বিক্ষোভরত কর্মীরা। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিল্প কমিটির বৈঠক শেষ হওয়ার পরে ২৪ ঘণ্টাও কাটল না। বন্ধ হয়ে গেল টিটাগড় ওয়াগন।
নিয়মমতো শ্রমিকদের আর্থিক সুবিধা না দেওয়ার প্রতিবাদ জানানোয় শ্রমিক-মালিক টানাপড়েনের জেরে আচমকাই বন্ধ হয়ে গেল টিটাগড় ওয়াগন। মূলত ভারতীয় রেলকে ওয়াগন সরবরাহ করত এই সংস্থা। শুক্রবার মধ্য রাতে উত্তর ২৪ পরগনার টিটাগড়ে ওই কারখানার গেটে কর্তৃপক্ষ ‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক’-এর নোটিস ঝুলিয়ে দেন। এর ফলে পুজোর মুখে অনিশ্চিত হয়ে পড়ল কারখানার প্রায় সাতশো কর্মীর ভবিষ্যত্। যাঁদের মধ্যে মাত্র ২৪০ জন স্থায়ী কর্মী। বাকিরা সকলেই অস্থায়ী কর্মী হিসেবে ওই কারখানায় কাজ করতেন। কারখানা কর্তৃপক্ষ যদিও জানিয়েছেন, রেলের বরাত না থাকায় উত্পাদন কার্যত হচ্ছে না। লোকসান ঠেকাতেই সাময়িক ভাবে কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকদের অভিযোগ, তাঁদের সঙ্গে কথা না বলে প্রায় রাতারাতি কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। মাস দেড়েক আগে কল্যাণীতে রেলের যন্ত্রাংশ তৈরির একটি কারখানা সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। সেখানেও মালিকপক্ষ মূলত রেলের বরাত না পাওয়াকেই কারখানা বন্ধের কারণ হিসেবে জানিয়েছিলেন।
১৯৯৭-তে জে পি চৌধুরী টিটাগড়ের এই কারখানা তৈরি করেন। যদিও এই কারখানাটি বহু পুরনো। আগে এখানেই টিটাগড় পেপার মিল ছিল। সে মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরই গড়ে ওঠে টিটাগড় ওয়াগন। কর্মীদের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরেই নিয়ম মোতাবেক তাঁদের আর্থিক সুযোগসুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে তাঁরা কর্তৃপক্ষের কাছে দরবার করেছেন। তবে তা কখনও আন্দোলনের চেহারা নেয়নি। কিন্তু শ্রমিকদের বক্তব্য, তাঁদের সে কথা কানে তুলতেন না মালিকপক্ষ। তাঁরা জানিয়েছেন, প্রত্যেক বারই রেলের বরাত এবং উত্পাদনের দোহাই দিয়ে মূল সমস্যাটিকে পাশ কাটিয়ে যেতেন তাঁরা। সম্প্রতি এই সংস্থা প্রায় ১৩৬টি ওয়াগন তৈরির বরাত পায় বলে শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি। তার মধ্যে ৩২টি ওয়াগন ইতিমধ্যেই রেলকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও দেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় ওয়াগন মেরামতির বরাতও পেয়েছে এই সংস্থা। তার মধ্যে নোয়াপাড়ায় মেট্রোর রেক মেরামতিও রয়েছে।
শ্রমিকদের অভিযোগ, এই সমস্ত জায়গায় মেরামতির কাজে যাওয়া হোক বা ওয়াগন সরবরাহ করতে যাওয়া কখনওই আলাদা করে শ্রমিকদের টাকাপয়সা দেওয়া হয় না। এমনকী, তাঁরা অস্থায়ী কর্মী, এই অজুহাতে ওই শ্রমিকদের নিরাপত্তার দায়ও নেয় না টিটাগড় ওয়াগন। বাইরে কাজ করতে গেলে দুর্ঘটনাজনিত বিমা তো দূরে থাক, ওই কর্মীদের কোনও স্বাস্থ্য বিমাও কার্যকরী থাকে না। এক দফতরের কর্মীকে দিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে অন্য দফতরের কাজও করানো হচ্ছিল বলে শ্রমিকদের অভিযোগ। এ সব নিয়ে সপ্তাহখানেক আগে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে চান আইএনটিটিইউসি এবং সিটু-র নেতৃবৃন্দ। কারখানা কর্তৃপক্ষ আলোচনায় বসবেন বলে শুক্রবার ওই নেতাদের আশ্বাস দেন। কিন্তু আচমকা ওই রাতেই কারখানার আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি ধর্মেন্দ্র যাদব এবং সিটু-র সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত মাঝি-সহ মোট ৯ জনকে কাজ থেকে বরখাস্ত করেন কর্তৃপক্ষ। তাঁদের মধ্যে আইএনটিটিইউসি-র পাঁচ এবং সিটু-র চার জন ছিলেন।
কিন্তু কেন ওই শ্রমিকনেতা-সহ অন্যদের কাজ থেকে বরখাস্ত করা হল?
কারখানার ম্যানেজিং ডিরেক্টর উমেশ চৌধুরী বলেন, “মাস ছ’য়েক ধরে কারখানা লোকসানে চলছে। রেল থেকে যে বরাত পাওয়া যেত, তা-ও ইদানীং প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ছাঁটাই ছাড়া আমাদের হাতে অন্য কোনও রাস্তা ছিল না।” এ দিন সকালে শ্রমিকরা কারখানার গেটে ওই নোটিস ঝুলতে দেখেন। দুই সংগঠনের পতাকা নিয়েই গেটের সামনে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ শুরু হয়। গেটের সামনে পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে।
রাজ্যের ডেপুটি শ্রম কমিশনার আশিস সরকারকে দুই সংগঠনের পক্ষ থেকে বিষয়টি জানানো হয়। তিনি বলেন, “আমার সঙ্গে শ্রমিক নেতাদের কথা হয়েছে। কারখানা যাতে দ্রুত খোলার ব্যবস্থা করা যায় সে বিষয়ে সোমবারই মালিক ও শ্রমিকপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসা হবে।”