পর পর চার দিন। সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবারও মিছিল-সমাবেশের জেরে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ল শহরের একাংশ। গত তিনদিনের মতো এ দিনও ফের মিছিলের ঠেলায় শহরের বিভিন্ন রাস্তায় যানজটের শিকার হলেন সাধারণ মানুষ। লালবাজারের দাবি, বুধবার শহরে কোনও সমাবেশ বা মিছিল না থাকলেও বৃহস্পতিবার ফের মিছিল রয়েছে একটি ট্রেড ইউনিয়নের। এর পর ২০ ডিসেম্বর বিশ্ব হিন্দু পরিষদের জমায়েত রয়েছে শহীদ মিনার ময়দানে। এর মধ্যে ফের কোনও রাজনৈতিক দল মিছিল বা সমাবেশ ডাকলে আরও একটা ভোগান্তি অপেক্ষা করছে বলে আশঙ্কা লালবাজারের।
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন শহিদ মিনারে ছিল উত্তর ২৪ পরগনা সিপিএমের সমাবেশ এবং নবান্ন অভিযান। ওই সমাবেশে যোগ দিতে দুপুর সাড়ে বারোটা থেকে একের পর এক মিছিল আসতে শুরু করে ধর্মতলায়। দুপুরের দিকে মূল মিছিলটি আসে শিয়ালদহ থেকে। সেই সঙ্গে সমাবেশে যোগ দিতে আসা সমর্থকদের গাড়ি ময়দানের বিভিন্ন মাঠ এবং সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউতে পার্কিং করায় সমস্যা আরও বাড়ে। সেখানে জমায়েত হয়ে একে একে মিছিল বেরোতেই আটকে পড়ে যানবাহন।
বিশাল পুলিশ বাহিনী মাঠে নামিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু পুলিশ প্রশাসনকে কার্যত ঠুঁটো করে এ দিন দুর্ভোগের চিত্র ধরা পড়ে মধ্য, দক্ষিণ এবং উত্তর কলকাতার একটা বড় অংশে। ধর্মতলা, এস এন ব্যানার্জি রোড, জওহরলাল নেহেরু রোড, মেয়ো রোড, ড্যাফরিন রোড, সি আর অ্যাভিনিউ সহ শহরের প্রধান রাস্তাগুলোই দিনভর অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। অন্য দিকে, একই ছবি গেখা গিয়েছে স্ট্র্যান্ড রোড, পার্ক স্ট্রিট, ডি এল খান রোড এবং খিদিরপুর রোডেও।
ধর্মতলার কাছে ট্যাক্সির ভিতরে বসেছিলেন বছর চল্লিশের অরুণ দাস। প্রায় তিরিশ মিনিট ধরে একই জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল ট্যাক্সিটি। জহরলাল নেহরু রোডের পার্ক স্ট্রিট থেকে ওই স্থানে পৌছতে তাঁর সময় লেগেছে প্রায় আধঘন্টা। এক বাসযাত্রী অতনু মণ্ডলেরও একই অভিজ্ঞতা। হাওড়া থেকে ট্রেন ধরার কথা ছিল তাঁর। তিনি বলেন, “অনেক আগে বেরিয়েও পৌঁছতে পারলাম না।”
সমাবেশ শেষে বিকেল সওয়া চারটে নাগাদ নবান্ন অভিযান শুরু করেন সিপিএমের কর্মীরা । ডাফরিন রোডে সে সময় প্রচুর পুলিশ ব্যারিকেড করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সিপিএমের কর্মীরা মেয়ো রোড পেরিয়ে ডাফরিন রোডের দিকে এগোতে গেলেই পুলিশের সঙ্গে প্রবল ধস্তাধস্তি হয়। তার পরেই তাঁরা সেখানে অবস্থানে বসে পড়েন। কর্মী-সমর্থকদের কাছে শান্তি বজায় রাখার নির্দেশ দেন সিপিএমের শীর্ষ নেতারা। এর পর কয়েকজন নেতা ডেপুটেশন দিয়ে ফিরে এসে নিজেদের বক্তব্য রেখে সকলকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। সমাবেশে শেষে কর্মী সমর্থকদের গাড়িগুলি ফেরা শুরু করতেই ফের একই হাল হয় শহরের রাস্তাগুলির। ফের থমকে যায় যানবাহন। পুরো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সন্ধ্যা পেরিয়ে যায়।
লালবাজার সূত্রের খবর, এ দিন মিছিলে প্রায় আটশো গাড়ি এসেছিল। যদিও সিপিএম কর্মীদের দাবি, সংখ্যাটা হাজার দুয়েকের কাছাকাছি। সমাবেশে প্রায় তিন লক্ষ লোকের আসার কথা জানানো হলেও ২০ থেকে ২৫ হাজার লোক এ দিন এসেছিলেন বলে জানা গিয়েছে।