বিশিষ্টদের মিছিল। মঙ্গলবার সুদীপ আচার্য্যের তোলা ছবি।
তৃণমূলের পাল্টা দিতে পথে নামলেন বিজেপি-র বিশিষ্ট জনেরা!
বাংলার সংস্কৃতির উপর আঘাত এবং রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রতিবাদে গত শুক্রবার নন্দন থেকে অ্যাকাডেমি পর্যন্ত মিছিল করেন তৃণমূলপন্থী বিশিষ্ট জনেরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বিজেপি-র বিরুদ্ধে পথে নেমেছিলেন তাঁরা। বিজেপি যদিও কটাক্ষ করেছিল, ওই মিছিল আসলে ‘চুরির দাবিতে চোরেদের মিছিল’। আর তারই প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিশিষ্ট ও সাধারণ মানুষকে নিয়ে তারা চুরির সংস্কৃতির হাত থেকে রাজ্যকে রক্ষা করা এবং চোর ধরার নৈতিক অধিকারের দাবিতে মিছিল করে। এ দিনের মিছিলে অবশ্য কোনও রাজনৈতিক ঝান্ডা ছিল না। ‘বঙ্গীয় বুদ্ধিজীবী মঞ্চ’ নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠনকে ময়দানে নামিয়ে এই মিছিলের আয়োজন করে বিজেপি। বস্তুত, সোমবারই ধর্মতলার সভা থেকে এই মঞ্চের কথা ঘোষণা করেছিলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। এ দিন সেই মঞ্চের নাম এবং নানা স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা গিয়েছে মিছিলের মুখেদের হাতে হাতে।
এ দিনের মিছিল সংগঠন করার জন্য সাত জনের কমিটিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন রাহুলবাবু। কমিটিতে ছিলেন জাদুকর পি সি সরকার, অভিনেতা জর্জ বেকার, নিমু ভৌমিক, জয় বন্দ্যোপাধ্যায়, সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রাক্তন পুলিশকর্তা আর কে মহান্তি এবং শিক্ষিকা শর্মিষ্ঠা কর পুরকায়স্থ। ওই সাত জন ছাড়াও প্রাক্তন গোয়েন্দাকর্তা সুজিত ঘোষ, সাংবাদিক এম জে আকবর, ফুটবলার ষষ্ঠী দুলে, স্বপন সেনগুপ্ত, অভিনেতা কৌশিক চক্রবর্তী, জর্জ বেকারের স্ত্রী অর্পিতা বেকার প্রমুখ মিছিলে ছিলেন। পি সি সরকারও সপরিবার মিছিলে যোগ দেন। বামনগাছিতে দুষ্কৃতীদের হাতে নিহত সৌরভ চৌধুরীর বাবা শরৎ চৌধুরী এ দিনের মিছিলে হাঁটেন। মিছিলের গায়ে রাজনৈতিক রঙের ছোঁয়া এড়াতে বিজেপি-র রাজ্য পদাধিকারীদের কেউ এ দিনের মিছিলে যাননি। পরিচিত রাজনৈতিক মুখ বলতে প্রদীপ ঘোষ এবং জয়প্রকাশ মজুমদার মিছিলে হেঁটেছেন।
ধর্মতলায় ম্যাটাডর-মঞ্চ থেকে এ দিন আকবর বলেন, “৩৪ বছর আমরা এখানে লাল সেলাম দেখলাম। এখন সারদা সেলাম দেখছি। কিন্তু বাংলার মানুষ চাকরি চায়। তার জন্য এখন এখানে ফের পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে।” আর মাত্র ১৮ মাস পরে এ রাজ্যে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহের সরকার হবে বলে আশা প্রকাশ করেন আকবর। প্রাক্তন পুলিশকর্তা মহান্তি জানান, এ দিনের মিছিলে লোক সমাগম দেখে তিনি খুশি। তাঁর কথায়, “গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে যে নৈরাজ্য তৈরির চেষ্টা চলছে, তার প্রতিবাদে অনেক মানুষ সামিল হয়েছেন।” অভিনেতা জয় জানান, সুস্থ বাংলা, সুস্থ সংস্কৃতি এবং বাকস্বাধীনতার লক্ষ্যে তাঁদের এই মিছিল। জয়ের কথায়, “আমরা কেবল আমাদের দলের স্বাধীনতা চাই না। সব মানুষ স্বাধীন ভাবে যাতে মত প্রকাশ করতে এবং ভোট দিতে পারেন, আমরা সেটাই চাই।” পি সি সরকার বলেন, “আমরা এখানে ম্যাজিকের সরকার চাই। সেই সরকার আসবে। তখন এই সরকার ভ্যানিশ হয়ে যাবে।”
তৃণমূল এবং বিজেপি-র বিশিষ্টজনেদের মিছিল সম্পর্কে কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা এবং বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার অবশ্য কটাক্ষ, “বুদ্ধিজীবীদের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় মিছিল সত্যিকারের বুদ্ধিজীবীদের সঙ্কটে ফেলে দিচ্ছে।”
অন্য দিকে, এ দিন ফের এক বার বিজেপিতে যোগ দিলেন গায়ক কুমার শানু। এর আগে ২০০৪-এ তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তখন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি ছিলেন বেঙ্কাইয়া নাইডু। কিন্তু গানের প্রতি আরও মনোযোগ দিতে পরে তিনি দল ছেড়ে দিয়েছিলেন। এ দিন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের উপস্থিতিতে শানু বলেন, “মোদীজির নেতৃত্বে অনেক ভাল কাজ করার সুযোগ আছে। তাই আমি ফের বিজেপিতে যোগ দিলাম।”