করাচিতে বাসে নির্বিচার গুলি, হত বেড়ে ৪৩

করাচিতে বাসে বন্দুকবাজের হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৪৩। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার সকালে করাচির সাফোরা চক এলাকায়। আহতের সংখ্যা ২৪। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রশাসনের। বাসটিতে ইসমাইলি সম্প্রদায়ের সদস্যেরা যাচ্ছিলেন। ইসমাইলি সম্প্রদায় শিয়া মুসলমানদেরই একটি অংশ। হামলা চালিয়ে বন্দুকবাজের দল পালিয়ে যায়। তেহরিক-ই-তালিবান থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া জুনদুল্লা গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৫ ১২:০৯
Share:

হামলার পর জায়গাটিকে ঘিরে দেওয়া হচ্ছে। ছবি: রয়টার্স।

করাচিতে বাসে বন্দুকবাজের হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৪৩। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার সকালে করাচির সাফোরা চক এলাকায়। আহতের সংখ্যা ২৪। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রশাসনের। বাসটিতে ইসমাইলি সম্প্রদায়ের সদস্যেরা যাচ্ছিলেন। ইসমাইলি সম্প্রদায় শিয়া মুসলমানদেরই একটি অংশ। হামলা চালিয়ে বন্দুকবাজের দল পালিয়ে যায়। তেহরিক-ই-তালিবান থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া জুনদুল্লা গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। তালিবানদের থেকে পৃথক হওয়ার পরে জুনদুল্লা গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে।

Advertisement

করাচিতে ইসমাইলি সম্প্রদায়ের আবাসন আল-আজহার গার্ডেন কলোনি। প্রতি দিনের মতো এ দিনও সকাল ৯টায় সেই আবাসনের একটি বাসে এই সম্প্রদায়ের ৫০-৬০ জন সদস্য করাচির ফেডারেল-বি অঞ্চলে যাচ্ছিলেন। বাসটিতে ৫২টি আসন থাকায় বেশ কয়েক জন দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ সাফোরা চকের কাছে তিন-চারটি মোটরসাইকেলে চেপে ছ’জন আততায়ী বাসটিতে ঢুকে পড়ে। আহত বাসযাত্রীদের বয়ানে জানা গিয়েছে, বন্দুকবাজরা বাসের পিছনের দরজা দিয়ে বাসে ঢোকে। প্রথমেই তারা বাসের চালকে আটক করে। যাত্রীরা ভেবেছিলেন বাসে ডাকাত পড়েছে। বাসের ভিতরে থাকা দু’জন শিশুকে বাসযাত্রীদের থেকে আলাদ করে দেয় আততায়ীরা। এর পরে বাসের মধ্যে এলোপাথাড়ি গুলি চালায় তারা। সিন্ধের পুলিশ প্রধান গুলাম হায়দর জামিল জানিয়েছে, আততায়ীরা হামলায় ৯ এমএম পিস্তল ব্যবহার করেছে। বাসের ভিতরে তাই ৯ এমএম গুলির বেশ কিছু খোলা পাওয়া গিয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে নিরাপত্তারক্ষীদের ব্যবহার করা কয়েকটি নীল টুপি পাওয়া গিয়েছে। আততায়ীরা নিরাপত্তারক্ষীর ছদ্মবেশে এসেছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

Advertisement

হামলার পর পড়ে রয়েছে রক্ত। ছবি: রয়টার্স।

প্রশাসন সূত্রে খবর, মৃতদের মধ্যে ২৫ জন পুরুষ এবং ১৬ জন মহিলা। নিহতদের মধ্যে কোনও শিশু নেই। পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সৈয়দ আলি শা জানিয়েছে, নিহতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা আর আহতদের ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আহতদের চিকিৎসার সব খরচ সরকারই বহন করবে বলে তিনি জানিয়েছেন। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। পাশাপাশি করাচির ‘স্টেশন হাউস অফিসার’ এবং জেলার পুলিশ প্রধানকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, গুলি চালানোর পরে বন্দুকবাজরা পালিয়ে যায়। পরে পাক-পুলিশ ও রেঞ্জার্সের বিশাল বাহিনী এলাকাটি ঘিরে ফেলে। আহতদের নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল যাওয়ার পথেই পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। বেশ কয়েক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা পাক-প্রশাসনের। ঘটনার পরে পাক-সেনাপ্রধান রাহেল শরিফ তাঁর বিদেশযাত্রা বাতিল করেছেন। ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। নিন্দা করেছেন তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের প্রধান ইমরান খানও।

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নিহতদের পরিজনেরা। ছবি: এএফপি।

পাকিস্তানের জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ ইসমাইলি সম্প্রদায়ের মুসলমান। পাকিস্তান সরকার ছোট ছোট সম্প্রদায়গুলির নিরাপত্তার জন্য বিশেষ কিছু করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। বেশ কিছু দিন ধরেই ইসমাইলি-র মতো গোষ্ঠীগুলিকে হামলার হুমকি দিচ্ছে আইএস, তালিবানের মতো সংগঠনগুলি।

তেহরিক-ই-তালিবান থেকে পৃথক হওয়া দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তান জুনদুল্লা গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। এই গোষ্ঠী এখন আইএস-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলে। এই হামলার দায় স্বীকার করা বেশ কিছু প্যামফ্লেট পাওয়া গিয়েছে। সেখানে আরও হামলার হুমকি দেওয়া হয়েছে। ২০১৪-র নভেম্বরে ওয়াঘা সীমান্তে হামলা চালায় এই গোষ্ঠীই। করাচিতে শিয়াদের উপরে এর আগেও বেশ কয়েকটি হামলা হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। এই শোকের সময়ে পাকিস্তানবাসীর পাশে দাঁড়ানোর কথা ট্যুইটারে তিনি জানিয়েছেন। ঘটনার নিন্দা করেছেন রাহুল গাঁধীও।

হাসপাতালের বাইরে আহতদের পরিজনদের ভিড়। ছবি: রয়টার্স।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement