বৈঠকের শেষে ক্যারাভ্যান থেকে বেরিয়ে আসছেন অভিষেক, দেব-সহ অন্য নেতৃত্বরা। ময়রাপুকুর মোড়ে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।
তৃণমূলের চায়ে পে চর্চায় বহুজাতিক সংস্কৃতির ছোঁয়া।
ধীরে ধীরে পুরোদস্তুর ‘কর্পোরেট’ হয়ে উঠছে তৃণমূল। সৌজন্যে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার ঘাটালে রোড শো ছিল তাঁর। তৃণমূল সূত্রের খবর, সেই রোড শো মিটতেই ক্যরাভানেই (অভিষেকের প্রচার গাড়ি) দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন অভিষেক। সেখানেই দশ মিনিটের ‘চায়ে পে চর্চায়’ ভোটের আগে প্রয়োজনীয় কর্তব্য নেতাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
সাধারণত এমনটা দেখা যায় কর্পোরেট জগত। কাজ অনেক। সময় কম। আসা-যাওয়ার পথে বিমানে বা গাড়িতে প্রয়োজনীয় বৈঠক সেরে ফেলেন কর্পোরেট জগতের উচ্চপদস্থ কর্তারা। এতে কম সময়ে অনেকটা কাজ সেরে ফেলা যায়। অভিষেকও করলেন তাই। রবিবার ঘাটাল শহরের বিবেকানন্দ মোড়ে রোড শো শেষে একটি ছোট সভাও হয়।সেখানে বক্তব্য শেষ করে ক্যারাভানেই বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী দেব ছাড়াও ছিলেন দুই মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া এবং শিউলি সাহা, পিংলার বিধায়ক অজিত মাইতি এবং জেলা সভাপতি আশিস হুতাইত। গাড়িতে ছ’টি সিট রয়েছে। একসঙ্গে পাশাপাশি অভিষেক ও দেব বসে ছিলেন। উল্টোদিকে মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া, শিউলি সাহা, অজিত মাইতি এবং আশিস হুতাইত।
বৈঠক শুরুর সঙ্গে সঙ্গে এসেছিল চা। কাগজের কাপে চা খেতে খেতেই চলে বৈঠক। মিনিট দশেকের ওই বৈঠকে দলীয় নেতৃত্বদের তাঁদের দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দেন অভিষেক। নির্বাচিত প্রধান, জনপ্রতিনিধি থেকে দলের বুথ সভাপতি, অঞ্চল সভাপতি, ব্লক সভাপতি, জেলা কর্মকর্তাদের আরও তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত পদাধিকারীদের দায়িত্ব নিয়ে প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি পৌঁছনোর নিদান দেন। দলীয় প্রার্থীর জয়ের ব্যবধান বাড়ানোর জন্য দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার নির্দেশ দেন। সরকারি প্রকল্পগুলি নিয়ে আরও প্রচারে জোর দেন। আবাসের উপভোক্তাদের পাশে থাকার বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। জয়ের ব্যবধান কমলেই সংশ্লিষ্ট নেতৃত্বকেই তার জবাবদিহি করার কথাও মনে করিয়ে দেন অভিষেক। দ্বন্দ্ব ভুলে একসঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন ওই বৈঠকে। মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বলেন, “মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে এত যুগের অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই। এর চেয়ে আনন্দের কিছু হতে পারে না। ঘাটালবাসীর প্রত্যাশা পূরণ হতে চলেছে।’’
ঘাটালে প্রার্থী ঘোষণার আগে থেকেই ঘাটালে অভিষেকের সফর নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছিল। দিনের শেষে দু’দুবার ঘাটালে অভিষেকের বৈঠক বাতিল হয়েছিল। ফলে দলের সবর্ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কী বার্তা দেন তা নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন নেতারা। ঘাটালে সাংগঠনিক ভাবে বড় আকারে কোনও বৈঠক করেননি অভিষেক। আপাতত সারলেন ছোট্ট ক্যারাভান বৈঠক। সেই বৈঠকেই তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন আগামী দিনে হয়তো অনেক নতুন কিছু আসতে চলেছে দলে।
নয়া সংস্কৃতির সঙ্গে যে পুরনোর বিবাদ নেই অভিষেকের রবিবাসরীয় প্রচারে স্পষ্ট হয়েছে তাও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতোই তাঁকে খেয়াল রাখতে দেখা গিয়েছে কর্মীদের। পথ ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন অ্যাম্বুল্যান্সকে। কর্মীদের হুড়োহুড়িতে যাতে গাছ ভেঙে না পড়ে খেয়াল রেখেছেন তাও।