সংগৃহীত চিত্র।
রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলিতে বহু বছর বাদে একসঙ্গে ৩৩ জন সহকারী শিক্ষকের বদলির নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা দফতর। এই নির্দেশিকা ঘিরে অসঙ্গতির অভিযোগ শিক্ষক সংগঠনগুলির। তাদের অভিযোগ, বদলির ক্ষেত্রে বর্ষীয়ান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। পাশাপাশি, বদলির জন্য আবেদনই করেননি এমন শিক্ষিকাকেও বদলি করা হয়েছে বলেও দাবি তাদের।
সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের সংগঠনের নেতা সৌগত বসু বলেন, “যে ভাবে বদলির বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে তা নিয়ম বিরুদ্ধ। আমরা এই নির্দেশিকা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি, সিনিওরিটি অনুসরণ করে দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা বাড়ির কাছাকাছি বদলি হতে চাইছেন, তাঁদের পছন্দমতো বিদ্যালয়ে বদলি করা হোক। এই অসাধু ও অপপ্রয়াস বন্ধ করা হোক।”
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে ৩৯টি সরকারি বিদ্যালয় রয়েছে। সেখানে পিএসসির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। বিগত ন’বছর ধরে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ। ফলে শূন্যপদের সংখ্যা বাড়ছে। আর এই শূন্যপদ পূরণ করার জন্য বিদ্যালয় শিক্ষা দফতর তার বদলির নির্দেশিকায় নবনির্মিত বিআরজিএফ পরিচালিত মডেল স্কুল এবং নিউ ইন্ট্রিগ্রেটেড সরকারি স্কুল থেকে শিক্ষকদের বদলি করছে।
শিক্ষক মহলের একাংশের মতে, ঐতিহ্যবাহী স্কুলগুলিতে যে পদ্ধতিতে নিয়োগ হয়, তার চেয়ে মডেল স্কুল বা নিউ ইন্ট্রিগেটেড স্কুলগুলির নিয়োগ পদ্ধতি আলাদা। ফলে শিক্ষকদের মানেরও তফাৎ রয়েছে। সর্বস্তরের শিক্ষককে এক করে ফেললে নামী সরকারি স্কুলগুলির পঠনপাঠনের মান কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা। রাজ্য প্রধান শিক্ষক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, “এ ভয়ানক দুর্নীতির ইঙ্গিত। গায়ের জোরে বদলি করে ঐতিহ্যবাহী সরকারি স্কুলগুলির মান আরও তলানিতে নামিয়ে দিচ্ছে সরকার। দু’টি সরকারি স্কুল হলেও তাদের নিয়োগ ও শিক্ষকদের মান এক নয়। এতে ক্ষতি হবে পড়ুয়াদের।”
প্রকাশিত বদলির তালিকায় চার নম্বর এবং ২১ নম্বরে ভূগোলের দুই সহকারী শিক্ষিকাকে নামখানা এবং ক্যানিং থেকে কলকাতার ঐতিহ্যশালী বাগবাজার মাল্টিপারপাস গভর্নমেন্ট স্কুল এবং বেথুন কলেজিয়েট স্কুলে বদলি করা হয়েছে। অথচ কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল থেকে কলকাতায় বদলির জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করা বর্ষীয়ান শিক্ষকের বদলি এখনও ফেলে রাখা হয়েছে বলে দাবি বিভিন্ন সংগঠনের।
এই তালিকায় ২৪ এবং ২৫ নম্বরে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের দু’জন শিক্ষককে এনআইজিএস স্কুল থেকে ঐতিহ্যশালী হাওড়া জেলা স্কুল এবং হেয়ার স্কুলে বদলি করা হয়েছে। তালিকায় ১৫ নম্বরে পুরুলিয়া গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুলের আট বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষিকাকে (বদলির আবেদন করেননি বলে দাবি) কলকাতার বেগম রোকেয়া স্মৃতি বালিকা বিদ্যালয় বদলি করা হয়েছে।
সরকারি স্কুলের সংগঠনগুলির বক্তব্য, শিক্ষামন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীকে অন্ধকারে রেখেই একশ্রেণির আধিকারিকেরা শিক্ষাব্যবস্থাকে নিজেদের মতো করে চালাচ্ছেন। এ বিষয়ে তারা দ্রুত সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে।