চলছে গণনার কাজ। ছবি: এএফপি।
প্রাতরাশে সুখবরই পেলেন ডেভিড ক্যামেরন। ব্রিটেনের অঙ্গ হিসেবেই থাকল স্কটল্যান্ড। তবে লড়াই হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি।
গণভোটের এই রায়ে স্বভাবতই খুশি ক্যামেরন। ফল প্রকাশ্যে আসার পর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী জানান, স্কটল্যান্ডের মানুষের এই মতামতকে স্বাগত জানাই। ব্রিটেনের অখণ্ডতা রক্ষা করার জন্য স্কটল্যান্ডের সকলকে ধন্যবাদ।
ব্রিটেন থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হবে কি না এই প্রশ্নে স্কটল্যান্ডে বৃহস্পতিবার গণভোটের আয়োজন করা হয়। সাড়াও মেলে বিপুল। প্রায় ৮৪ শতাংশ ভোটার এই নির্বাচনে মতামত প্রকাশ করেন। এ নিয়ে উত্তেজনা, উন্মাদনা ছিল টানটান। প্রাক নির্বাচনী সমীক্ষায় দেখা যায় স্বাধীনতার বিপক্ষেই মত বেশি। তবে স্বাধীনতার পক্ষে সমর্থনও কম নয়। ‘হ্যাঁ’-এর পক্ষে ভোট পড়েছে ১৬ লক্ষ ১৭ হাজার ৯৮৯টি। কিন্তু ২০ লক্ষ এক হাজার ৯২৬টি ভোট পেয়ে এই নির্বাচন জিতল ‘না’-পন্থীরাই। এর মধ্যে বাতিল হয়েছে ৩৪২৯টি ভোট।
নির্বিঘ্নে ভোট শেষ হওয়ার পর ৩২টি কেন্দ্রে গণনা শুরু হয়। একের পর এক কেন্দ্রের ফল আসতে থাকে। ফলাফলে দেখা যায় ‘হ্যাঁ’-এর পক্ষে ভোট পড়েছে ৪৪.৫৮ শতাংশ। সেখানে ‘না’-এর পক্ষে ভোট পড়েছে ৫৫.৪২ শতাংশ। এই ফল অনেকটাই প্রাক নির্বাচনী সমীক্ষার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। ৩২টি কেন্দ্রের মধ্যে শুধু ডান্ডি সিটি, গ্লাসগো, ওয়েস্ট ডানবারটোনশায়ার, নর্থ লানার্কশায়ার-এই চারটি কেন্দ্রই বেশি ভোট পেয়েছে ‘হ্যাঁ’-পন্থীরা।
আপাত নিরীহ এই নির্বাচনের ফলাফলে ব্রিটেন তথা বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব পড়েছে। তাই ইংল্যান্ডের টোরি, লেবার, লিবার্যাল ডেমোক্র্যাট— তিনটি প্রধান দলই ‘না’ ভোটের পক্ষে মত দেয়, প্রচারও করে। স্কটল্যান্ডকে আরও বেশি ক্ষমতা ও স্বায়ত্বশাসন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। আসরে নামেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনও। শুধু ব্রিটেনই নয়, স্কটল্যান্ডের ব্রিটেনে থাকার পক্ষে মত দেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিনো রাজোয়াও। ‘হ্যাঁ’ ভোট ইউরোপ জুড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলিকে মাথাচাড়া দিতে সুবিধা করবে বলে তাঁদের আশঙ্কা ছিল। পাশাপাশি শঙ্কিত ছিল ভারত। কারণ, এর ফলে কাশ্মীরে গণভোটের বহু পুরনো দাবি আবার জোরদার হতে পারে। তাই বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও স্কটল্যান্ডকে ব্রিটেনের থাকার পক্ষেই মত দিয়েছিলেন।
স্কটল্যান্ড আলাদা হলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ার আশঙ্কা ছিল ব্রিটিশ অর্থনীতির উপর। স্কটল্যান্ড আলাদা বলে ব্রিটিশ অর্থনীতিতে বিপুল পরিবর্তন আসতে পারত। অনেকেই এর ফলে মন্দার আশঙ্কা করছিলেন। ফলে বেশ কিছু দিন ধরেই বিশ্ব বাজারে পাউন্ডের দাম কমছিল। আজকের ফল আসার পরেই ডলার ও ইউরোর তুলনায় পাউন্ডের দাম বাড়তে থাকে। এ দিন এক সময়ে পাউন্ডের দাম ইউরোর তুলনায় দু’বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তর ছুঁয়ে ফেলে। আর ডলারের তুলনায় পাউন্ড দু’সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তর ছুঁয়েছে এ দিন। জনগণের এই রায়ের পরে ‘রয়্যাল ব্যাঙ্ক অফ স্কটল্যান্ড’ তাদের মূল অফিস স্কটল্যান্ডেই রাখার কথা ঘোষণা করেছে। এর আগে স্কটল্যান্ড ব্রিটেন থেকে বেরিয়ে গেলে তাদের মূল অফিস সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিল তারা।
কিছুটা হলেও চাপমুক্ত হলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। স্কটল্যান্ড বেরিয়ে গেলে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যতও প্রশ্নের মুখে পড়ে যেত। এ দিন সকালে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে তিনি বলেন, ‘‘২০১১-য় স্কটল্যান্ডে স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি) ক্ষমতায় আসার পরে গণভোটের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। আমরা চাইলে এই ভোট বন্ধ করতে বা এড়িয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু আমরা গণতান্ত্রিক, তাই এসএনপি-র সেই প্রতিশ্রুতি মতোই ভোটে বাধা দিইনি।’’ তিনি জানান, ভোটের আগে স্কটল্যান্ডকে আরও স্বায়ত্বশাসন দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন তার জন্য কাজ শুরু হবে। লর্ড স্মিথ অফ কেলভিন স্কটল্যান্ডের পার্লামেন্টকে কর, ব্যয় ও কল্যাণমূলক কাজে আরও স্বায়ত্বশাসন দেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। আগামী বছরের জানুয়ারিতে এ বিষয়ে আইনের খসড়া তৈরি হয়ে যাবে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।
‘হ্যাঁ’-পন্থীদের নেতা স্কটিশ পার্লামেন্টের ফার্স্ট মিনিস্টার অ্যালেক্স সালমন্ড জানান, তিনি এই ফল মেনে নিচ্ছেন। পাশাপাশি প্রতিশ্রুতি মতো এ বার স্কটল্যান্ডের হাতে আরও ক্ষমতা তুলে দেওয়া হবে বলে তিনি আশাপ্রকাশ করেন। পরে তিনি ফার্স্ট মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করার কথা ঘোষণা করেন।
ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং উত্তর আয়ারল্যান্ড নিয়ে ব্রিটেন। এর মধ্যে স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং উত্তর আয়ারল্যান্ড-এর নিজস্ব পার্লামেন্ট রয়েছে। ভোটের আগে স্কটল্যান্ডের পার্লামেন্টকে কর ও কল্যাণমূলক খাতে খরচের আরও স্বাধীনতা দেওয়ার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন। এ দিন সকালে স্কটল্যান্ডের পাশাপাশি ওয়েলস-এও এই স্বাধীনতা কতটা দেওয়া সম্ভব তাও ভাবা হচ্ছে বলে তিনি জানান। উত্তর আয়ারল্যান্ডের পার্লামেন্টেকে আরও সক্রিয় করার বিষয়টি নিয়েও ভাবনা হচ্ছে। পাশাপাশি এ বার ইংল্যান্ডের হাতেও কর ও ব্যয়ের বিষয়টি তুলে দেওয়া যায় কি না তাও খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছেন ক্যামেরন।
কাউন্সিল
‘হ্যাঁ’
‘না’
অ্যাবেরডিন সিটি
৪১.৩৯
৫৮.৬১
অ্যাবেরডিনশায়ার
৩৯.৬৪
৬০.৩৬
অ্যানগুস
৪৩.৬৮
৫৬.৩২
আরগিল এবং বুতে
৪১.৪৮
৫৮.৫২
ক্ল্যাকম্যানানশায়ার
৪৬.২০
৫৩.৮০
কমহারলে নান ইলেয়ান সিয়ার
৪৬.৫৮
৫৩.৪২
ডামফ্রিয়েস অ্যান্ড গ্যালোয়ে
৩৪.৩৩
৬৫.৬৭
ডান্ডি সিটি
৫৭.৩৫
৪২.৬৫
ইস্ট আয়রশায়ার
৪৭.২২
৫২.৭৮
ইস্ট ডানবারটোনশায়ার
৩৮.৮০
৬১.২০
ইস্ট লোথিয়ান
৩৮.২৮
৬১.৭২
ইস্ট রেনফ্রেশায়ার
৩৬.৮১
৬৩.১৯
এডিনবরা
৩৮.৯০
৬১.১০
ফালকির্ক
৪৬.৫৩
৫৩.৪৭
ফিফে
৪৪.৯৫
৫৫.০৫
গ্লাসগো
৫৩.৪৯
৪৬.৫১
হাইল্যান্ড
৪৭.০৮
৫২.৯২
ইনভেরক্লাইড
৪৯.৯২
৫০.০৮
মিডলোথিয়ান
৪৩.৭০
৫৬.৩০
মোরে
৪২.৪৪
৫৭.৫৬
নর্থ আয়রশায়ার
৪৮.৯৯
৫১.০১
নর্থ লানার্কশায়ার
৫১.০৭
৪৮.৯৩
আর্কনেই আইল্যান্ড
৩২.৮০
৬৭.২০
পার্থ এবং কিনরোস
৩৯.৮১
৬০.১৯
রেনফ্রেশায়ার
৪৭.১৯
৫২.৮১
স্কটিশ বর্ডারস
৩৩.৪৪
৬৬.৫৬
শেটল্যান্ড আইল্যান্ডস
৩৬.২৯
৬৩.৭১
সাউথ আয়রশায়ার
৪২.১৩
৫৭.৮৭
সাউথ লানার্কশায়ার
৪৫.৩৩
৫৪.৬৭
স্টিরলিং
৪.২৩
৫৯.৭৭
ওয়েস্ট ডানবারটোনশায়ার
৫৩.৯৬
৪৬.০৪
ওয়েস্ট লোথিয়ান
৪৪.৮২
৫৫.১৮
মোট
৪৪.৫৮
৫৫.৪২
সব হিসাব শতাংশে