৬ টি জননীতি সংক্রান্ত ফেলোশিপ সংগৃহীত ছবি
সামাজিক অসাম্যগুলি অনেকের মনেই নাড়া দেয়। 'সবার ছাদ এক আকাশ' হলেও সমাজের নানা স্তরে নানা ধরনের বৈপরীত্য বহু ছাত্রছাত্রীকেই সমাজের সার্বিক উন্নয়ন সম্পর্কিত কাজে আকৃষ্ট করে। আর এই বিষয়কে মাথায় রেখেই হাতেকলমে কাজ শেখার জন্য ভারতবর্ষে বিভিন্ন ফেলোশিপ দেওয়া হয় ছাত্রছাত্রীদের।
ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষামূলক পদ্ধতিতে কী ভাবে সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে সামাজিক পরিবর্তন আনা সম্ভব, নিম্নলিখিত ফেলোশিপগুলি সেই বিষয়গুলিই শেখায়। এই প্রতিবেদনে ভারতে গ্রামীণ শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, পরিকল্পনা ও সামাজিক কাজের ক্ষেত্রে যে ৬ টি স্নাতকোত্তর ফেলোশিপ দেওয়া হয়, সেগুলি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
১. গান্ধী ফেলোশিপ: এই ফেলোশিপটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকে পিরামল স্কুল অফ লিডারশিপ (পিএসএল) ও কৈবল্য এডুকেশন ফাউন্ডেশন (কেইএফ)। এই ফেলোশিপ প্রদানের মূল উদ্দেশ্য হল, ভারতে গ্রামীণ শিক্ষাব্যবস্থার সার্বিক উন্নতি ঘটানো। এটি একটি দু'বছরব্যাপী আবাসিক ফেলোশিপ প্রোগ্রাম অর্থাৎ এই ফেলোশিপটি গ্রহণ করলে শিক্ষার্থীদের দু'বছর ধরে গ্রামীণ অঞ্চলে থেকে সেখানকার মানুষের জীবনের মানোয়ন্নের লক্ষ্যে কাজ করতে হয়। এই ফেলোশিপটি পেতে হলে আবেদনকারীদের বয়স হতে হয় ২৬ বছরের কম। এ ছাড়া, আবেদনকারীদের বিএ বা বিএসসি ডিগ্রিধারী হতে হয়। এ ক্ষেত্রে, যাঁরা তাঁদের স্নাতক স্তরে পড়াশোনার চূড়ান্ত বর্ষে রয়েছেন, তাঁরাও আবেদন জানাতে পারেন। এই ফেলোশিপে নির্বাচিত প্রার্থীদের অনুমানিক ভাবে মাসিক ১৪,০০০ টাকা বৃত্তি দেওয়া হয়। এই ফেলোশিপের ব্যাপারে সবিস্তার জানতে চাইলে ক্লিক করতে পারেন এখানে- https://gandhifellowship.org/
২. লেজিসলেটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট টু মেম্বার্স অফ পার্লামেন্ট (ল্যাম্প) ফেলোশিপ: এই ফেলোশিপটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকে পিআরএস লেজিসলেটিভ রিসার্চ। এই সংস্থাটি সংসদের সদস্যদের আইনসভা, জননীতি এবং বাজেট নিয়ে গবেষণা সম্পর্কিত কাজগুলির ক্ষেত্রে সাহায্য করে। এই ফেলোশিপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা এক জন সংসদ সদস্যের অধীনে আইনসংক্রান্ত ও জননীতি সংক্রান্ত গবেষণার কাজে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পান। পার্লামেন্টের বর্ষাকালীন অধিবেশন থেকে শুরু করে পরের বছর বাজেট অধিবেশন পর্যন্ত মোট ১১ মাস সময় ধরে এই ফেলোশিপ প্রোগ্রামটি চলে। এ ক্ষেত্রে আবেদনকারীদের বয়স ধার্য করা হয় ২৫ বছর বা তার কম। এ ছাড়া, আবেদনকারীদের বিএ বা বিএসসি ডিগ্রি থাকতে হয়। এই ফেলোশিপে আনুমানিক মাসিক ২০,০০০ টাকা দেওয়া হয় নির্বাচিত প্রার্থীদের। এই ফেলোশিপের ব্যাপারে সবিস্তারে জানতে চাইলে ক্লিক করতে পারেন এখানে: https://prsindia.org/lamp
৩. ইয়াং ইন্ডিয়া ফেলোশিপ (ওয়াইআইএফ): এই ফেলোশিপটি অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়। এই ফেলোশিপটি দেওয়ার উদেশ্য হল বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণা ও ব্যবহারিক প্রয়োগের মাধ্যমে পরীক্ষামূলক শিক্ষার প্রসার ঘটানো। এটি একটি এক বছরব্যাপী পিজি ডিপ্লোমা প্রোগ্রাম। এই ফেলোশিপটি পেতে হলে আবেদনকারীদের বয়স হতে হয় ২৮ বছর বা তার কম। এ ছাড়া থাকতে হয় বিএ বা বিএসসি ডিগ্রি। এটি পিজি ডিপ্লোমা প্রোগ্রাম হওয়ায় এ ক্ষেত্রে কোনও বৃত্তি প্রদান করা হয় না। এই ফেলোশিপ নিয়ে আরও জানতে ক্লিক করুন এখানে: https://www.ashoka.edu.in/academic-programme/young-india-fellowship/
৪. প্রাইম মিনিস্টার রিসার্চ ফেলোশিপ (পিএমআরএফ): এই ফেলোশিপটি কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক বিভিন্ন আইআইটি, আইআইএসইআর, আইআইএসসি বেঙ্গালুরু ও বিএইচইউ, জেএনইউ-এর মতো কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে দিয়ে থাকে। এই ফেলোশিপটি সারা ভারতে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৈজ্ঞানিক গবেষণার মানোয়ন্নের জন্য দেওয়া হয়। এই ফেলোশিপ প্রোগ্রামটি যে শিক্ষার্থীরা বিটেক ও এমটেক-এর সম্মিলিত কোর্স করেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ৪ বছর ধরে চলে এবং যাঁরা বিটেক পড়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ৫ বছর ধরে চলে। এটি যে হেতু বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদেরই শুধু দেওয়া হয়, তাই এ ক্ষেত্রে আবেদনকারীদের ৮-এর বেশি সিজিপিএ নম্বর থাকতে হয়। এ ক্ষেত্রে নির্বাচিত প্রার্থীদের প্রথম দু'বছরে আনুমানিক মাসিক ৭০০০০ টাকা বৃত্তি, তৃতীয় বছর ৭৫০০০ টাকা বৃত্তি এবং চতুর্থ ও পঞ্চম বর্ষে ৮০০০০ টাকা বৃত্তি দেওয়া হয়। এ ছাড়া, এই প্রোগ্রামে থাকাকালীন ঘোরাঘুরি ও গবেষণার জন্য প্রতি বছর বার্ষিক ২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়। এই ফেলোশিপ নিয়ে আরও জানতে ক্লিক করুন এখানে: https://www.pmrf.in/
৫. টিচ ফর ইন্ডিয়া ফেলোশিপ (টিএফআই): টিচ ফর ইন্ডিয়া আদতে একটি এনজিও সংস্থা যারা দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে অসাম্য দূর করার লক্ষ্যে কাজ করে। সমাজের অবহেলিত অংশের ছেলেমেয়েদের মধ্যে গুণগত শিক্ষার প্রসার ঘটাতে চায় এই সংস্থা। এই ফেলোশিপটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। অনেকেই স্নাতকের পর এই ফেলোশিপ প্রোগ্রামে ঢুকে দেশের অনুন্নত সরকারি স্কুলগুলিতে ছাত্রছাত্রীদের পড়াতে চান। এটি দু'বছর ব্যাপী একটি প্রোগ্রাম যেখানে কঠোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর জন্য শিক্ষার্থীদের বিএ বা বিএসসি ডিগ্রি থাকতে হয়। এ ক্ষেত্রে আবেদনকারীদের কোনও নির্দিষ্ট বয়ঃসীমা ধার্য করা হয় না। বৃত্তি হিসাবে এই ফেলোশিপে আনুমানিক মাসিক ২০,৪১২ টাকা দেওয়া হয়। এই ফেলোশিপ নিয়ে আরও জানতে ক্লিক করুন এখানে-https://www.teachforindia.org/become-a-fellow/
৬. আজিম প্রেমজি ফাউন্ডেশন ফেলোশিপ (এপিএফএফ): আজিম প্রেমজি ফাউন্ডেশন এনজিও সংস্থাটি গ্রামীণ সরকারি স্কুলগুলিতে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কাজ করে। এই ফেলোশিপটি এই এনজিও সংস্থাই দিয়ে থাকে। এই ফেলোশিপ প্রদানের মূল লক্ষই হল দরিদ্র ছেলেমেয়েদের বিনামূল্যে শিক্ষাদান করা ও মহকুমা স্তরে শিক্ষার মানোন্নয়ন ঘটানো। এই ফেলোশিপটি এক বছরের জন্য দেওয়া হয়। এই ফেলোশিপ পাওয়ার জন্য আবেদনকারীদের বয়স ৩৫ বছরের বেশি হলে চলবে না। এ ছাড়াও, আবেদনকারীদের যে কোনও বিষয়ে স্নাতক পাশ হতে হবে ও ৪-১০ বছর শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাও থাকতে হবে। নির্বাচিত প্রার্থীদের আনুমানিক মাসিক ৩৭০০০ টাকা দেওয়া হয়। এই ফেলোশিপ নিয়ে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন এখানে : https://azimpremjifoundation.org/gallery-page/fellowship-page
উপরোক্ত ফেলোশিপগুলি ছাড়াও, এসবিআই ইয়ুথ ফর ইন্ডিয়া ও ইন্ডিয়া ফেলো প্রোগ্রামের মতো নানা ফেলোশিপ সর্বভারতীয় স্তরে ছাত্রছাত্রীদের প্রদান করা হয়।