সন্দেশখালির স্টিংকাণ্ডে রেখা পাত্র এবং গঙ্গাধর কয়ালের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
সন্দেশখালির স্টিং ভিডিয়োকাণ্ডে বিজেপি নেতা গঙ্গাধর কয়াল এবং বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হল থানায়। স্থানীয় এক ব্যক্তি তাঁদের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানা গিয়েছে।
গত শনিবার সকালে প্রকাশ্যে আসা সন্দেশখালির ৩২ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিয়ো নিয়ে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। ভিডিয়োটির সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি। গোপন ক্যামেরায় তোলা সেই ভিডিয়োয় বিজেপি নেতা গঙ্গাধর দাবি করেছেন, গত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে সন্দেশখালিতে ওঠা ধর্ষণের অভিযোগগুলি ‘সাজানো’ ছিল! মহিলারা টাকার বিনিময়ে শাহজাহান ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের ‘মিথ্যা’ অভিযোগ করেছিলেন বলে দাবি করেছেন সন্দেশখালি-২ ব্লকের বিজেপির মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর। ভিডিয়োয় গঙ্গাধর দাবি করেছেন, সন্দেশখালিতে মহিলাদের ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। মেয়েদের দিয়ে সাজিয়ে অভিযোগ করানো হয়েছে।
গঙ্গাধরকে ওই ভিডিয়োতে এক মহিলার নাম করে বলতে শোনা যায়, তাঁকে আদালতে গোপন জবানবন্দি দিয়ে সাত-আট মাস আগে গণধর্ষণ হয়েছে বলে অভিযোগ করতে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তিনি তা-ই করেছিলেন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর আপ্ত-সহায়কের (পীযূষ) নাম উল্লেখ করে গঙ্গাধরকে ওই ভিডিয়োতে বলতে শোনা যায়, “পীযূষ ন্যাজাটের শুভঙ্কর গিরিকে (বিজেপির সন্দেশখালি বিধানসভার আহ্বায়ক) বিভিন্ন নির্দেশ দিতেন। আর শুভঙ্কর আমাকে বলে দিত, আমি সেই মতো কাজ করতাম।” প্রশ্নোত্তর পর্বের ওই ভিডিয়োর একটি অংশে গঙ্গাধরকে বলতে শোনা যায়, “শুভেন্দুবাবুর নির্দেশে সব হয়েছে। উনি আমাদের বলেন, এখানে তাবড় নেতাদের গ্রেফতার করাতে না পারলে তোমরা দাঁড়াতে পারবে না। আর গ্রেফতার করাতে গেলে ধর্ষণের অভিযোগ করাতে হবে।’’ ভিডিয়োতেই দাবি, রেখাও দু’হাজার টাকার বিনিময়ে ধর্ষণের মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন পুলিশের কাছে। গোপন জবানবন্দিও দিয়েছিলেন।
বিজেপি অবশ্য ভিডিয়োটিকে ‘ভুয়ো’ এবং ‘বিকৃত’ বলে দাবি করেছে। সিবিআই তদন্ত চেয়েছে তারা। ভিডিয়োয় যে বিজেপি নেতার দাবি নিয়ে এত শোরগোল, সেই গঙ্গাধরও ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছেন। শুভেন্দুর দাবি, এই ভিডিয়োর নেপথ্যে তৃণমূলের হাত রয়েছে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেই নিশানা করেছেন বিরোধী দলনেতা। রেখাও সব অভিযোগ অস্বীকার করে ভিডিয়োটিকে ভুয়ো বলে দাবি করেছেন।
স্টিং ভিডিয়ো নিয়ে হইচইয়ের মধ্যে বুধবার আরও একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে। সেই ভিডিয়োটিরও সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি। ভিডিয়োয় এক মহিলা দাবি করেছেন, তাঁকে দিয়েও ধর্ষণের মিথ্যে অভিযোগ করানো হয়েছিল। তাঁকে কিছু না জানিয়ে সাদা কাগজে সই করিয়ে নেওয়া হয়েছিল। ভিডিয়োয় মহিলার দাবি, তাঁকে দিয়ে মিথ্যে মামলা করানোর নেপথ্যে ছিলেন বিজেপির এক স্থানীয় নেত্রী পিয়ালি ওরফে মাম্পি দাস। পুলিশ সূত্রে খবর, তাঁর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও দায়ের হয় পরে। সেটি এফআইআর হিসাবে গ্রহণ করা হয়। সেই মাম্পিকে সমনও পাঠানো হয়েছে পুলিশের তরফে।