অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র
সিএএকে সমর্থন করতে শর্ত দিলেন অভিষেক। বনগাঁর জনসভায় তিনি বলেন, “বিজেপির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর প্রধানমন্ত্রী এসে যদি ঘোষণা করেন যে, আমরা নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দেব, কোনও এনআরসি হবে না, তা হলে তৃণমূলের কেউ সমর্থন করুক আর না করুক, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সমর্থন করবে। আমি কথা দিয়ে যাচ্ছি।” একই সঙ্গে অভিষেকের দাবি, সিএএ-র পর এনআরসি চালুর দিকে এগোবে বিজেপি।
অভিষেক জানান, বাগদায় দলের প্রার্থী কে হবেন, তা স্থির করবেন মানুষই। তাঁর কথায়, “এই মাঠেই আমি আবার জুলাই মাসে সভা করতে আসব। নবজোয়ারে যে ভাবে আপনাদের মতামত নিয়ে প্রার্থী করেছি, সে ভাবেই ৫০ হাজার মানুষের মতামত নিয়ে আমরা প্রার্থী ঠিক করব।” প্রসঙ্গত, বনগাঁর তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস বাগদা কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন। প্রার্থী হওয়ার পর বিধায়ক পদে ইস্তফা দেন তিনি। ফলে এই কেন্দ্রে উপনির্বাচন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে।
বিজেপি ক্ষমতায় এলে ২০২৯ সালে রান্নার গ্যাসের দাম আড়াই হাজার টাকা হয়ে যাবে বলে দাবি করলেন অভিষেক। বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ ক্ষমতায় এলে দেশে ৫০ কোটি মহিলাকে লক্ষ্মীর ভান্ডার দেওয়া হবে বলেও দাবি করেন তিনি। একই সঙ্গে অভিষেক জানান, দারিদ্রসীমার নীচে থাকা পরিবারকে বছরে দশটি গ্যাস সিলিন্ডার বিনামূল্যে দেবে ‘ইন্ডিয়া’র সরকার।
‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্প নিয়ে বিজেপিকে তোপ তৃণমূলের। বিজেপি তাদের অধীনস্থ রাজ্যগুলিতে এই প্রকল্প চালু করলে তিনি আর তৃণমূলের হয়ে ভোট চাইবেন না বলেও দাবি করেন অভিষেক।
বনগাঁর প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ, অধুনা রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরকে হরিচাঁদ এবং গুরুচাঁদ ঠাকুরের নামে শপথগ্রহণে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে তৃণমূলের অভিযোগ। এই প্রসঙ্গে রবিবার অভিষেক বলেন, “যাঁরা শ্রী শ্রী হরিচাঁদ, শ্রী শ্রী গুরুচাঁদকে ঈশ্বর বলে মানেন না, তাঁদের কি ভোট দেবেন?”
বনগাঁর বিজেপি প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ শান্তনু ঠাকুর গত পঞ্চায়েত ভোটে নিজের বুথে হেরেছেন। সে কথা উল্লেখ করে অভিষেকের আর্জি, আগামী ২০ মে ভোট দিয়ে শান্তনুকে ‘শেষ জবাব’ দিন।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে বনগাঁর জনসভা থেকে বিজেপিকে তোপ দাগলেন অভিষেক। তিনি বলেন, “নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পাঁচ দিন আগে এরা নাগরিকত্ব দেবে বলে ফর্ম নিয়ে এসেছিল। আজ দু’মাস কেটে গেল। এরা (বিজেপি) বলেছিল, তৃণমূল চায় না আপনি নাগরিকত্ব পান। বলুন তো আপনারা, এই দু’মাসে তৃণমূল কাউকে ফর্ম ফিল আপ করা থেকে আটকেছে? আটকায়নি। কিন্তু আপনি আমায় দেখান, বিজেপির কোনও বুথের কোনও নেতা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন।”
কয়েক দিন আগেই নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জে সভা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, মতুয়ারা শরণার্থী। সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে রবিবার বনগাঁর জনসভায় অভিষেক বলেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সভা করে বলে গিয়েছেন মতুয়ারা শরণার্থী। আর আমরা বলছি মতুয়ারা সবাই দেশের নাগরিক। এটাই পার্থক্য।”
বনগাঁর জনসভা থেকে সেখানকার বিদায়ী সাংসদ হিসাবে শান্তনু ঠাকুরের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুললেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই আসনে প্রার্থীদের জয়পরাজয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় মতুয়া ভোট। সে কথা মাথায় রেখে অভিষেক বলেন, “এই শান্তনু ঠাকুর গত পাঁচ বছরে মতুয়া ভাইদের জন্য কী করেছেন?”
চতুর্থ দফার ভোটে ভাল ফল করতে আজ জোড়া প্রচারসভা করছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার তাঁর প্রথম সভাটি হচ্ছে বনগাঁ লোকসভা এলাকায়। এই আসনে শান্তনু ঠাকুর বিজেপি প্রার্থী। তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূল প্রার্থী করেছে বিশ্বজিৎ দাসকে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোট এই আসনটি তৃণমূলের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল বিজেপি। এ বার আসন পুনরুদ্ধারের লড়াই তৃণমূলের।