অরবিন্দ কেজরীওয়াল। —ফাইল ছবি।
‘‘পাহাড়ে চলে গিয়েছে বিজেপির ভোট!’’
গ্রীষ্মের দুপুরে পূর্ব দিল্লি লোকসভা কেন্দ্রের পাণ্ডব নগরের আট ফুট বাই দশ ফুটের ঘরে প্রমাণ সাইজের কুলার বনবন করে ঘুরছে। উড়ছে আম আদমি পার্টির কুলদীপ কুমারের ছবি সাঁটা ব্যানার। বাইরে মুখ বাড়ালে গরম হাওয়ার ছেঁকা। আর সেই প্রবল গরমে পাহাড়ের গল্প শোনাচ্ছেন বিনোদ গুপ্ত। প্রলাপ বকছেন না কি পাহাড়ের স্বপ্ন দেখে মনকে প্রবোধ দিচ্ছেন!
চুপ করে থাকতে দেখে নিজেই জট খুললেন বিনোদ। বললেন, ‘‘বৃহস্পতিবার বুদ্ধপূর্ণিমার ছুটি ছিল। শুক্রবার ছুটি নিলেই, রবিবার পর্যন্ত টানা ছুটি। বুধবার রাত থেকেই হিমাচল ও উত্তরাখণ্ডের রাস্তায় দিল্লির গাড়ির ভিড়। এঁরা সকলেই উচ্চবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্ত, বিজেপিকে দিল্লিতে জিতিয়ে এসেছেন। আর যাঁরা রয়ে গেলেন, তাঁরা ৪৫ ডিগ্রিতে কতটা ভোট দিতে বের হবেন, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আমাদের ভোটার মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও ঝুপড়িবাসী। তাঁরা ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন।’’
‘বিজেপি এলে বন্ধ হবে বিনামূল্যে দু’শো ইউনিট বিদ্যুৎ, বিনামূল্যের জল, মহিলাদের ফ্রি-তে বাসভ্রমণ, মহল্লা ক্লিনিক।’— আপ নেতৃত্বের দাবি, এই প্রচার সাড়া ফেলেছে বিভিন্ন কলোনি ও ঝুপড়িবাসীদের মধ্যে। অরবিন্দ কেজরীওয়ালের সঙ্গে গত এক দশকের বেশি যুক্ত রয়েছেন বঙ্গসন্তান সঞ্জয় বসু। তাঁর বিশ্লেষণ, ‘‘গরিবদের অর্থ সাহায্য করলেই প্রধানমন্ত্রী বলছেন, অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। অথচ, সরকারি নীতিতে আর্থিক ফায়দা করে দেওয়া হচ্ছে আদানি-অম্বানীদের। মধ্যবিত্ত ও গরিবদের বোঝাতে পেরেছি, বিজেপি এলে সব জনহিতকর প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়া হবে।’’
দিল্লির মুখার্জি নগরের পরে পড়ুয়াদের সবথেকে বড় আড্ডা লক্ষ্মীনগরে। সেখানে বই বিক্রেতা মোহন কুমার বললেন, ‘‘গত দশ বছরে বিজেপি সাংসদেরা কোনও কাজ করেননি। কিন্তু কেজরীওয়াল দিল্লির উন্নতির চেষ্টা করেছেন। সেই কেজরীকে গ্রেফতার করা মেনে নেওয়া যায় না।’’ ফলে দলের প্রার্থীরা যে কেজরীর নামে সহানুভূতি ভোট পেতে চলেছেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত আপ নেতৃত্ব।
তবে দিল্লিতে আপ-কংগ্রেস জোট আর পঞ্জাবে তারাই প্রতিদ্বন্দ্বী। এতে দিল্লিবাসী বিভ্রান্ত হবেন না? আপের স্থানীয় নেতা বিকাশমোহন বলেন, ‘‘পঞ্জাবে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলালে বিজেপি ও অকালির পাল্টা জোট হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। আর দিল্লির গত দু’টি নির্বাচনে বিজেপি বিরোধী ভোট কংগ্রেস ও আপের মধ্যে ভাগ হয়ে গিয়েছে। এ বার তা ঠেকাতেই জোট করা হয়েছে।’’ তবে আপের ভোট কংগ্রেসের পক্ষে যাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হলেও, কংগ্রেস কর্মীদের ভোট তাদের পক্ষে যাবে তো? কিঞ্চিৎ সংশয়ে আপ শিবির।