ছত্তীসগঢ়ের সুকমায় ফের মাওবাদী হামলায় নিহত হলেন সিআরপিএফ-এর ১৩ জওয়ান। নিহতদের মধ্যে এক জন ডেপুটি কম্যান্ড্যান্ট ও অ্যাসিট্যান্ট কম্যান্ড্যান্ট রয়েছেন। জখম হয়েছেন আরও ১৪ জন জওয়ান। পুলিশ সূত্রে খবর, সোমবার দুপুর ৩টে নাগাদ সুকমার চিন্তাগুফা থেকে দশ কিলোমিটার দূরে কাসালনারে টহল দিচ্ছিলেন সিআরপিএফ ও কোবরা জওয়ানরা। সে সময় গ্রামবাসীদের ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে জওয়ানদের উপর অতর্কিতে হামলা চালায় মাওবাদীরা। পাল্টা জবাব দেন জওয়ানরা। গত দু’মাস ধরে এই এলাকায় মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে যৌথবাহিনী।
হামলার নিন্দা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি জানিয়েছেন, এই নৃশংস ও অমানবিক কাজের নিন্দায় কোনও শব্দই উপযুক্ত নয়। এরই পাশাপাশি ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে গোটা ঘটনার কথা জানিয়েছেন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি তাঁর দিল্লি যাত্রাও স্থগিত রাখেন। ছত্তীসগঢ় মন্ত্রালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার গভীর রাতে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে মন্ত্রিসভার এক জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। এখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের উচ্চপদস্থ কর্তারাও থাকতে পারেন।
নয়াদিল্লি থেকে সিআরপিএফের আইজি (অপারেশন) জুলফিকার হাসান আনন্দবাজারকে জানান, গত ১৬ নভেম্বর থেকে ওখানে মাওবাদীদের সন্ধানে তল্লাশি অভিযান চলছে। এ দিনের ঘটনাই প্রথম নয়। প্রত্যন্ত এই এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালানোর সময় গত ২১ নভেম্বর মাওবাদীদের সঙ্গে সিআরপিএফের গুলির লড়াই চলে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাঁচ জওয়ান বুলেটের ঘায়ে জখম হন। কয়েক জন মাওবাদীও ওই সংঘর্ষে হতাহত হয়েছিল বলে তাঁর দাবি। এ দিনের সংঘর্ষে নিহত ও আহত সিআরপিএফ জওয়ানদের নিয়ে জঙ্গলের ভিতর থেকে পায়ে হেঁটে উদ্ধার করতে হয়। কারণ, ওই জায়গায় হেলিকপ্টার নামানোর জায়গা নেই। এ দিন মাওবাদীরা মানব-ঢাল ব্যবহার করায় সিআরপিএফ-কে খুব সাবধানে প্রত্যাঘাত করতে হয়। না হলে নিরীহ গ্রামবাসীরা মারা যেতে পারতেন। গ্রামবাসীদের সামনে রেখে মাওবাদীরা একে-৪৭ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি চালাতে থাকে। ফলে এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। মঙ্গলবার সিআরপিএফের একটি উচ্চপদস্থ দল সুকমা পৌঁছবে।
ছত্তীসগঢ় পুলিশের মাওবাদী দমন অভিযানের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল আর কে ভিজ রাতে আনন্দবাজারকে জানান, এ দিন দুপুর ৩টে নাগাদ সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে। সিআরপিএফের সঙ্গে ছিল কোবরা বাহিনী এবং সুকমা জেলা পুলিশের একটি দল। মঙ্গলবার আরও জোরদার হবে তল্লাশি অভিযান। ভিজ জানিয়েছেন, ২০০০ সালে মধ্যপ্রদেশ ভেঙে ছত্তীসগঢ় গঠনের পর থেকে এ পর্যন্ত এক হাজারেরও বেশি নিরাপত্তা কর্মী প্রাণ দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ছত্তীসগঢ় পুলিশের ৫৯৫ জন এবং কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ৪০৫ জন জওয়ান আছেন। রাজ্য পুলিশের ১৯৮ জন পদস্থ অফিসারও মাওবাদীদের হামলায় নিহত হয়েছেন। ২০১০ সালে সুকমার টাড়মেটলায় মাওবাদীদের হাতে সিআরপিএফের ৭৫ জন এবং রাজ্য পুলিশের এক কর্মী নিহত হন। পৃথক ছত্তীসগঢ় রাজ্য গঠনের পরে নিরাপত্তা বাহিনীর উপরে এটাই মাওবাদীদের সব থেকে বড় আঘাত।