বেঙ্কাইয়া নায়ডুর সঙ্গে অরবিন্দ কেজরীবাল ও মণীশ সিসৌদিয়া। —পিটিআই।
রাজনীতি আর প্রশাসন যে দু’টি আলাদা মেরুর জিনিস, শাহি দিল্লির নিরঙ্কুশ জনাদেশ পেয়ে সে বার্তাই প্রতি পদক্ষেপে বুঝিয়ে দিচ্ছেন আম আদমি পার্টি-র (আপ) প্রধান অরবিন্দ কেজরীবাল। যে বিজেপি-কে রাজধানী থেকে ঝাড়ু-ঝড়ে উড়িয়ে কার্যত দিল্লির বাইরে ফেলে দিয়েছে আপ, সেই দলেরই প্রধান মুখ নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৃহস্পতিবার দেখা করবেন কেজরীবাল। তবে রাজনীতির কারবারি মোদী নয়, আপ-প্রধান দেখা করতে যাবেন দেশের প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে। বুধবার আপ-এর তরফে বলা হয়েছে, ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টায় মোদী-কেজরীবাল সাক্ষাৎকার। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি রামলীলা ময়দানে টিম-কেজরীবালের শপথ অনুষ্ঠানেও মোদীকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
দিল্লির জনাদেশ পাওয়ার পর থেকেই তৎপর হয়ে উঠেছেন কেজরীবাল। এ দিন তিনি কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুর সঙ্গে দেখা করেন। তা সঙ্গে গিয়েছিলেন আপ-নেতা মণীশ সিসৌদিয়া। দিল্লির উন্নয়নের পাশাপাশি কেন্দ্রশাসিত এই অঞ্চলকে কী ভাবে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া যায়, সেই বিষয়ে দু’জনের কথা হয়। রামলীলা ময়দানের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানান দিল্লির ভাবি মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু, পূর্ব নির্ধারিত এক অনুষ্ঠানে ওই দিন কলকাতায় থাকার কথা বেঙ্কাইয়ার। তাই তিনি অরবিন্দকে তাঁর না থাকতে পারার বিষয়টি জানিয়ে দেন। শুধু বেঙ্কাইয়া নন, এ দিন দুপুরে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গেও দেখা করবেন কেজরীবাল।
বেঙ্কাইয়ার সঙ্গে মূলত চারটি বিষয়ে কথা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আপ নেতা মণীশ সিসৌদিয়া। দিল্লিতে বসবাসকারী গরিব মানুষদের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সাহায্য চাওয়ার পাশাপাশি দিল্লির অবৈধ কলোনিগুলি নিয়েও দু’পক্ষের কথা হয়। সম্প্রতি কেন্দ্র এই বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই সিদ্ধান্ত কার্যকরী করতে গেলে দিল্লি উন্নয়ন পর্ষদ, দিল্লি নগর নিগমের পাশাপাশি কেন্দ্রের সাহায্যও প্রয়োজন। এ ছাড়া দিল্লিতে আরও স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল এবং পার্কিং গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে আপ-এর। কিন্তু এ সব করতে গেলে প্রয়োজন প্রচুর জমির। এ দিন সে বিষয়েও বেঙ্কাইয়ার সঙ্গে কথা হয়েছে আপ নেতৃত্বের। মণীশ জানিয়েছেন, এই তিনটি বিষয়ের পাশাপাশি দিল্লিকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার ব্যাপারেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে দরবার করা হয়েছে। মন্ত্রী তাঁদের সব বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন বলে ওই আপ নেতার দাবি।
বেঙ্কাইয়া নায়ডু এই জয়ের জন্য অরবিন্দ কেজরীবাল-সহ তাঁর দলকে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি তাঁদের কাঁধে যে দিল্লির মানুষ বিপুল দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছেন, সে কথা মনে করিয়ে দেন। তিনি আরও বলেন, “উন্নয়নের প্রশ্নে কোনও রাজনীতি নয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা একটা টিম হিসেবে কাজ করি। নিয়ম মেনেই সমস্ত রকম সাহায্য করা হবে।”
এর আগে রাজধানীর নির্বাচনী ফল প্রকাশ্যে আসার পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দিল্লির উপ-রাজ্যপাল নাজিব জঙ্গের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। তাঁকে তখনই অরবিন্দ জানিয়ে দেন আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি রামলীলা ময়দানে আপ-এর মন্ত্রিসভা শপথ নেবে। ২০১৩-র ২৮ ডিসেম্বর এই রামলীলা ময়দানেই শপথ নিয়েছিলেন তিনি। ২৮ আসন পাওয়া আপ সে বার বাইরে থেকে কংগ্রেসের সমর্থন পেয়েই সরকার গঠন করেছিল। কিন্তু, তার ৪৯ দিনের মাথায় পদত্যাগ করেন মুখ্যমন্ত্রী কেজরীবাল। ঘটনাচক্রে সেই দিনটা ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি। এ বার পদত্যাগের বর্ষপূর্তির দিনই ফের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন তিনি।