মেধাতালিকায় সপ্তম রূপান্তরকামী স্মরণ্য। নিজস্ব চিত্র।
একবিংশ শতাব্দীতেও সমাজে রূপান্তরকামীদের স্বীকৃতি এবং অধিকারের লড়াইয়ের পথটা কঠিন। ঘর-বাইরে নানা বাধাবিপত্তি পেরিয়েই এ বার উচ্চমাধ্যমিকের মেধাতালিকায় একমাত্র রূপান্তরকামী পড়ুয়া স্মরণ্য ঘোষ। প্রথম দশের ৮৭ জনের মধ্যে যুগ্ম ভাবে সপ্তম স্থান দখল করে নিয়েছেন হুগলির স্মরণ্য। ইতিহাসে পেয়েছেন ১০০-য় ১০০।
চণ্ডীতলার জনাই ট্রেনিং হাই স্কুলের পড়ুয়া স্মরণ্যর প্রাপ্ত নম্বর ৪৯০। স্কুলে বরাবর প্রথম স্থানে থাকা স্মরণ্যর এই ফলাফলে খুশি পরিজন থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকারা। ইতিহাস এবং সাহিত্যের অনুরাগী স্মরণ্য। স্বপ্ন দেখেন সরকারি আমলা বা অধ্যাপক হয়ে সমাজে রূপান্তরকামীদের উন্নয়নের।
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ প্রকাশিত মেধাতালিকায় স্মরণ্য-র লিঙ্গপরিচয় পুরুষ। এই প্রসঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে যোগাযোগ করা হলে স্মরণ্য জানিয়েছেন, তিনি নিজেকে স্মরণ্যা হিসাবে পরিচয় দিতেই পছন্দ করেন। জন্মগত ভাবে পুরুষ হলেও নিজের ভেতরের নারী সত্তাতেই বিশ্বাস ছিল তাঁর। খেলতে ভালবাসতেন সহপাঠিনীদের সঙ্গেই। তাঁর এই আচরণ বান্ধবীরা যে খুব সহজেই মেনে নিয়েছিলেন তা নয়। এর পর একাদশ শ্রেণিতে তিনি রূপান্তরকামী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তরের এই লড়াইয়ে তিনি পাশে পেয়েছেন পরিবারের সদস্যদের। পাশে দাঁড়িয়েছেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। সেই জন্য নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন স্মরণ্য।
স্মরণ্য-র স্কুলের প্রধান শিক্ষক রজতকুমার কুন্ডু জানিয়েছেন, মেধাবী এই পড়ুয়া যে ফল ভাল করবেন তা প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু গত এক দেড় মাসের মানসিক টানাপড়েনের মধ্যে কলা বিভাগের স্মরণ্য যে মেধাতালিকায় স্থান করে নেবেন তা তাঁদের ভাবনাতীত। নিতান্তই ইচ্ছাশক্তির জোরে তাঁর এই সাফল্য। একই মত স্মরণ্যর মা দেবস্মিতা ঘোষের।
আমলা হতে না পারলে অধ্যাপনা করতে চান স্মরণ্যা। অধ্যাপক হিসাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মানুষের মতো মানুষ হিসাবে বাঁচা শেখাতে চান। যেখানে লিঙ্গ পরিচয় বড় হয়ে উঠবে না।