অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
‘দিল্লিবাড়ির লড়াই’য়ে বঙ্গ বিজেপিকে ৩৫ আসনের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছেন অমিত শাহ। শুভেন্দু অধিকারী থেকে সুকান্ত মজুমদারেরা সুযোগ পেলেই সেই সংখ্যা বলে কর্মী-সমর্থকদের চাগাতে চেষ্টা করছেন। সেই আবহে আনন্দবাজার অনলাইনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করলেন, গত লোকসভায় বাংলায় তৃণমূল যতগুলি আসন পেয়েছিল, তার চেয়ে বেশি পাবেই। পাশাপাশি তিনি এ-ও জানালেন, দেশে কী হবে, বিজেপি আবার কুর্সিতে ফিরবে নাকি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ সরকার গড়বে, তা ‘‘বলা মুশকিল।’’
তৃণমূল কত আসন পাবে? সেই সংখ্যা অবশ্য নির্দিষ্ট করে বলেননি অভিষেক। শুধু বলেছেন, ‘‘কে কত আসন পাবে, তা তো মানুষ ঠিক করবেন। আমি তো গণৎকার নই!’’ তবে পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেছেন যে, ‘‘গত বার তৃণমূল যত আসন পেয়েছিল, তার চেয়ে বেশি পাবে।’’ গত বার ভোটে ২২টি লোকসভায় জিতেছিল তৃণমূল। বিজেপি জিতেছিল ১৮টি আসনে। পরে বাবুল সুপ্রিয় তৃণমূলে যোগ দিয়ে বিজেপির টিকিটে জেতা সাংসদপদ থেকে ইস্তফা দেন। বাবুলের কেন্দ্র আসানসোল উপনির্বাচনে জিতে নেয় তৃণমূল। ইতিমধ্যে পদ্ম প্রতীকে ব্যারাকপুর কেন্দ্রে জেতা অর্জুন সিংহও যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। এ বার তৃণমূল কত আসন পাবে? অভিষেক বলেছেন, “২৪টা হতে পারে, ৩৪টাও হতে পারে।’’
তবে ভোট ঘোষণা হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে সেই সংখ্যাও তিনি জনসমক্ষে বলা শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তাঁর কথায়, ‘‘তৃণমূল যেখানেই লড়বে, জেতার জন্য লড়বে। ডায়মন্ড হারবারেও জেতার জন্য লড়ব, দার্জিলিঙেও জেতার জন্য লড়ব।’’ এই প্রসঙ্গেই অভিষেক ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বিজেপি অনেক কথা বলেছিল। প্রায় মন্ত্রিসভা ঠিক করে ফেলেছিল। কিন্তু আমি একনাগাড়ে বলে গিয়েছিলাম, তৃণমূল ২০০ পার করবে। সভা-সমিতি সর্বত্র একই কথা বলেছিলাম। ভোটে পরে দেখা গিয়েছিল, তৃণমূল জিতেছিল ২১৩টি আসন। যদিও এখন তৃণমূলের বিধায়ক সংখ্যা ২২৩।’’
আর দেশে? কারা জিতবে? অভিষেকের বক্তব্য, ‘‘বলা মুশকিল।’’ তবে ‘ইন্ডিয়া’র সরকার গড়ার বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একের বিরুদ্ধে একের লড়াই এবং যৌথ বিরোধী প্রার্থী দেওয়ার কথা বলেছিলেন। সেই কথা শুনলে এখন ‘ইন্ডিয়া’ সরকার গড়ার বিষয়ে ভূমিকা নিতে পারত।’’ প্রসঙ্গক্রমে অভিষেক বোঝাতে চান, এ ব্যাপারে কংগ্রেসেরও ভূমিকা রয়েছে। তারাও একের বিরুদ্ধে এক লড়াইয়ের পরিস্থিতিকে ‘সঙ্কুচিত’ করেছে। তাঁর বক্তব্য, আসন সমঝোতা যদি সারা দেশে সুষ্ঠু ভাবে হত, তা হলে নিশ্চিত ভাবেই পদ্মশিবিরকে বেগ দেওয়া যেত।
তৃণমূলের সেনাপতি এ-ও বলেছেন, তাঁর কাছে সব নির্বাচনই সমান কঠিন। অতীতেও ছিল। ভবিষ্যতেও হবে। অভিষেকের অভিমত, প্রতিটা ভোট এক এক রকমের পরিস্থিতি নিয়ে আসে। এক এক রকম রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে হাজির হয়। ২০১৬ সালের ভোটে বাম-কংগ্রেসের জোট হয়েছিল, নির্বাচনের আগে নারদকাণ্ড ফাঁস হয়েছিল, পোস্তায় উড়ালপুল ভেঙে পড়েছিল। আবার ২০২১ সালে বিজেপি তাদের সর্বশক্তি ঢেলে দিয়েছিল। কিন্তু মানুষ জিতিয়েছিলেন তৃণমূলকেই। একই ভাবে অভিষেকের মতে, ২০২৪-এর লোকসভা এবং ২০২৬-এর বিধানসভাতেও লড়াই ‘কঠিন’।