সংগৃহীত চিত্র।
মিড-ডে মিলের বরাদ্দ নিয়ে এ বার ক্ষোভ দানা বাঁধছে শিক্ষক মহলেই। ২০২২ সালে শেষ বার মিড-ডে মিলের বরাদ্দ বাড়িয়েছিল কেন্দ্র। তারপর প্রায় দু’বছর অতিক্রান্ত। বরাদ্দ আর এক পয়সাও বাড়েনি। এই নিয়ে নিশ্চুপ রাজ্য সরকারও। এ দিকে জিনিসপত্র বা সবজির দাম পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোজ। পুষ্টিকর খাবার জোগাতে গিয়ে কার্যত হিমশিম স্কুলগুলি।
পার্ক ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক সুপ্রিয় পাঁজা বলেন “তিন বছর হতে চলল মিড-ডে মিলের বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হচ্ছে না। যার ফলে রোজ পড়ুয়াদের মুখে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার তুলে দেওয়া যথেষ্ট কঠিন হয়ে পড়ছে। অবিলম্বে মিড ডে মিলের বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হোক। প্রাথমিকে ন্যূনতম ১০ টাকা এবং উচ্চ প্রাথমিকে ১৫ টাকা।”
বেশ কিছু স্কুল জানাচ্ছে, শুধু সবজির দাম নয়, গ্যাসের দামও আকাশছোঁয়া। অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দামও রোজ পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। সেখানে দাঁড়িয়ে ছাত্রছাত্রীদের মিড-ডে মিলের খাবারে পরিবর্তন করতে হলে স্কুলের তরফ থেকে শিক্ষকরাই অনেক সময় অর্থ ব্যয় করে থাকেন। তা না হলে বহু সময়ে একই খাবার রোজ খেতে হয় পড়ুয়াদের। যা তাদের ভালও লাগে না।
বাঙুর ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া বলেন, “ভোজ্য তেল থেকে শুরু করে সবজির দাম গত দু’বছরে সাংঘাতিক বৃদ্ধি পেয়েছে। সঙ্গে সপ্তাহে দু’দিন করে ডিম। একটি ডিমের দামই সাত টাকা। সেখানে বরাদ্দ মাত্র ৮ টাকা। মিড ডে মিলে ভাল খাবার দিতে গেলে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা তাই অত্যন্ত জরুরি। তা না হলে পুষ্টিকর, ভাল খাবার ছাত্র-ছাত্রীদের আর দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কেন্দ্র-রাজ্য উভয়কেই এই বিষয়টা বুঝতে হবে।”
গত বারের তুলনায় বাড়লেও ২০২২-২৩ সালের তুলনায় এ বার মিড-ডে মিলে কম বরাদ্দ ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কয়েক মাস আগে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়েছেন যে, মিড-ডে মিল বাবদ ১২৪৬৭.৩৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে এই প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ১২৬৮০.৯৭ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪-এ প্রথমে ১১৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলেও সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ১০,০০০ কোটি করা হয়। শিক্ষকদের একাংশের প্রশ্ন, দু’বছর আগের তুলনায় জিনিসের দাম বেড়েছে। তা হলে বরাদ্দ কমানো হল কেন?
বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “মনে রাখতে হবে স্কুলে মিড-ডে মিল খায় সাধারণত গরিব, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে মেয়েরা। সমাজের এই অংশের মানুষকে কেন্দ্রীয় সরকার কী চোখে দেখে, তা এই ভূমিকা থেকেই স্পষ্ট। রাজ্য সরকারের ভূমিকাও বলিহারি। হাজার হাজার কোটি টাকা অপচয় করছে অথচ মিড-ডে মিলে কিছু অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করছে না।”
প্রসঙ্গত, বর্তমানে প্রাথমিকে মাথাপিছু বরাদ্দ ৫.৪৫ টাকা এবং উচ্চ প্রাথমিকে মাথাপিছু বরাদ্দ ৮.১৭ টাকা।