শাহজাহান শেখের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ সন্দেশখালিতে। —ফাইল চিত্র।
স্টিং অপারেশনের ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসতেই উল্টোস্রোত সন্দেশখালিতে! যে শাহজাহান শেখের গ্রেফতারির দাবিতে পথে নেমে বিক্ষোভ দেখেছে সন্দেশখালি, এ বার সেখানেই তাঁর মুক্তির দাবি উঠল। সেই দাবিতে পথে নেমে বিক্ষোভ দেখালেন মহিলাদেরই একাংশ। তাঁদের নিশানায় বিরোধী অধিকারীও।
শনিবার সকালে প্রকাশ্যে আসা সন্দেশখালির ৩২ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিয়ো নিয়ে তোলপাড় হয় রাজ্য-রাজনীতি। ভিডিয়োটির সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি। গোপন ক্যামেরায় তোলায় সেই ভিডিয়োয় এক বিজেপি নেতা দাবি করেছেন, গত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে সন্দেশখালিতে ওঠা ধর্ষণের অভিযোগগুলি ‘সাজানো’ ছিল! মহিলারা টাকার বিনিময়ে শাহজাহান ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের ‘মিথ্যা’ অভিযোগ করেছিলেন বলে দাবি করেছেন ওই পদ্মনেতা। তার পরেই রবিবার শাহজাহানের মুক্তির দাবিতে সরবেড়িয়ার আকুঞ্জিপাড়ায় গ্রামের মহিলাদের একাংশ একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ দেখান। বেবি মির নামে এক মহিলা বলেন, ‘‘মিথ্যা কোনও দিন চাপা থাকে না। সব বেরিয়ে পড়েছে। অবিলম্বে শাহজাহান শেখকে মুক্তি দিতে হবে।’’ বিক্ষোভকারীদের দাবি, তাঁরা প্রথম থেকেই বলে আসছেন, শাহজাহান নির্দোষ। তাঁকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হচ্ছে। ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে রয়েছেন শুভেন্দু। রহিমুন মোল্লা নামে এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারীর অবিলম্বে শাস্তি চাই।’’
স্টিং ভিডিয়োতে সন্দেশখালি-২ ব্লকের বিজেপির মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়ালকে দেখা গিয়েছে। ভিডিয়োয় গঙ্গাধর জানাচ্ছেন, সন্দেশখালিতে মহিলাদের ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। মেয়েদের দিয়ে সাজিয়ে অভিযোগ করানো হয়েছে। গঙ্গাধরকে ওই ভিডিয়োতে এক মহিলার নাম করে বলতে শোনা যায়, তাঁকে আদালতে গোপন জবানবন্দি দিয়ে সাত-আট মাস আগে গণধর্ষণ হয়েছে বলে অভিযোগ করতে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তিনি তা-ই করেছিলেন। শুভেন্দুর আপ্ত-সহায়কের (পীযূষ) নাম উল্লেখ করে গঙ্গাধরকে ওই ভিডিয়োতে বলতে শোনা যায়, “পীযূষ ন্যাজাটের শুভঙ্কর গিরিকে (বিজেপির সন্দেশখালি বিধানসভার আহ্বায়ক) বিভিন্ন নির্দেশ দিতেন। আর শুভঙ্কর আমাকে বলে দিত, আমি সেই মতো কাজ করতাম।” প্রশ্নোত্তর পর্বের ওই ভিডিয়োর একটি অংশে গঙ্গাধরকে বলতে শোনা যায়, “শুভেন্দুবাবুর নির্দেশে সব হয়েছে। উনি আমাদের বলেন, এখানে তাবড় নেতাদের গ্রেফতার করাতে না পারলে তোমরা দাঁড়াতে পারবে না। আর গ্রেফতার করাতে গেলে ধর্ষণের অভিযোগ করাতে হবে।’’
বিজেপি অবশ্য ভিডিয়োটিকে ‘ভুয়ো’ এবং ‘বিকৃত’ বলে দাবি করেছে। সিবিআই তদন্ত চেয়েছে তারা। ভিডিয়োয় যে বিজেপি নেতার দাবি নিয়ে এত শোরগোল, সেই গঙ্গাধরও ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছেন। শুভেন্দুর দাবি, এই ভিডিয়োর নেপথ্যে তৃণমূলের হাত রয়েছে। অভিষেককেই নিশানা করেছেন বিরোধী দলনেতা।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম সংবাদের শিরোনামে উঠে আসে সন্দেশখালি। রেশন দুর্নীতি মামলায় সেখানকার বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালাতে গিয়ে আক্রান্ত হন ইডি আধিকারিকেরা। কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনার পরেই সন্দেশখালিতে আন্দোলন শুরু হয়। শাহজাহান ও তাঁর বাহিনীর বিরুদ্ধে জমি দখলের পাশাপাশি, নারী নির্যাতন, ধর্ষণের অভিযোগ তুলে পথে নামে স্থানীয় মহিলাদের একাংশ। থানায় ধর্ষণের একাধিক অভিযোগও দায়ের হয়। পরে শাহজাহানকে গ্রেফতার করে রাজ্য পুলিশ। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে পরে তাঁকে সিবিআই হেফাজতে নেয়। বর্তমানে শাহজাহান ইডি হেফাজতে রয়েছেন।