দেবের হয়ে নির্বাচনী প্রচারে অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায়।
ঘাটালের সমস্যা ও আবেগকে একই মালায় গেঁথে ভোটপ্রচারে কেন্দ্রের বঞ্চনা নিয়ে সরব হলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
সমস্যা বন্যা। সমাধান ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান। আবেগের নাম ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। কারণ, ঈশ্বর জন্মেছিলেন এই ঘাটালেরই বীরসিংহে। রবিবার তৃণমূল প্রার্থী দেবের সমর্থনে প্রচারে এসেছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। রোড শোয়ের শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় ঘাটালের সমস্যা, সমাধান ও আবেগকে জুড়েছেন তিনি। ঘাটালবাসীকে অভিষেক বলেন, “বিজেপি দু’টি প্রশ্ন করতে হবে। প্রথমত, দশ বছর ক্ষমতায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কেন্দ্রের ষাট শতাংশ দেওয়ার কথা, সে টাকা দেননি কেন? দ্বিতীয়ত,এই মেদিনীপুরের বীর সন্তান বর্ণ পরিচয়ের স্রষ্টা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তাঁর আবক্ষ মূর্তি তৎকালীন বিজেপির সবর্ভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের নেতৃত্বে উত্তর কলকাতায় মিছিল করে ভাঙা হয়েছিল। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি কেন?”
এ দিন ৩ টের সময় ঘাটালে পৌঁছন অভিষেক। সকাল থেকেই মেঘলা আবহাওয়া ছিল ঘাটালে।অভিষেক পৌঁছতেই স্টেডিয়াম থেকেই রোড শো শুরু হয়। খোলা গাড়িতে দেব ও অভিষেক পাশাপাশি ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন দুই মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া ও শিউলি সাহা। ছিলেন পিংলার বিধায়ক অজিত মাইতি এবং ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি আশিস হুতাইত। স্টেডিয়াম থেকে বিবেকানন্দ মোড় পর্যন্ত কর্মীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
সরকারি ভাবে প্রার্থী ঘোষণার আগে শাসক দলের যে প্রার্থীর নাম কার্যত চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল, তিনি হলেন দেব। কলকাতায় গিয়ে প্রথমে অভিষেক পরে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন তিনি। দেব যে প্রার্থী হচ্ছেন, তৃণমূল নেত্রী আরামবাগ থেকে কার্যত ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, কেন্দ্রের মুখাপেক্ষী না হয়ে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করবে রাজ্য সরকারই। তখন থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল এই মাস্টার প্ল্যানই হতে চলেছে এ বার ভোটে তৃণমূলের তুরুপের তাস।
নির্বাচন ঘোষণা এবং শাসক দলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর ঠিক হয়েছিল, ঘাটালে দেবের সঙ্গে যৌথ সভা করবেন অভিষেক। কিন্তু পরে তা বাতিল হয়। পরবর্তী সময়ে ঘাটালে অভিষেকের বৈঠকও বাতিল হয়। তৃতীয় বারে অবশ্য দু’জনকে একসঙ্গে দেখা গেল। রোড শো শেষে দেবকে পাশে রেখে উপস্থিত কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশ্যে, অভিষেক বলেন, “দেব যখন আমার কাছে ফেব্রুয়ারি মাসে দেখা করতে এসেছিল, আমি বললাম তুমি অভিমানী হচ্ছো কেন? ও (দেব) বলল, আমি দু’বার সাংসদ হয়েছি। আমি একাধিকবার মাস্টার প্ল্যান নিয়ে সরব হয়েছি। কেন্দ্র টাকা দেয়নি। আমি ঘাটালের মানুষকে কথা দিয়েছিলাম ওই প্রকল্প রুপায়ণ করব। তখনই আমি মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করি। আমি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাই, দেব যে কথাটা বলছে, অত্যন্ত ন্যায়সম্মত। মুখ্যমন্ত্রীও জানিয়ে দেন, যদি এক মাসের মধ্যে কেন্দ্র টাকা না ছাড়ে, তা হলে এই বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মাসের আগে আমার সরকার ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান করবে।” ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান যে অভিষেকের ‘মস্তিকপ্রসূত’ তা উল্লেখ করেন দেবও। অভিষেক যখন মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে কৃতিত্ব দাবি করছেন তখন সেই প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিঁধেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ডেবরায় বিজেপি প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায়ের সমর্থনে কর্মিসভায় যোগ দিয়েছিলেন শুভেন্দু। কর্মিসভা শুরুর আগে অভিষেকের মন্তব্য প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, ‘‘কেন্দ্র টাকা নিয়ে বসেছিল। ৫০ শতাংশ কেন্দ্র দেয়, ৫০ শতাংশ রাজ্য। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটা মিথ্যাবাদী। প্রণববাবুর সৌজন্যে কেলেঘাই-কপালেশ্বরী, ক্ষীরাই, চন্ডিয়া মাস্টার প্ল্যান হয়েছে ময়না, ভগবানপুরে। তার জন্য আগের সরকার জমি অধিগ্রহণ করেছিল। এখানেও জমি অধিগ্রহণ হয়েছে। এখানেও আপনি সংস্কারটা করবেন।’’ পরে শুভেন্দু বলেন, ‘‘জমি অধিগ্রহণ এত দিন করেনি বলেই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান কার্যকর হয়নি।’’
মমতা অথবা অভিষেক পশ্চিম মেদিনীপুরে এলেই ছুঁয়ে যান ঈশ্বরকে। এ বারও তাঁর ব্যতিক্রম হল না। অভিষেক টানলেন পুরনো প্রসঙ্গ। কলকাতায় বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার প্রসঙ্গ তুলে অভিষেককে বলতে শোনা যায়, “বিদ্যাসাগর না থাকলে নিজের নাম লিখতে পারতেন? বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা হয়েছিল তৎকালীন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির নেতৃত্ব। এতদিন হয়ে গেল দোষীদের কেন ধরা হয়নি?’’
তিনি কথা দিলে, কথা রাখেন এই কথা স্মরণ করিয়ে অভিষেক তুলে ধরেন, একশো দিনের প্রকল্পের মজুরির কথা। কেন্দ্র টাকা না দিলেও রাজ্যই যে বিকল্প ব্যবস্থা করে টাকা দিয়েছে, তা উল্লেখ করে অভিষেক জানান, আবাস প্রকল্পের ক্ষেত্রেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।ছ’মাসের মধ্যে কেন্দ্র টাকা না দিলে সে ক্ষেত্রেও বিকল্প ব্যবস্থা করবে রাজ্য।
চৈত্রের দহনে ক্ষণিকের শান্তি দিয়েছিল মেঘ। ভোটের আবহাওয়ায় চাপানউতোরে বিকেলের পরই ফের চড়ল রাজনীতির পারদ।