উৎসুক: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদযাত্রা দেখতে ঘর থেকে উঁকি। বুধবার, হাওড়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
রাস্তার দু’পাশে দড়ির বেষ্টনীর অন্য পারে প্রায় বাঁধভাঙা আবালবৃদ্ধবনিতা। সামনের রাস্তায় তখন পায়ে সাদা চটি আর নীল পাড়ের সাদা শাড়ি। তাঁর পিছনে ছুটছে জনসমুদ্র। বুধবার দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে শিবপুর বিধানসভা কেন্দ্রের ইছাপুর জলের ট্যাঙ্কের মোড় থেকে উত্তর হাওড়ার সালকিয়া চৌরাস্তা পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদযাত্রার এটাই ছিল মূল চিত্র।
এই পদযাত্রার কারণে গোটা হাওড়া শহর চার ঘণ্টার জন্য কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায়। সাড়ে তিনটে নাগাদ ইছাপুর জলের ট্যাঙ্কের মোড়ে ১০০ ফুটের রাস্তা থেকে পদযাত্রা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুপুর ২টো থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল হাওড়া শহরের ‘লাইফলাইন’ জিটি রোড ধরে দক্ষিণ থেকে উত্তরে যাওয়ার সব রাস্তা। একই সঙ্গে, ব্যারিকেড করে বন্ধ রাখা হয় শিবপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অধীন বাণিজ্যিক এলাকা বলে পরিচিত কদমতলার সমস্ত অলিগলি।
মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের পদযাত্রা ঘিরে কার্যত উৎসবের রূপ নিয়েছিল হাওড়া। আদিবাসী নৃত্য, মাদল, রাস্তায় মেয়েদের নৃত্য পরিবেশনে রঙিন হয়ে উঠেছিল ইছাপুর মোড় থেকে সালকিয়া চৌরাস্তা পর্যন্ত দীর্ঘ তিন কিলোমিটার পথ। এ দিনের পদযাত্রায় কর্মী ও সাধারণ মানুষের এই উৎসাহ দেখে এক জেলা নেতা বলেই ফেললেন, ‘‘এ যেন মরা গাঙে জোয়ার এল।’’
বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ পিলখানার অবনী দত্ত রোড ও পিলখানা মোড়ে পদযাত্রা পৌঁছয়। তখন উপস্থিত কর্মীদের অনুরোধ সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে তাঁদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে পারেননি। তিনি সালকিয়া থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে ফেরার সময়ে ফের পিলখানা মোড়ে গিয়ে কর্মীদের সামনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। এর পরে সামান্য সময়ের জন্য পদযাত্রায় হেঁটে বাড়ির পথে রওনা দেন। জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, দলনেত্রীর এই ভূমিকায় ভোটের মুখে কর্মীরা উৎসাহিত হয়েছেন।
এ দিন ইছাপুর থেকে পদযাত্রা শুরুর আগেই কদমতলা চত্বর, নরসিংহ দত্ত রোড, পঞ্চাননতলা পুলিশি নিরাপত্তায় মুড়ে দেওয়া হয়েছিল। গার্ডরেল দিয়ে আটকে দেওয়া হয় বড় রাস্তার সঙ্গে সংযোগকারী অলিগলি। হুগলিতে জনসভা করে মুখ্যমন্ত্রী ডুমুরজলা হেলিপ্যাডে ফেরেন বিকেল ৪টে নাগাদ। এর পরেই তিনি ইছাপুর থেকে দলীয় নেতৃত্বকে নিয়ে পদযাত্রা শুরু করেন। তবে এ দিন অধিকাংশ পথ একাই হেঁটেছেন দলনেত্রী। দলীয় নেতা-নেত্রী, এমনকি, হাওড়া সদর লোকসভার প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কেও এ দিন কাছে ঘেঁষতে দেননি মুখ্যমন্ত্রী। তবে মাঝেমধ্যে তৃণমূল প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান, মন্ত্রী অরূপ রায়কে পাশে ডেকে কথা বলতে দেখা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে।
এ দিনের এই পদযাত্রার গোটা পথে তৃণমূলনেত্রী কখনও সাধারণ মানুষের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন, কখনও আবার মহিলাদের কাছে টেনে নিয়েছেন। কখনও রাস্তার পাশে অভিভাবকের কোলে থাকা শিশুকে নিজের কোলে টেনে নিতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। মুখ্যমন্ত্রীর দিকে ছুটে আসা উৎসাহী শিশুর খাতায় কিছু একটা লিখে বা এঁকেও দেন তিনি। কখনও দেখা গেল, শিশুর গলায় তাঁকে উত্তরীয় পরিয়ে দিতে। রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার মানুষের দিকে দু’হাত তুলে নমস্কারের ভঙ্গিমায় দেখা গিয়েছে তাঁকে।