বারাণসীতেই যৌথ জনসভায় রাহুল গান্ধী ও অখিলেশ যাদব। ছবি: পিটিআই।
বারাণসীতে নিছক সাংসদ নির্বাচন করার ভোট হচ্ছে না। বারাণসী ফের প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচিত করতে যাচ্ছে। এই প্রচার করেই এ বার বিজেপি বারাণসী থেকে নরেন্দ্র মোদীকে সাত লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জেতানোর লক্ষ্য নিয়েছে।
বিজেপির এই রণনীতির মোকাবিলায় আজ বারাণসীতেই যৌথ জনসভা করে রাহুল গান্ধী ও অখিলেশ যাদব দাবি করলেন, আগামী ৪ জুন লোকসভা নির্বাচনের পরে নরেন্দ্র মোদী আর প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন না। তাই বারাণসীর ভোট প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ভোট নয়। সেটা শুধুই বিজেপির প্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কংগ্রেস তথা ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থী অজয় রাইয়ের লড়াই। সেই ‘জবরদস্ত’ লড়াইতে অজয় রাই জিততেও পারেন। রাহুল বলেন, ‘‘৪ঠা জুনের পরে গুড বাই বিজেপি, গুড বাই নরেন্দ্র মোদী, টাটা! আর মাত্র সাত দিন রয়েছে নকল ফকিরের কাছে।’’
২০১৪-তে প্রথম বার বারাণসীর সাংসদ হওয়ার পরে নরেন্দ্র মোদী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বারাণসী শহরকে জাপানের কিয়োটো-র মতো সাজিয়ে তুলবেন। গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করবেন। আজ অখিলেশ যাদব বারাণসীতে কংগ্রেস-সমাজবাদী পার্টির যৌথ প্রচারের মঞ্চ থেকে বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী মা গঙ্গাকে সাফ করার শপথ করেছিলেন। কিন্তু বারাণসীর লোক জানে, মা গঙ্গা সাফ হননি, সাফাইয়ের বাজেট সাফ হয়ে গিয়েছে। যে গ্রামকে নরেন্দ্র মোদী দত্তক নিয়েছিলেন, সেই গ্রাম তো কেউ চেনেই না। যে ধোঁকা দিয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দিতে হবে। তাঁকে এমন ভাবে হারাতে হবে, যাতে কিয়োটোর লোকও জেনে যায়।’’
বিজেপি নরেন্দ্র মোদীর লোকসভা কেন্দ্রে ভোট পরিচালনা, প্রচার ও ব্যবস্থাপনার জন্য গোটা দেশ থেকে দলের বাছাই করা নেতা-কর্মীদের বারাণসীতে নিয়ে এসেছে। অখিলেশ আজ বারাণসীতে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, বিজেপির এই বাহিনী শেষ বেলায় নানা ভাবে বিক্ষুব্ধ ভোটারদের ‘ম্যানেজ’ করার চেষ্টা করবে। ১ জুন ভোটগ্রহণদের দিন বিরোধী শিবিরের ভোটারদের বাধা দেওয়া হতে পারে। অখিলেশ আজ তাই সমাজবাদী পার্টির কর্মীদের সাবধান করে দিয়েছেন, তাঁরা যেন বিজেপির ‘ভোট ম্যানেজ’-এর খপ্পরে না পড়ে যান। বিজেপি বাধা দিলেও যেন ভোট দিতে যান।
রাহুল ও অখিলেশ দু’জনেই উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির জোটের ভরসায় ভাল ফলের আশা করছেন। রাহুল মনে করছেন, দুই দলের জোট নিচুতলায় পৌঁছে গিয়েছে। আজ বারাণসীতে রাহুল দাবি করেন, কংগ্রেসের ‘হাত’ সমাজবাদী পার্টির ‘সাইকেল’-এর হ্যান্ডল ধরে ফেলেছে। উত্তরপ্রদেশে এই জোট ‘সুইপ’ করতে চলেছে। নরেন্দ্র মোদী প্রচারে রাহুল-অখিলেশকে ‘শাহজাদা’ বলে কটাক্ষ করছেন। আজ অখিলেশ তার জবাবে বলেছেন, ‘‘মোদীজি অচ্ছে দিন-এর স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। আমরা খুশির দিন এনে দেব। যাঁরা ঘাবড়ে গিয়েছেন, তাঁরাই আমাদের শাহজাদা বলছেন। এ বার দুই শাহজাদা শুধু খুশির দিন নয়, বাজিমাত
করতেও চলেছে।’’
রাহুল আজ বারাণসীতে বলেছেন, নরেন্দ্র মোদীর জমানায় দু’টি ভারত তৈরি হয়েছে। একটি গরিবদের, একটি বড়লোকদের। পুণের গাড়ি চাপার ঘটনার উদাহরণ তুলে এনে বলেন, একজন বড়লোকের ১৭-১৮ বছরের ছেলে গাড়ি চাপা দিয়ে দু’জনকে মেরে দিলেও তাকে ৩০০ শব্দের রচনা লিখতে বলা হচ্ছে। বারাণসীর কোনও অটোওয়ালা ভুল করে কাউকে ধাক্কা দিলে তাঁর হাতে হাতকড়া পড়বে। দশ বছরের জেল হবে। মোদী ‘পরমাত্মার নির্দেশ’-এ শিল্পপতিদের ১৬ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ মকুব করে দিচ্ছেন। কিন্তু চাষি, ছোট ব্যবসায়ী, পড়ুয়াদের ঋণ মকুব হয় না। রাহুল বলেন, ‘‘৪ জুন ভোটের ফলের পরে ইন্ডিয়া জোট সরকারে এলে ৫ জুলাই থেকে গরিব মহিলা, বেকার যুবকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে ৮,৫০০ টাকা করে ঢুকতে শুরু করবে।’’ বিজেপি একে খয়রাতি বললেও রাহুলের বক্তব্য, ‘‘এর পিছনে যথেষ্ট ভাবনা রয়েছে। যখন এই টাকা বাজারে খরচ হবে, জিনিসপত্রের চাহিদা তৈরি হবে। তখন কারখানার উৎপাদন বাড়াতে হবে। অর্থনীতিতে গতি আসবে। ওই কারখানাতেই বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান হবে।’’