টেটের সিলেবাস সংগৃহীত ছবি
শিক্ষক
শিক্ষক -শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে এ বার পুজোর আগেই পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করবে। এই পেশার সঙ্গে যুক্ত হতে অসংখ্য প্রার্থী প্রতি বছর আবেদন জানান। কিন্তু এই টেট পরীক্ষার (প্রাথমিক শিক্ষক পদে যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষা) জন্য পরীক্ষার্থীরা কোন কোন বিষয় পড়বেন বা কী ভাবে প্রস্তুতি নেবে্ন, সে বিষয়ে প্রায়ই তাঁদের সঠিক ধারণা থাকে না। এই প্রতিবেদনে তারই হদিশ পাবেন পরীক্ষায় বসতে আগ্রহীরা।
পরীক্ষার ধরন
পশ্চিমবঙ্গের টেট পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের ১৫০ নম্বরের একটি পরীক্ষা দিতে হয়। যাঁরা প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে শিক্ষকতা করতে চান, তাঁরা প্রথম পেপারের পরীক্ষা দিতে পারেন এবং যারা ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণীতে শিক্ষকতা করতে ইচ্ছুকরা দ্বিতীয় পেপারের পরীক্ষায় বসতে পারেন। দু'টি পেপারের পরীক্ষায় একসঙ্গে বসা যায় না। দু'টি পেপারের প্রত্যেকটিতেই ১৫০ নম্বরের এমসিকিউ ধাঁচের প্রশ্ন থাকে। প্রতি সঠিক উত্তরে ১ নম্বর করে বরাদ্দ থাকে। তবে ভুল উত্তরের ক্ষেত্রে কোনও নেগেটিভ মার্কিং হয় না।
প্রথম পেপারের প্রশ্নের ধরন-
১. শিশু বিকাশ ও শিশু শিক্ষাবিজ্ঞান/ পেডাগগি বিষয়ে ৩০ নম্বরের ৩০টি প্রশ্ন আসে।
২. আবশ্যিক ভাষা ১-এ ৩০ নম্বরের ৩০টি প্রশ্ন আসে।
৩. আবশ্যিক ভাষা ২-এ ৩০ নম্বরের ৩০টি প্রশ্ন আসে।
৪. অঙ্ক-এ ৩০ নম্বরের ৩০ টি প্রশ্ন আসে।
৫. পরিবেশবিদ্যায় ৩০ নম্বরের ৩০টি প্রশ্ন আসে।
দ্বিতীয় পেপারের প্রশ্নের ধরন -
১. শিশু বিকাশ ও শিশু শিক্ষাবিজ্ঞান/পেডাগগিতে ৩০ নম্বরের ৩০ টি প্রশ্ন আসে।
২. আবশ্যিক ভাষা ১-এ ৩০ নম্বরের ৩০ টি প্রশ্ন আসে।
৩. আবশ্যিক ভাষা ২-এ ৩০ নম্বরের ৩০ টি প্রশ্ন আসে।
৪. অঙ্ক ও বিজ্ঞানে বা সমাজবিদ্যা/সমাজবিজ্ঞানে ৬০ নম্বরের ৬০ টি প্রশ্ন আসে।
এর পর দেখে নেওয়া যাক টেট-এর বিস্তারিত সিলেবাস। এই সিলেবাস প্রথমে খুঁটিয়ে পড়ে তার পর রুটিন বানিয়ে সমস্ত বিষয়ে ভাল করে প্রস্তুতি নিতে হবে।
পেপার ১ এর সিলেবাস
শিশুবিকাশ ও পেডাগগি
১. শিশুবিকাশের ধারণা ও শিক্ষার সঙ্গে এর সম্পর্ক
২. শিশুবিকাশের নীতি
৩. বংশগতি ও পরিবেশের প্রভাব
৪. সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া : সামাজিক জগৎ এবং শিশুরা (শিক্ষক, পিতামাতা, সমবয়সি)
৫. পিয়াগেট, কোলবার্গ এবং ভাইগটস্কি: গঠন এবং সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি
৬. শিশুকেন্দ্রিক এবং প্রগতিশীল শিক্ষার ধারণা
৭. বুদ্ধিমত্তার নির্মাণ বিষয়ে সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি
৮. বহুমাত্রিক বুদ্ধিমত্তা
৯. ভাষা ও চিন্তা
১০. সামাজিক নির্মাণ হিসাবে লিঙ্গ, লিঙ্গের ভূমিকা, লিঙ্গ-পক্ষপাত এবং শিক্ষামূলক অনুশীলন।
১১. শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যক্তিগত পার্থক্য, ভাষা, ধর্ম, সম্প্রদায়, বর্ণ, লিঙ্গ বৈচিত্রের পার্থক্যের ভিত্তিতে জানা-বোঝার তারতম্য
১২. শিক্ষার জন্য মূল্যায়ন এবং শিক্ষার মূল্যায়নের মধ্যে পার্থক্য, স্কুলের মূল্যায়ন, ধারাবাহিক এবং ব্যাপক মূল্যায়নের দৃষ্টিভঙ্গি এবং অনুশীলন
১৩. শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতির মাত্রা মূল্যায়নের জন্য যথাযথ প্রশ্ন প্রণয়ন
১৪. অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার ধারণা ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের বোঝা
১৫. জ্ঞান ও শিক্ষাবিজ্ঞান
ভাষা ২- বাংলা
১. আনসিন প্যাসেজ পড়ে তার থেকে কম্প্রিহেনশন,ব্যাকরণ ও মৌখিক দক্ষতার উপরে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া।
২. ধবনি-বর্ণ-বর্ণ বিশ্লেষণ
৩. পড়ানো ও শেখার সামগ্রী
৪. ভাষা শোনা, বলা, লেখা ও পড়ার দক্ষতা
৫. বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের ভাষা শেখানোর কৌশল
৬. ভাষা শেখা ও আয়ত্ত করা
৭. ভাষা শিক্ষা দেওয়ার নীতি
৮. ভাষা শোনার ও বলার ভূমিকা ,ভাষার কার্যকারিতা এবং কিভাবে শিশুরা এটিকে সরঞ্জাম হিসেবে ব্যবহার করে
৯. ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাকরণের গুরুত্ব
১০. ভাষা শেখার উপকরণ: পাঠ্যপুস্তক ,মিডিয়া ও শ্রেণিকক্ষে নানা ভাষায় পাঠদানের ব্যবস্থা ইত্যাদি
ভাষা ২- ইংলিশ
১. ব্যাকরণ ও শব্দভান্ডার
২. উদ্দেশ্য ও ক্রিয়া
৩. জিজ্ঞাসামূলক বাক্য
৪ হ্যাঁ, না এবং ডাব্লিউ এইচ দিয়ে শব্দ
৫. বিশেষণ
৬. ক্রিয়াপদ ও কাল ইত্যাদি
৭. কম্প্রিহেনশন পরীক্ষা,
৮. ইংরেজির পেডাগগি
অঙ্ক
১. সংখ্যা ও বিভাজ্যতা
২. বর্গমূল ও ঘনমূল
৩. ভগ্নাংশ
৪. দশমিক ও আবৃত্ত দশমিক
৫. সরলীকরণ
৬. গড়
৭. লসাগু এবং গসাগু
৮. অনুপাত ও সমানুপাত
৯. শতকরা
১০. লাভক্ষতি
১১. সুদকষা
১২. জ্যামিতি ও পরিমিতি
১৩. রিজনি্নগ ইত্যাদি
পরিবেশবিদ্যা
১. মানবদেহ ও অন্যান্য প্রাণীর শরীর
২. খাদ্য ও খাদ্য উৎপাদন
৩. প্রাকৃতিক সম্পদ— খনিজ ও শক্তি সম্পদ
৪. পরিবেশের উপাদান ও জীবজগৎ
৫. পশ্চিমবঙ্গের পরিবেশ ও বনভূমি
৬. জনবসতি ও জনসম্পদ
৭. সমাজ ও সামাজিক সম্পদ
৮. মহাকাশ ও পৃথিবী
৯. আধুনিক সভ্যতা, পরিবেশ দূষণ ও পরিবেশ সংরক্ষণ
১০. পরিবেশবিদ্যার পেডাগগি
উপরোক্ত সমস্ত তথ্যেই কিছু রদবদল ঘটতে পারে এ বছর। তাই যোগ্য প্রার্থীরা আবেদন জানানোর আগে পর্ষদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (https://www.wbbpe.org/) নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি ভাল ভাবে পড়ে তবেই আবেদন জানান।পরীক্ষার জন্য আবেদনপত্র নেওয়া শুরু হলে খুব বেশি দেরিও হবে না পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার ক্ষেত্রে। পরীক্ষার সিলেবাস দেখে নিয়ে ও আগের বছরগুলির প্রশ্নপত্র ঘেঁটে পরীক্ষার্থীরা একটি রুটিন বানিয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করে দিতে পারেন।