অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
মেদিনীপুর আসনটি জিততেই হবে। দলের সকলকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। বেলদায় এসে এমনই স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দলের এক সূত্রে খবর। শনিবার বিকেলে নারায়ণগড়ের বেলদায় এসেছিলেন অভিষেক। দলের জনগর্জন সভায়। মেদিনীপুরের দলীয় প্রার্থী জুন মালিয়ার সমর্থনে সভা করেছেন তিনি। সভা শেষে কিছুক্ষণ দলের বিধায়কদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সেখানেই ওই বার্তা দিয়েছেন অভিষেক। মেদিনীপুর প্রচারে অনেকটা সময় পাচ্ছে। এই সময়টাকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। প্রতিটি অঞ্চলের প্রতিটি বুথে প্রচার কর্মসূচি করার কথাও জানিয়েছেন।
এক তৃণমূল বিধায়ক মানছেন, ‘‘সভা শেষে অভিষেক আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। মঞ্চের নীচে কিছুক্ষণ ওঁর সঙ্গে কথা হয়েছে। সেই সময়ে দলের সকলকে নিয়ে কাজ করার কথা জানিয়েছেন উনি।’’ মেদিনীপুর আসনটি বিজেপির দখলে। গতবার এখান থেকে জিতেছেন দিলীপ ঘোষ। নারায়ণগড় মেদিনীপুর লোকসভার অন্তর্গত। শনিবার বিকেলে নারায়ণগড়ের বেলদায় জনগর্জন সভা করেছেন অভিষেক। জুন মেদিনীপুরের তৃণমূল বিধায়ক। তাঁকেই এ বার লোকসভায় মেদিনীপুরের প্রার্থী করেছে দল। বেলদার সভায় জুনকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আমার দল আমার উপর ভরসা করেছে। আপনারা যদি আমার উপর ভরসা করতে পারেন, আমি আপনাদের কথা দিয়ে যাচ্ছি, সুখে- দু:খে, রোদে- বৃষ্টিতে, শীতে- গ্রীষ্মে সব সময় আমি আপনাদের পাশে থাকব।’’ গতবার মানুষ ভুল করেছিলেন বলে দাবি জুনের। সভায় তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘২০১৯ সালে আপনারা যে ভুলটি করেছেন, আমি আপনাদের কাছে করজোড়ে অনুরোধ করছি, সেই ভুলটি আপনারা দয়া করে আর করবেন না। সেই ভুলের খেসারত কিন্তু আপনাদের দিতে হচ্ছে।’’
জুনের দাবি, গতবার মানুষ ভুল করেছেন। অভিষেকের অবশ্য দাবি, গণতন্ত্রে মানুষ ভুল করতে পারেন না। সভায় অভিষেককে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘বিজেপিকে ২০১৯ সালে ভোট দিয়ে জেতানো আর খাল কেটে কুমির আনা এক। গণতন্ত্রে মানুষ ভুল করে না। মানুষ যদি বিজেপিকে ভোট দেয়, সেই আদেশও আমরা মাথা পেতে নেব। মানুষ যদি তৃণমূলকে ভোট দেয়, সেই আদেশও আমরা মাথা পেতে নেব। আপনার যাকে ইচ্ছে তাকে ভোট দিন। অন্য কোনও দল এসে এ কথা বলতে পারবে না। বলবে না যে, যাকে ইচ্ছে তাকে ভোট দিন। আমরা বলছি, তৃণমূলকে ইচ্ছে করলে দিন, বিজেপিকে ইচ্ছে করলে দিন, সিপিএমকে ইচ্ছে করলে দিন, নির্দলকে ইচ্ছে করলে দিন। আমার খালি একটা অনুরোধ, ভোট যাকে ইচ্ছে দিন, শুধু নিজের অধিকারটা সামনে রেখে দিন।’’ তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আমি কেন বলছি এ কথা জানেন? পাঁচ মিনিটে এটা তিনবার বললাম। কেন বলছি? ২০১৯ সালে আপনারা যখন বিজেপিকে এই মেদিনীপুর কেন্দ্রে ভোট দিয়েছিলেন, তখন নিজেদের অধিকারকে সামনে রেখে ভোট দিয়েছিলেন? নিজের বাড়ির অধিকারকে সামনে রেখে ভোট দিয়েছিলেন? মেদিনীপুরের মানুষ রামমন্দিরকে সামনে রেখে ভোট দিয়েছিলেন। এ বার ভোট দেবেন নিজের মাথার উপর ছাদকে কেন্দ্র করে। আপনি আপনার অধিকারকে সামনে রেখে ভোট দিন। আপনার অধিকার থেকে আপনাকে কেউ বঞ্চিত করতে পারবে না।’’
দলের কর্মী- সমর্থকদের অভিষেকের বার্তা, এই ভোট প্রতিরোধের ভোট, প্রতিশোধের ভোট। গতবার ভুল যারা বুঝিয়েছিল, তাদের শিক্ষা দেওয়ার ভোট। সভা শেষে মঞ্চের নীচে দলের বিধায়কদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেছেন অভিষেক। দলের এক সূত্রে খবর, জেলার কোথায় কী হচ্ছে, দলের কে কী করছেন, সব খবরই যে তাঁর কাছে পৌঁছয়, কথার ফাঁকে সে কথা বুঝিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। এক তৃণমূল বিধায়কের কথায়, ‘‘উনি দলের সবাইকে নিয়ে কাজ করার কথা বলেছেন। এটা তো ঠিকই যে, গণতন্ত্রে মতামত থাকতেই পারে। পছন্দ- অপছন্দ থাকতেই পারে। কিন্তু ফাইনালি যে দলের প্রতীক পায়, তাঁকে কিন্তু সবাই মিলেই সাপোর্ট করতে হয়। দলের অনুগত কর্মী হিসেবে। সেখানে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ ম্যাটার করে না।’’ দিলীপের অবশ্য দাবি, মেদিনীপুরে এ বারও বিজেপি জিতবে। তাঁর কথায়, ‘‘মেদিনীপুরের মানুষ নরেন্দ্র মোদীর পক্ষেই রায় দেবেন। বিগত পাঁচ বছর ধরে আমরা একটানা মেদিনীপুর লোকসভায় কাজ করেছি।’’