স্বস্তিতে মনমোহন। ছবি: রয়টার্স।
আপাতত আদালতে হাজিরা দিতে হবে না মনমোহন সিংহকে। গত মাসে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত তাঁকে আদালতে হাজিরা হওয়ার জন্য সমন জারি করে। কিন্তু, বুধবার সেই সমনের উপর স্থগিতাদেশের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ফলে কয়লা-কাণ্ডে আপাতত স্বস্তি মিলল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর।
গত ১১ মার্চ দিল্লির বিশেষ সিবিআই আদালত কয়লা-কাণ্ডে অভিযুক্ত হিসেবে মনমোহনের বিরুদ্ধে সমন জারি করে। আগামী ৮ এপ্রিল তাঁকে আদালতে হাজিরার নির্দেশ দেন বিচারক ভরত পরাশর। অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, বিশ্বাসভঙ্গ এবং দুর্নীতি দমন আইনে মনমোহনকে অভিযুক্ত করে আদালত। যার সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। যদিও মনমোহন জানিয়েছিলেন, তিনি নির্দোষ। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে গত ২৫ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টে যান তিনি। সেই মামলারই শুনানি ছিল এ দিন। শীর্ষ আদালত ওই সমনের উপর স্থগিতাদেশ জারি করে।
এ দিন আদালতে মনমোহনের আইনজীবী তথা কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল বলেন, ‘‘খনি বণ্টনের ক্ষেত্রে কোনও অপরাধমূলক উদ্দেশ্য ছিল না। গোটাটাই একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত এবং সেখানে বেআইনি কিছু হয়নি। সিব্বল মনমোহনের মন্ত্রিসভার টেলিকমমন্ত্রী ছিলেন। এ দিন আদালতে মনমোহনের দুই মেয়েও উপস্থিত ছিলেন।
মনমোহনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০০৫-এ ওড়িশার তালাবিড়াতে বিড়লার সংস্থা হিন্ডালকোকে কয়লাখনি বণ্টন করে ইউপিএ সরকার। সেই সময় কয়লা মন্ত্রক প্রধানমন্ত্রীর হাতে ছিল। কিন্তু, ওই খনি বণ্টনকে ঘিরে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। পরে ২০১৩-র অক্টোবরে সিবিআই হিন্ডালকো প্রধান কুমারমঙ্গলম এবং তৎকালীন কয়লাসচিব পরাখের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। সেখানে বলা হয়, স্ক্রিনিং কমিটির সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্য করে হিন্ডালকোকে বরাত পাইয়ে দেন সচিব। পরাখ যদিও প্রধানমন্ত্রীর কোর্টে বল ঠেলে জানিয়ে দেন, কয়লা মন্ত্রক মনমোহনের দায়িত্বে থাকায় এই ঘটনায় তিনি দায়ী।
পরে সিবিআই প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের কর্তাদের এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও মনমোহনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। আদালত এই নিয়ে প্রশ্ন তোলে। ২০১৪-র ২৫ নভেম্বর বিচারক পরাশর সিবিআইকে প্রশ্ন করেন, “আপনাদের কি মনে হয়নি, এ বিষয়ে কয়লামন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি?” এর পরে গত ১৬ ডিসেম্বরে তিনি সিবিআইকে মামলার পুনর্তদন্তের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি তিনি সিবিআইকে বলেন, “আশা করি এ বার অন্য আধিকারিকদের সঙ্গে কয়লামন্ত্রীর বয়ানও রেকর্ড করা হবে।” গত ২৮ জানুয়ারি কয়লা কেলেঙ্কারিতে মনমোহনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পাওয়া তথ্য আদালতে জমা দেয় সিবিআই।
এর পর গত ২৫ মার্চ সিবিআইয়ের ওই বিশেষ আদালত মনমোহন-সহ ছয় জনকে অভিযুক্ত হিসেবে আদালতে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু, নির্ধারিত দিনের আগেই সুপ্রিম কোর্টের এ দিনের নির্দেশ মনমোহনের পাশাপাশি কংগ্রেসকেও কিছুটা স্বস্তি এনে দিল। এর আগে আদালত সমন জারী করার পরে ময়দানে নেমেছিলেন খোদ কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। দিল্লির দলীয় সদর দফতর থেকে তাঁর নেতৃত্বেই মনমোহনের বাসভবন পর্যন্ত এক মিছিল পথে নামে।