হলদিয়ায় সোমবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
কোন্দলই কাঁটা! লোকসভা ভোটের আগে নন্দীগ্রামের জেলায় কর্মী বৈঠকে এসেও সেটাই টের পেলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কাঁটা তুলতে দলীয় নেতৃত্বকে কড়া বার্তাও দিয়ে গেলেন।
তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্যের সমর্থনে ওই সাংগঠনিক জেলার নেতাদের নিয়ে সোমবার হলদিয়ায় কর্মী বৈঠক করেন অভিষেক। দুপুর ১২টার মধ্যেই হেলিকপ্টারে অভিষেক পৌঁছে যান হলদিয়ায়। সেখান একটি হোটেলে ছিল কর্মী সভা। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলে রুদ্ধদ্বার আলোচনা। তৃণমূল সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে নন্দীগ্রাম, হলদিয়া এবং ময়না বিধানসভা এলাকায় তৃণমূলের দলীয় কোন্দল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিষেক। পাশাপাশি, ওই তিন এলাকার নেতাদের কার্যত ‘ধমক’ও দিয়েছেন।
এ দিন হলদিয়ার বৈঠকে ছিলেন তমলুক লোকসভার অন্তর্গত চার জন বিধায়ক, জেলা সভাপতি, যুব সংগঠনের সভাপতি, ব্লক সভাপতি এবং অন্য শাখা সংগঠনের নেতা-নেত্রীরা। জানা গিয়েছে, অভিষেক এলাকার বিধায়কদের সঙ্গে আলাদা আলাদা করে কথা বলেন। পরে অন্তত দু’শো কর্মীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে হলদি নদীর দু’পাড়ে নন্দীগ্রাম এবং হলদিয়ার ব্লক স্তরের নেতৃত্বর উপরে অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে অভিষেককে।
তৃণমূল সূত্রের খবর, হলদিয়া টাউন ব্লক থেকে উপস্থিত নেতানেত্রীদের দাঁড়াতে বলেন অভিষেক। পরে তিনি হলদিয়া শহর তৃণমূলের সভাপতি মিলন মণ্ডলকে প্রশ্ন করেন যে, কেন তিনি অন্যদের সঙ্গে নিয়ে চলতে পারছেন না? উল্লেখ্য, হলদিয়ায় দলের নির্বাচনী ওয়ার্ড বণ্টন নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের কাছে প্রায় অভিযোগ করছিলেন মিলন। সেই প্রসঙ্গে মিলনকে এ দিন বলা হয়, ‘‘আপনি কাকে মানতে পারছেন, সেটা বড় কথা নয়। দল যাকে যা দিয়েছে, তা নিয়েই চলতে হবে আপনাকে।’’
তমলুক সাংগঠনিক জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি শেখ আসগর আলিকেও এ দিন অভিষেক ‘বকাঝকা’ করেন বলে খবর। দলের এই শীর্ষ নেতার নাকি বার্তা, ‘‘আপনি যেখানে সেখানে চলে যাচ্ছেন। অথচ মাদার তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে আপনার কোনও যোগাযোগ নেই। বিগত ৩০ দিনে কোন বুথ ভিত্তিক কমিটি তৈরি করা হয়নি। উল্টে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যাচ্ছেন।’’ শুভেন্দুর বিধানসভা এলাকা নন্দীগ্রামেও তৃণমূলের কোন্দল স্পষ্ট। নন্দীগ্রামের নেতৃত্বের মধ্যে বাপ্পাদিত্য গর্গ এবং শেখ সুফিয়ানকেও এ দিন কথা শোনান অভিষেক। নন্দীগ্রাম-১ ব্লক সভাপতি বাপ্পাদিত্যকে সবাইকে নিয়ে চলার নির্দেশ দিয়ে যান। বৈঠক প্রসঙ্গে জানতে পরে বাপ্পাদিত্যকে ফোন করা হলে তিনি অবশ্য বলেন, ‘‘সাংগঠনিক বৈঠক নিয়ে সংবাদমাধ্যমে মন্তব্য করব না।’’ আর মিলন মণ্ডল বলছেন, ‘‘ব্লক সম্বন্ধে জানতে চেয়েছিলেন। বলেছি। কোন্দলের কোনও ব্যাপারই নেই।’’
রাজনৈতিক মহল মনে করাচ্ছে, পূর্ব মেদিনীপুর বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলা। অভিষেকের উদ্বেগের মধ্যে যে তিন এলাকা রয়েছে, তার মধ্যে নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু নিজে। আর হলদিয়াতেও তাঁর যথেষ্ট প্রভাব। শুভেন্দু নিজে এই শিল্প-বন্দর শহরের ভোটার। ময়নাতেও রয়েছে বিজেপি বিধায়ক। ফলে, শুভেন্দুর নিজের এলাকায় তৃণমূল যে কোন্দলে জেরবার, তা এ দিন টের পেয়েছেন অভিষেক।
অভিষেকের বৈঠককে অবশ্য গুরুত্ব দিতে রাজি নয় বিজেপি। হলদিয়ার বিজেপি বিধায়ক তথা দলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তাপসী মণ্ডল বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন এ বার সুষ্ঠু ভাবে নির্বাচন পরিচালনা করছে। আর তৃণমূলের সাংগঠনিক বৈঠক নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না।’’