অরবিন্দ কেজরীওয়াল। —ফাইল চিত্র।
আবগারি দুর্নীতি মামলায় জামিনে মুক্তি পাওয়ার তিন দিনের মাথায় নতুন করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল। আজ মুখ্যমন্ত্রীর প্রাক্তন ব্যক্তিগত সচিব বৈভব কুমারের বিরুদ্ধে খাস মুখ্যমন্ত্রীর আবাসেই তাঁকে মারধরের অভিযোগ করে পুলিশে ফোন করেন রাজ্যসভায় আপেরই সাংসদ স্বাতী মালিওয়াল। বিজেপির দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই মালিওয়ালকে মারধর করা হয়েছে। যদিও রাত পর্যন্ত পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি স্বাতী। তিনি সাংসদ হওয়ার আগে দীর্ঘ সময় দিল্লির মহিলা কমিশনের প্রধান ছিলেন।
গত শুক্রবারই আবগারি মামলায় কেজরীওয়াল জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। একুশ দিনের জামিনে মূলত দিল্লি ও পঞ্জাবের লোকসভা নির্বাচনে কেজরীওয়ালকে সামনে রেখে প্রচারের ঝড় তোলার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন আম আদমি পার্টি নেতৃত্ব। কিন্তু আজ যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রী নিবাসে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে দলীয় সাংসদকে নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে, তাতে রীতিমতো ব্যাকফুটে আপ। ভোটের মরসুমে মালিওয়ালের অভিযোগকে সামনে রেখে আজ কেজরীওয়ালের উদ্দেশ্যে সর্বাত্মক আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপির বক্তব্য, যাঁর বাড়িতেই মহিলারা সুরক্ষিত নন, সেখানে রাজ্যের মহিলাদের সুরক্ষা মুখ্যমন্ত্রী দেবেন কী করে!
আপ শিবিরে গোড়া থেকেই কেজরীওয়ালের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত স্বাতী। কেজরীওয়াল ক্ষমতায় আসার পরেই দিল্লি মহিলা কমিশনের সভাপতি করা হয় স্বাতীকে। প্রায় দশ বছর ওই পদে থাকার পরে দলের টিকিটে রাজ্যসভার প্রার্থী হন স্বাতী। আপ সূত্রের খবর, তার পর থেকেই কেজরীওয়ালের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল স্বাতীর। এমনকি, আবগারি দুর্নীতিতে কেজরীওয়ালের গ্রেফতারি পর্বে একবারও তাঁকে সামনে আসতে দেখা যায়নি। যা মূলত স্বাতীর সঙ্গে কেজরীওয়ালের দূরত্বকে স্পষ্ট করে দিয়েছিল দলের অভ্যন্তরে।
সূত্রের মতে, আজ সকাল ৯.১০ নাগাদ কেজরীওয়ালের সঙ্গে দেখা করতে মুখ্যমন্ত্রী নিবাসে পৌঁছন স্বাতী। তিনি কেজরীওয়ালের সঙ্গে দেখা করার অনুরোধ জানালে তাঁকে বসতে বলা হয়। সূত্রের মতে বেলা সাড়ে ন’টা নাগাদ কেজরীওয়ালের বাড়ি থেকে পুলিশ কন্ট্রোল রুমে একজন মহিলা ফোন করেন। নিজের পরিচয় স্বাতী মালিওয়াল বলে তিনি জানান, তাঁকে শারীরিক ভাবে হেনস্থা করা হয়েছে। দিল্লি পুলিশের দাবি, দ্বিতীয় ফোনে ওই মহিলা পুলিশকে জানান, তিনি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর আবাসে রয়েছেন। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বৈভব কুমার তাঁকে মারধর করেছেন। দিল্লি পুলিশের ডিসিপি (উত্তর) মনোজ মীনা বলেন, ‘‘কিছু ক্ষণ পরে মালিওয়াল সিভিল লাইনস থানায় উপস্থিত হন। তাঁকে প্রয়োজনীয় শারীরিক পরীক্ষা করার কথা বললে রাজি হননি স্বাতী। কিছু ক্ষণ পরে তিনি কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দায়ের না করেই ফিরে যান। পুলিশকে জানিয়ে যান, তিনি পরে অভিযোগ দায়ের করবেন।’’ অভিযোগ পেয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আবাসে পুলিশ গেলে সেখানেও অভিযোগকারীকে পাওয়া যায়নি।
আপ সূত্রের মতে, কেজরীওয়ালের অন্যতম ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত বৈভব। সম্প্রতি আবগারি দুর্নীতিতে তাঁতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছিল ইডি। পাশাপাশি, ভিজিল্যান্স দফতর সম্প্রতি পুরনো একটা ঘটনায় বৈভবের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মীকে মারধর করার অভিযোগে কেজরীওয়ালের ব্যক্তিগত সচিব থেকে সরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করে। যা মেনে নেন উপরাজ্যপাল ভি কে সাক্সেনা। তাই আপ নেতারা মনে করছেন, আগামী দিনে বৈভবকে নিয়ে টানাটানি শুরু হলে কেজরীওয়ালের নাম অবশ্যই উঠে আসবে। যা ভোটের আগে মোটেই কাম্য নয়। আপ শিবিরের আশঙ্কা, স্বাতী অভিযোগ দায়ের না করলেও, জাতীয় মহিলা কমিশন দিল্লি পুলিশকে একটি তদন্তকারী দল মুখ্যমন্ত্রী আবাসে পাঠিয়ে তিন দিনের মধ্যে একটি ‘অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট’ জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে কেজরীওয়ালের নাম উঠে আসার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। কেন না, ওই তদন্ত করবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বে থাকা দিল্লি পুলিশই।
২৫ মে দিল্লিতে ভোট। তার আগে কেজরীওয়ালের গ্রেফতার ও জামিন আপের পক্ষে সহনাভূতির ঝড় তুলতে পারে, এই আশঙ্কায় ছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। স্বভাবতই স্বাতীর ঘটনা সামনে আসায় দফায় দফায় এ নিয়ে দিনভর সরব হয়েছেন বিজেপি নেতারা। নয়াদিল্লি লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী বাঁশুরি স্বরাজ গোটা ঘটনাটিকে লজ্জাজনক আখ্যা দিয়ে প্রশ্ন তোলেন, ‘‘যেখানে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে মহিলারা সুরক্ষিত নন, সেখানে তিনি দিল্লির মহিলাদের নিরাপত্তা কী ভাবে নিশ্চিত করবেন?’’ দিল্লি বিজেপির নেতা প্রাক্তন আপ কর্মী কপিল মিশ্র বলেন, ‘‘যে হেতু নিগ্রহের ঘটনা মুখ্যমন্ত্রী আবাসে ঘটেছে, তাই কেজরীওয়ালকেই এর জবাব দিতে হবে।’’ ঘটনার পর থেকে মুখে কুলুপ এঁটেছেন কেজরীওয়াল ও তাঁর দল। তবে ঘরোয়া ভাবে আপ নেতারা মনে করেছেন, মালিওয়াল আগামী দিনে মুখ খুললে মুখ্যমন্ত্রীর সমস্যা আরও বাড়তে চলেছে।