রাজ্যসভায় বিক্ষোভে বিরোধী সাংসদেরা। এমন দৃশ্যই দেখা গেল সোমবার সারা দিন। ছবি: পিটিআই।
ধর্মান্তরণ নিয়ে ডান-বাম নির্বিশেষে বিরোধীদের বিক্ষোভে ফের উত্তাল হল সংসদ। গত সপ্তাহের মতো সোমবারও ধর্মান্তরণ নিয়ে সংসদের দুই কক্ষে বিরোধীদের তোপের মুখে বিজেপি সরকার। এর ফলে মঙ্গলবার পর্যন্ত স্থগিত রাখতে হল রাজ্যসভার অধিবেশন। রাজ্যসভার পাশাপাশি লোকসভাতেও বিক্ষোভের আঁচ কমেনি। বিক্ষোভের ফলে এ দিন বিকেল ৪টে পর্যন্ত লোকসভার অধিবেশন স্থগিত রাখতে হয়। সপ্তাহের প্রথম দিন অধিবেশন শুরু হওয়ামাত্রই লোকসভায় স্লোগান দিতে থাকেন বিরোধী দলের সাংসদেরা। এ বিষয়ে বিতর্কের দাবি জানিয়ে বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেন। একই দাবিতে মুখর হয় রাজ্যসভাও।
এ দিন সকালে রাজ্যসভার অধিবেশনের শুরুতেই চেয়ারম্যানের সামনে এসে প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন বিরোধীরা। সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে তাল মেলান কংগ্রেস-তৃণমূল-সহ বামেরাও। এই একটি বিষয়ে একই সুরে বিক্ষোভ দেখান সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি থেকে তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন। ধর্মান্তরণ নিয়ে রাজ্যসভায় এসে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতির দাবি জানান ডেরেকও। মোদীকে লক্ষ্য করে তাঁর কটাক্ষ, “এখানে আসার জন্য ৫৬ ইঞ্চির ছাতি নয়, চার ইঞ্চির হৃদয় থাকা দরকার।” কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা বলেন, “বিরোধীরা নয়, সরকার পক্ষই বিতর্ক থেকে পিছু হটছে। এর ফলে সভায় অচলাবস্থা তৈরি হচ্ছে।” তুমুল হইহট্টগোলের মধ্যে এ দিন দুপুর ৩টে পর্যন্ত সভার অধিবেশন স্থগিত করেন ডেপুটি চেয়ারম্যান পি জে কুরিয়েন। কিন্তু অধিবেশন শুরু হলে ফের বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বিরোধী সাংসদেরা। ফলে আগামিকাল পর্যন্ত অধিবেশন স্থগিত করা হয়।এ দিন রাজ্যসভায় বিরোধীদের অভিযোগ, অন্যান্য নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ না করে কেবলমাত্র ‘ঘর ওয়াপসি’ কর্মসূচিতেই আগ্রহ বিজেপি সরকারের। সমাজবাদী পার্টির নেতা নরেশ আগ্রবাল বলেন, এ বিষয়ে বিতর্কের জন্য রাজ্যসভায় নোটিস দিয়েছেন তিনি। কিন্তু কোনও রকম বিতর্কের দাবি উড়িয়ে বিজেপি-র অরুণ জেটলি বলেন, আগেই এ বিষয়ে নোটিস পড়ায় ফের নতুন করে তা দেওয়া যায় না।
রাজ্যসভার মতো লোকসভাতেও প্রায় একই ছবি চোখে পড়ে। বিরোধীদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে কেন্দ্রীয় সংসদবিষয়ক মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নাইডুর দাবি, এ বিষয়ে তাঁর দল বা সরকার কেউই জড়িত নয়। ধর্মান্তরণ নিয়ে আইন ভাঙলে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলেও দাবি করেন তিনি। মন্ত্রীর বক্তব্য, “কেন্দ্রীয় সরকার এ বিষয়ে জড়িত নয়, এমনকী, ধর্মান্তরণ বা পুনর্ধর্মান্তরণও সমর্থন করে না সরকার। যদি বিষয়টিতে রাজনৈতিক রং দিতে হয় তবে তা সংসদের বাইরে করা উচিত।” বিরোধীদের উদ্দেশে তাঁর মন্তব্য, “এ ভাবে অভিযোগ করা যায় না।” সম্প্রতি কেরলে ধর্মান্তরণের ঘটনায় তাঁর কটাক্ষ, “কংগ্রেস সরকার সেখানে ব্যবস্থা নেয়নি কেন?” তিনি বলেন, “ধর্মান্তরণ রুখতে রাজ্য সরকারকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।”
গত ৮ ডিসেম্বর উত্তরপ্রদেশের আগরায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের একটি অনুষ্ঠানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শতাধিক ব্যক্তিকে ধর্মান্তরিত করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। পাশাপাশি মোদীর নিজের রাজ্য গুজরাতের বলসাডেতেও ধর্মান্তরণ করা হয়। এর পর প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে বিজেপি সরকার। কিন্তু বিরোধীদের সমালোচনার পরোয়া না করে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত বলেন, তাঁরা শক্তিশালী হিন্দু সমাজ গঠন করতে চান।