কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির একান্ত সাক্ষাত্কার

লোকসভায় সাধারণ বাজেট পেশ করার কিছু ক্ষণের মধ্যেই আনন্দবাজারের মুখোমুখি হলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। পশ্চিমবঙ্গের জন্য বিশেষ প্যাকেজ থেকে শুরু করে সামাজিক প্রকল্প, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ— আলাপচারিতায় উঠে এল নানা প্রসঙ্গ।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৪:৩৯
Share:

প্রশ্ন: এই বাজেটকে কি সাহসী বাজেট বলব না সতর্ক বাজেট? মার্গারেট থ্যাচারের মতো সংস্কার নয়, আবার কমিউনিস্টদের সমাজতান্ত্রিক সামাজিক দায়বদ্ধতার বাজেটও তো নয়!

Advertisement

অরুণ জেটলি: এ সব বিশেষণ আপনারা দেন। শিরোনামের জন্য এক কথায় বাজেটকে একটা পরিচয় (আইডেন্টিটি) দিতে হয়। কিন্তু অর্থমন্ত্রী হওয়ার পরে ক্রমশ আমি বুঝতে পেরেছি, ভারত দেশটা অনেক বড়। এত জনসংখ্যা। এত স্তর। এত রকমের স্ট্যাটা। আমি বৃদ্ধি আর উন্নয়নের জন্য এক কথায় সমস্ত সামাজিক প্রকল্প বাতিল করে দেব, গরিব আমজনতার জন্য সব রকম চেষ্টা প্রত্যাহার করে নেব, এটা কখনওই আমাদের লক্ষ্য নয়। বিরোধী দলের ভূমিকায় যখন ছিলাম তখনও সে কথা আমরা বলিনি। কিন্তু ভর্তুকি কমাতে হবে। উন্নয়নের স্বার্থে, বৃদ্ধির স্বার্থে, সংস্কারের স্বার্থে কঠোর ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছি আমরা। যোজনা বহির্ভূত ব্যয় কমানোর চেষ্টা করেছি আমরা। ঘাটতি ৩.৫ শতাংশের জায়গায় ৩.৯ শতাংশ করা হয়েছে।

Advertisement

প্রশ্ন: অর্থ কমিশনের সুপারিশ মেনে রাজ্যগুলির হাতে এ বার তো অনেক বেশি রাজস্ব দিয়েছেন।

জেটলি: এ বিষয়টি নিয়ে গোড়া থেকে একটা বিতর্ক ছিল। সমস্ত সুপারিশ মানা হবে কি হবে না। অনেকে বলেছিলেন, কেন আমরা অর্থ কমিশনের সমস্ত সুপারিশ মেনে নেব? রাজ্য সরকারগুলি এই অর্থের অপচয় করতে পারে এমন আশঙ্কা নানা মহলে ছিল। কিন্তু আমার মনে হয়, এটাই বা আমরা কেন প্রথমে ধরে নেব যে রাজ্যগুলি এই টাকা হাতে পেয়ে চুরি করবে? রাজ্য সরকারগুলি যদি এই টাকা রাস্তাঘাট নির্মাণ, পানীয় জল সরবরাহের জন্য খরচ করে তাতে দেশেরই গড় জাতীয় উত্‌পাদন বাড়বে। উন্নয়ন হবে। আমরা প্রথম থেকেই কো-অপারেটিভ ফেডারিলিজমের উপর জোর দিচ্ছি। রাজ্যগুলি দুর্বল হয়ে পড়লে আর্থিক দিক থেকে কেন্দ্র সবল হবে কী ভাবে? হৃদপিণ্ডে সমস্ত রক্ত জমা হলে মানুষ বাঁচে? গোটা শরীরে রক্ত সংবহন চাই।

প্রশ্ন: পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ কী?

জেটলি: এই দু’টি রাজ্য পৃথক পৃথক ভাবে অনেক দিন ধরে আর্থিক সহায়তা চাইছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বকেয়া ঋণ মকুবের দাবি জানাচ্ছেন। অর্থ কমিশনও বলেছিল, পঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ ও কেরল ঋণজর্জর রাজ্য। কিন্তু এ বার পঞ্জাব এই আর্থিক বৈষম্য থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পেরেছে। দেখুন, পশ্চিমবঙ্গ ও কেরল দুই রাজ্য দীর্ঘ দিন ধরে বামশাসিত। আমি তো বলি ‘লেফট’ অর্থনীতিকেই ‘লেফট আউট’ করে দিয়েছে। মমতার এই অর্থনৈতিক সমস্যা সম্পর্কে আমরা সংবেদনশীল। মমতার সঙ্গে আমার ফোনে কথাও হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গকে বিশেষ সাহায্য দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা।

প্রশ্ন: কিন্তু দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা কত দূর? এখনও অনেকে সন্দিগ্ধ!

জেটলি: কর্পোরেট কর কমানো হয়েছে। বিনিয়োগের আইনি জটিলতা কমিয়ে যতটা পারা যায় প্রশাসনিক লাল ফিতের বাঁধন কমিয়ে ফেলা হয়েছে। এ অবস্থায় আমরা আশাবাদী। ৮ শতাংশ ধরে আমরা এগোনোর চেষ্টা করছি।

প্রশ্ন: কিন্তু নারেগা-র মতো সামাজিক প্রকল্পগুলি বাতিল করলেন না কেন? এটা কি বিহার আর পশ্চিমবঙ্গের কথা ভেবে?

জেটলি: ভর্তুকি কমিয়ে বৃদ্ধির লক্ষ্যেই এগোচ্ছে। ২৩ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি কমানো হয়েছে এ বার। যে সামাজিক প্রকল্পগুলি চলছে তার সামাজিক প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। এত দিন সমস্যা ছিল রূপায়ণের এবং মাত্রাতিরিক্ত সামাজিক প্রকল্পের আধিপত্যের। আমরা এগুলি বাস্তবায়িত করছি এবং ভারসাম্য এনেছি দেশের অর্থনীতিতে।

প্রশ্ন: এই বাজেট শিল্পের বাজেট, না কি গরিবের বাজেট?

জেটলি: আমাদের দেশে এ এক অবান্তর বিতর্ক। আমি চাই দেশে শিল্প আসুক, বিনিয়োগ আসুক। শিল্পপতিদের শ্রীবৃদ্ধিও চাই। গরিবের উন্নয়নও চাই। এই দুটো কি এক সঙ্গে সম্ভব নয়? শিল্পে বিনিয়োগ এলে গরিব মানুষেরও কর্মসংস্থান হবে। শিল্প হলে বিনিয়োগ বাড়বে, গরিবের উন্নয়নও সম্ভব হবে।

প্রশ্ন: কালো টাকা রুখতে যে ভাবে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে তার অপব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে কি?

জেটলি: সে তো ভারতীয় দণ্ডবিধিরও অপপ্রয়োগ হতে পারে এবং হয়। আজও এক জন থানেদার তা করতে পারে। এ জন্য আইন রদ করাটা কাজের কথা নয়। প্রশাসনে এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দুর্নীতির ঘটনা এখন বিক্ষিপ্ত ভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। এ ঘটনায় দেশের বাস্তব পরিস্থিতির ছবি উঠে আসছে। এটা বন্ধ করা কি উচিত কাজ নয়?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement