ম্যাচের পর দর্শকদের ধন্যবাদ নিউজিল্যান্ড অধিনায়কের। ছবি: এএফপি।
চলতি বিশ্বকাপের সেরা ম্যাচটা কি আমরা দেখে ফেললাম মঙ্গলবার অকল্যান্ডে?
সম্ভবত তাই।
বৃহস্পতিবার সিডনির ম্যাচ কেমন হবে, তা তো আর জানা নেই। তবে এর চেয়ে বেশি উত্তেজনাপূর্ণ আর কী-ই বা হতে পারে?
শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১২ রান দরকার। প্রথম বলে এক বাই। দ্বিতীয় বলে ফুল টসে এক রান। তিন নম্বর বলটা করতে যাওয়ার আগেই হঠাৎ হ্যামস্ট্রিংয়ে টান ডেল স্টেইনের। যেন শেষ দৃশ্যে হিরো কুপোকাত। পারবে কি হিরো তেড়েফুঁড়ে উঠে ভিলেনকে শাস্তি দিয়ে ছবিকে ‘হ্যাপি এন্ডিং’-এ নিয়ে যেতে? মাঠে ফিজিও আসার কিছু ক্ষণ পর উঠে পড়লেন স্টেইন। তখন চার বলে দশ দরকার। স্টেইন সেই সুপার হিরো হতে পারলেন কই? ভেত্তোরির একটা বাউন্ডারি এবং শেষের আগের বলে এলিয়টের ছক্কা এ বারও শেষ করে দিল দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ চারের গন্ডি পেরনোর ‘মিশন’। যা তারা শুরু থেকেই পাওয়ার জন্য ঝাঁপিয়েছিল এ দিন।
ভেত্তোরি ও এলিয়টের ইস্পাতকঠিন স্নায়ুর কাছেই হার মানতে হল ডে’ভিলিয়ার্সদের। বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল মানেই তো তাই। যে দল শেষ পর্যন্ত নার্ভ ধরে রাখতে পারবে, সেই দলই শেষ হাসি হাসবে। শেষের আগের ওভারেই দু-দু’বার ক্যাচ ফেলেছে আফ্রিকানরা। মর্কেলের ওভারে এলিয়ট বল আকাশে তুলেও বেঁচে যান। তিন ফিল্ডারের ভুল বোঝাবুঝিতে বলের নীচে গিয়েও ক্যাচ নিতে পারেননি প্রোটিয়া ফিল্ডার। ওই ওভারেরই শেষ বলে ফাইন লেগের কাছে ক্যাচ নিতে গিয়ে দুই ফিল্ডার ধাক্কা খায়। আবার বাঁচলেন এলিয়ট। সেই এলিয়টের ছয়েই ম্যাচ জিতে ফাইনালে উঠল নিউজিল্যান্ড। এর মানে হল, নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা স্নায়ুর লড়াইয়েও হারাল দক্ষিণ আফ্রিকাকে। যেটা দেখা উচিত দ্বিতীয় সেমিফাইনাল এবং ফাইনালেও।
কোরি অ্যান্ডারসনের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে যখন ফিরে যায় রুসো, তখন দক্ষিণ আফ্রিকার বোর্ডে ১১৪-৩। ইনিংসের বয়স কিন্তু তখন পেরিয়ে গিয়েছে ২৬ ওভারেরও বেশি। বেশ কাহিল অবস্থা ডে’ভিলিয়ার্সদের। কিন্তু সেই জায়গা থেকে নিজেদের বের করে আনল কিউয়িরা। ৩০ ওভারে ১২৯ তোলার পর পাঁচ ওভারে রান রেট ওঠে ১১-র কাছাকাছি। তখনই বৃষ্টি নামে এবং এর জন্য ম্যাচটা ৪৩ ওভারে নামিয়ে আনা হয়। শেষ পাঁচ ওভারে ৭৭ রান তোলে ডে’ভিলিয়ার্স-দুমিনিরা।
ওই সময় যদি নিউজিল্যান্ডের বোলাররা শুরুর দিকের পারফরম্যান্স বজায় রাখত, তা হলে এত রান উঠত না বোধহয়। সাউদি, বোল্টরা সারা টুর্নামেন্টে ভাল বল করল। অথচ আসল ম্যাচটাতেই ওরা তেমন ধারালো হয়ে উঠতে পারল না। যদিও ওরা জানত, বিপক্ষ যত রানই তুলুক, সেই রান তাড়া করতে নেমে তা তুলে ফেলতে পারবে ওদের ব্যাটসম্যানেরা। এমনকী, ডাকওয়ার্থ লিউইসের নিয়মে টার্গেটটা যখন বেড়েও যায়, তখনও ওরা বিন্দুমাত্র বিচলিত হয়নি। এই আত্মবিশ্বাসটাই তো ওদের সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট। আর টিমগেম। দু-তিন জন ব্যর্থ হলেও বাকিরা সেই ব্যর্থতা ঢেকে দিতে পারে। এটা নিয়মিতই করছে ওরা। এই ব্যাপারটার জন্যই তো ওরা সকলের চেয়ে এগিয়ে।
৪৩ ওভারে ২৯৯ তোলা মানে প্রায় সাতের আস্কিং রেট। ইডেন পার্কে রান তাড়া করতে নেমে নিউজিল্যান্ডের কাছে যা মোটেই কঠিন কাজ না। ম্যাকালাম এই দলটার নিউক্লিয়াস। একেবারে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেন তিনি। আর ক্যাপ্টেন যখন ফর্মের শীর্ষে থাকে, তখন দলের বাকিরাও প্রচন্ড উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন। নিউজিল্যান্ডের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঠিক তা-ই হয়েছে। ইঞ্জিনটাই যেখানে অসাধারণ, সেখানে তো পুরো ট্রেনটা ভাল ছুটবেই। ম্যাকালাম ব্যাটিংয়ের শুরু থেকেই বিপক্ষের বোলারদের বুঝিয়ে দেন, কোনও মস্তানি তারা বরদাস্ত করবেন না।
স্টেইন, মর্কেলদের মতো বোলারদের শুরু থেকে মাথার উপর চড়ে বসতে দিলেই যে বিপদ, তা ম্যাকালামরা ভাল ভাবে জানে বলেই শুরু থেকে ওই ঝড়টা তোলে। তখনই বোঝা যায় ওরা ২৯ মার্চ মেলবোর্নের টিকিট প্রায় বুক করে ফেলেছে। শেষ দিকে ডে’ভিলিয়ার্সরা ওদের চাপে ফেলে দিয়েছিল ঠিকই। তবে এমন চাপ সামলে শেষ হাসি হাসার বিদ্যে জানা আছে কিউয়িদের। সেই বিদ্যেটা আরও এক বার কাজে এল। ফাইনালেও এই বিদ্যেটা কাজে লাগবে। সমস্যা শুধু একটাই। এ বারের বিশ্বকাপে এই প্রথম দেশের বাইরে গিয়ে খেলবে ম্যাকালামরা। আর কোনও চাপ নেই।