপির কাছে ক্রমশ পিছিয়ে পড়েছে তারা। ধাক্কা এসেছে মতুয়া অধ্যুষিত এলাকা থেকেও। অথচ এক সময় এই সমস্ত এলাকা তৃণমূলের গড় হিসেবে পরিচিত ছিল। পরবর্তী কালে উপনির্বাচনে অবশ্য তারা ছিনিয়ে নেয় শান্তিপুর বিধানসভা। পুরভোটেও বিজেপিকে সেভাবে দাঁত ফোটাতে দেয়নি তারা। তবে এর মধ্যে তাহেরপুর হাতছাড়া হয় তাদের। দখল নেয় সিপিএম। এরপর ষদিও পঞ্চায়েত ভোট দাপট দেখিয়েছে তৃণমূল। তবে দক্ষিণ থেকে পাঁচটি জেলা পরিষদ আসন ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি। শান্তিপুর পঞ্চায়েত সমিতিও তাদের দখলে। কয়েক জায়গায় পঞ্চায়েত স্তরে পদ্মের উত্থানই এখন কাঁটা তৃণমূলের কাছে।
দক্ষিণ নদিয়া বিশেষত রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির দ্রুত উত্থান জেলা ও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বকে চিন্তায় ফেলেছে বারবার। পাশাপাশি দলের মধ্যে গোষ্ঠীকোন্দল বার বার প্রকাশ্যে এসেছে। এই সব কিছুকে সামলে রানাঘাট লোকসভা নিজেদের দখলে আনাটাই এবার তৃণমূলের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। তিন কয়েক আগে শান্তিপুরে দলনেত্রীর বার্তাতেও তা চাপা থাকেনি।
লোকসভা ভোটের আগে থেকেই নিজেদের সাংগঠনিক রদবদলের পাশাপাশি সংগঠনিক বেশি কিছু কর্মসূচিও হাতে নিয়েছে তৃণমূল। পাড়া বৈঠক থেকে শুরু করে ‘গ্রামে চলো’ অভিযান শুরু করেছে তারা। লক্ষ্য একটাই নিবিড় জনসংযোগের পাশাপাশি দলের সংগঠনিক ঘাটতি মিটিয়ে ফেলা।
মুখ্যমন্ত্রীর বার্তার পর রানাঘাট লোকসভার মধ্যে দলের সংগঠন বাড়তি অক্সিজেন পাবে বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
রানাঘাট সংগঠনিক জেলা সভাপতি দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী নিজে দাঁড়িয়ে থেকে রানাঘাট লোকসভায় জয়ের জন্য বার্তা দিয়ে গিয়েছেন। এটাই আমাদের কাছে সব থেকে বড় বার্তা। রানাঘাটের মানুষ এবার আমাদের পাশেই থাকবেন।"
উপনির্বাচনে যে শান্তিপুর বিধানসভা তৃণমূল ছিনিয়ে নিয়েছিল সেই শান্তিপুরের বিধায়ক ব্রজকিশোর গোস্বামী বলেন, "আমাদের কর্মীরা সকলে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। বিজেপি যে মানুষকে ভুল বুঝিয়েছিল তা মানুষ বুঝেছেন। উপ নির্বাচনের পর পঞ্চায়েত, পুরভোট সব নির্বাচনে মানুষ মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে বিজেপির থেকে। লোকসভা ভোটেও এর ব্যতিক্রম হবে না।"
যদিও তৃণমূলের দাবিকে নস্যাৎ করেছে বিজেপি। দলের নদিয়া দক্ষিণ সংগঠনিক জেলা সভাপতি পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায় বলেন, "ওদের পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছে। মানুষও মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। সে সব বুঝতে পেরেই এখন মুখ্যমন্ত্রীকে এনে মানুষের কাছে অনুরোধ করতে হচ্ছে ভোটের জন্য। তাও প্রশাসনিক সভা থেকে।’’