সিবিআই দফতরে সৃঞ্জয় বসু। ছবি: শৌভিক দে।
এ বার পালা সৃঞ্জয় বসুর। দীর্ঘ ছ’ঘণ্টা জেরার পরে শুক্রবার বিকালে গ্রেফতার করা হল তৃণমূল সাংসদ সৃঞ্জয় বসুকে। সৃঞ্জয়কে গ্রেফতারের পরে ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে সারদা কাণ্ডে অভিযুক্ত প্রভাবশালীদের উপর ধীরে ধীরে শক্ত হচ্ছে সিবিআইয়ের ফাঁস। সিবিআই সূত্রে খবর, তাঁর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, টাকা নয়ছয় এবং অনৈতিক ভাবে টাকা নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। সিজিও কমপ্লেক্সে সকালে হাজির হয়ে সৃঞ্জয় দাবি করেছিলেন, “ ‘সাক্ষী’ হিসাবে তাঁকে ডেকেছে সিবিআই। এক জন দায়িত্বপ্রাপ্ত নাগরিক হিসাবে সিবিআই-কে সাহায্য করতে এসেছি।” তখনও তিনি জানতেন না, কী অপেক্ষা করছে তাঁর জন্য। মাস কয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্য জনসভায় বলেছিলেন, “কুণাল চোর? মুকুল চোর? মদন চোর? টুম্পাই চোর?” রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ আগেই গ্রেফতার হয়ে জেলে রয়েছেন। এ বার গ্রেফতার হলেন শাসক দলের আর এক সাংসদ সৃঞ্জয় (টুম্পাই) বসুও।
সারদা কাণ্ডে শুক্রবার সিবিআই দফতরে হাজির হন বস্ত্রমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। সিবিআই এ দিনই ডেকেছিল প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ সোমেন মিত্র এবং সৃঞ্জয় বসুক। তলব করলেও আসতে পারেননি ‘অসুস্থ’ পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। সিমেন্ট কারখানা বিক্রি সংক্রান্ত বিভিন্ন নথি নিয়ে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদের সামান্য আগে সল্টলেকে পৌঁছলেন বস্ত্রমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। দুপুরের দিকে আসেন সোমেন মিত্র।
সারদা মামলায় গত মঙ্গলবার পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র এবং তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদকে তলব করে সিবিআই। শুক্রবার সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই সদর দফতরে দেখা করতে বলা হয় তাঁদের। একই সঙ্গে ডাকা হয় তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ সোমেন মিত্রকেও। রবিবার থেকে হাসপাতালে ভর্তি মদনবাবু সিবিআইয়ের ডাকে সাড়া দেবেন কি না তা নিয়ে প্রথম থেকেই ছিল ধোঁয়াশা। অসুস্থতার কথা জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, “আমি এখন হাসপাতালে ভর্তি। তাই কিছু বলতে পারব না।” বৃহস্পতিবার নাটকীয় ভাবে তাঁর সরকারি হাসাপাতালে ভর্তি হওয়ার পর বাড়তে থাকে তাঁর না আসার সম্ভাবনা। সেই সম্ভাবনাকে সত্যি প্রমাণিত করে এ দিন সিবিআই দফতরে একটি চিঠি পাঠান তিনি। সূত্রের খবর, চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, অসুস্থতার জন্যই তিনি সিবিআই দফতরে আসতে পারছেন না। পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করতে বিকালে আলোচনায় বসবেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অফিসারেরা।
তবে পরিবহণমন্ত্রী না এলেও কথা রাখলেন সৃঞ্জয় বসু। এ দিন সকাল পৌনে ১১টা নাগাদ সিজিও কমপ্লেক্সে পৌঁছন শাসকদলের এই সাংসদ। সিবিআই দফতরে ঢোকার সময়ে তিনি দাবি করেন, “এক জন দায়িত্বপ্রাপ্ত নাগরিক হিসাবে সিবিআই-কে সাহায্য করতে এসেছি।” আপনি কি চিন্তিত? সিজিও কমপ্লেক্সের বাইরে উপস্থিত সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে অবিচলিত সাংসদ বলেন, “আমি এমন কিছু করিনি যা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে।” মঙ্গলবারও প্রায় একই কথা বলেছিলেন সৃঞ্জয়। সে দিনও তিনি দাবি করেছিলেন, জেরা নয়, সাক্ষী হিসাবেই তাঁকে ডেকেছে সিবিআই। সূত্রের খবর, মিডিয়া ব্যবসায় সারদার সঙ্গে আর্থিক লেনদেন নিয়ে জেরা করা হতে পারে তাঁকে।
সৃঞ্জয়বাবু আসার মিনিট পনেরো আগে পৌঁছন বস্ত্রমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ও। ২০০৯ সালে লোকসানে চলা একটি সিমেন্ট কারখানা সারদাকে বিক্রি করা নিয়ে আগেই তাঁকে তলব করেছিল ইডি। কারখানা বিক্রি সংক্রান্ত নথি চেয়ে পাঠিয়েছিল সিবিআই-ও। সূত্রের খবর, বেশ কিছু নথি তাঁর আইনজীবীর মাধ্যমে আগে পাঠালেও তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি সিবিআই অফিসারেরা। তাঁকে ফের তলব করা হলে তিনি জানিয়েছিলেন, বিধানসভা অধিবেশনের মাঝখানে তাঁর পক্ষে আসা সম্ভব না। অধিবেশন শেষ হওয়ায় এ দিন নথি নিয়ে উপস্থিত হন তিনি। প্রায় দু’ঘণ্টা জেরা করা হয় শ্যামাপ্রসাদবাবুকে। সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বেরিয়ে বস্ত্রমন্ত্রী বলেন, “কিছু নথি নিয়ে সিবিআইয়ের প্রশ্ন ছিল। সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। আরও কিছু নথি চাওয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই সেগুলি দিয়ে দেব। এর পর আমাকে আবার ডাকা হলে আবার আসব।”
এ দিন দুপুর দু’টো নাগাদ সিবিআই সদর দফতরে পৌঁছন সোমেন মিত্র। সিবিআই সূত্রে খবর, ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকারকে জেরা করে নাম উঠে এসেছে শাসক দলের এই প্রাক্তন নেতার। তদন্তকারীদের সঙ্গে দেখা করার আগে সোমেনবাবু দাবি করেন, “আমিই প্রথম ব্যাক্তি যে সারদা কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত চেয়েছিলাম। যা জানি সব জানাব সিবিআইকে।”