—প্রতীকী চিত্র।
প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন জন সাধারণকে সঠিক পরিষেবা দেবেন। দুর্নীতি মুক্ত ‘সাফ সুতরো’ প্রশাসনিক পরিকাঠামো এবং সমাজ গড়বেন। কিন্তু সেই প্রার্থীদেরই একটা বড় অংশের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক ফৌজদারি মামলা!
পূর্ব মেদিনীপুরে আগামী ২৫ মে ষষ্ঠ দফায় লোকসভা নির্বাচন। জেলার দুই লোকসভা কেন্দ্র কাঁথি এবং তমলুকে ওই ভোটের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মোট ১৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। এদের মধ্যে একজনের মনোনয়ন বাতিল নির্বাচন কমিশন করেছে। বাকি ১৮ জনের মনোনয়নের জমা দেওয়া হলফনামা পরীক্ষা করেছে ভোট-নজরদারি সংস্থা ‘ন্যাশনাল ইলেকশন ওয়াচ’ এবং ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস’ (এডিআর)। তাদের রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের ন’জন প্রার্থীর মধ্যে চার জনের এবং তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের ৯ জনের মধ্যে এক জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। যা মোট প্রার্থীর ২৭ শতাংশ। তবে ওই রিপোর্ট ছাড়াও সম্প্রতি তমলুকের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও খুনের চেষ্টার মতো মামলা দায়ের হয়েছে।
এডিআর প্রকাশিত রিপোর্টে দাবি, ওই প্রার্থীদের বিরুদ্ধে রয়েছে গুরুতর অপরাধ সংক্রান্ত মামলা। এর মধ্যে এক জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে খুন, প্রতারণা, দু জনের বিরুদ্ধে চুরি এবং একজনের বিরুদ্ধে মহামারী আইন অমান্য করার অভিযোগ রয়েছে। দলগত ভাবে ফৌজদারি সবচেয়ে বেশি মামলায় অভিযুক্ত কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সৌমেন্দু অধিকারী। তাঁর বিরুদ্ধে ছ’টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে কাঁথি মহকুমা আদালতে। দ্বিতীয় স্থানে ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী উত্তম বারিক রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে চারটি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় ইতিমধ্যে চার্জ গঠন হয়েছে। নির্দল প্রার্থীদের মধ্যে একমাত্র কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের অর্জুন মাইতির বিরুদ্ধে দুটি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। তবে কংগ্রেস, সিপিএম এবং এসইউসি, বহুজন সমাজবাদী পার্টির প্রার্থীদের ‘রেকর্ড’ ভাল। মামলার বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হননি সৌমেন্দু অধিকারী। তবে তৃণমূল প্রার্থী উত্তম বারিক বলেছেন, ‘‘আইনের প্রতি পূর্ণ আস্থা আছে। আইনের ঊর্ধ্বে আমরা কেউই নই।’’
তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে ত্রিপুরায় ভোট প্রচারে গিয়ে মহামারী আইন ভঙ্গ করার একটি ধারায় মামলা হয়েছে। সম্প্রতি ওই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎও খুনের চেষ্টার মামলায় জড়িয়েছেন। দেবাংশুর দাবি, ‘‘বাকিদের বিরুদ্ধে যা মামলা রয়েছে, তার থেকে আকাশ পাতাল তফাৎ আমার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা। আদালতের নির্দেশে জামিনও পেয়েছিলাম। এই মামলায় আমার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হবে বলে মনে করি না।’’ আর এ দিন মহিষাদেল অভিজিৎ বলেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভ্যাস এই। প্রচুর মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।’’
উল্লেখ্য, অপরাধের ‘রেকর্ড’ থাকা ব্যক্তিকে প্রার্থী হিসাবে বাছলে রাজনৈতিক দলগুলিকে তার ব্যাখ্যা দিতে হবে বলে এবার ভোট ঘোষণার আগে জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদেরও সংবাদমাধ্যমে অন্তত তিন বার নিজেদের সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করতে হবে। তথ্য আপলোড করা হবে দলগুলির ওয়েবসাইটেও। এছাড়া, ভোটারেরা প্রার্থীদের সম্পর্কে জানতে পারবে ‘কেওয়াইসি অ্যাপ্লিকেশনে’। প্রশাসন সূত্রের খবর, কেওয়াইসি অ্যাপ্লিকেশনে প্রার্থীদের ফৌজদারি মামলা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য আপলোড করা হয়েছে।