প্রতীকী ছবি।
সুরভিত সামগ্রী পছন্দ নয়, এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া কঠিন। তাই বিশ্বজুড়ে সুগন্ধি শিল্পের জুড়ি মেলা ভার। এই বিশেষ কর্মক্ষেত্রে কাজ করার ইচ্ছে থাকে বহু পড়ুয়াদেরই। সে ক্ষেত্রে কোন বিষয় নিয়ে জ্ঞান থাকলে এবং কোন ডিগ্রি থাকলে পেশাদার সুগন্ধি বিশারদ হওয়া সম্ভব, সেই বিষয় নিয়ে রইল খুঁটিনাটি তথ্য।
সুগন্ধি শিল্পের ইতিহাস:
অতীতে প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় প্রথম সুগন্ধি ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন উদ্ভিদ এবং ফুলের নির্যাসের সঙ্গে চর্বি মিশিয়ে তৈরি করা হত মলম। সেই মলমকেই সুগন্ধি হিসেবে মাখা হত। এর পাশাপাশি, বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে লতা এবং গুল্ম পুড়িয়ে সুগন্ধি তৈরির রেওয়াজ ছিল। প্রসঙ্গত, লাটিন শব্দ ‘পার ফুম’ থেকে এসেছে পারফিউম।
এর পাশাপাশি, ইউরোপে প্রাচীন পারস্য সাম্রাজ্যে শুরু হয়েছিল সুগন্ধি ব্যবহারের প্রচলন। সম্রাট আলেকজান্ডার সেই সাম্রাজ্য দখল করার পর গ্রীসে ওই সুগন্ধি তৈরির কৌশল নিয়ে যান। এর পর ধীরে ধীরে সমগ্র বিশ্বে শুরু হয় সুগন্ধি ব্যবহারের চল।
তবে কৃত্রিম সুগন্ধির আবিষ্কার করা হয় উনবিংশ শতাব্দীর শেষ পর্বে। রসায়ন বিজ্ঞানের হাত ধরে বাজারে বিক্রি হতে শুরু করে এই বিশেষ সুগন্ধি।
কোন বিষয় নিয়ে পড়া যেতে পারে?
সুগন্ধি শিল্পে পেশাদার হিসেবে কাজ করতে চাইলে প্রাক উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে রসায়ন নিয়ে পড়াশোনা করা প্রয়োজন। কারণ এই বিজ্ঞানের হাত ধরেই সিন্থেটিক মলিকিউলের অস্তিত্ব আবিষ্কার করা হয়েছিল, যা কৃত্রিম সুগন্ধি তৈরির মূল উপাদান। এই সিন্থেটিক মলিকউলকে বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করে তৈরি করা হয়ে থাকে পারফিউম।
স্নাতকস্তরে ব্যাচেলর অফ সায়েন্স টেকনোলজি (বিএসসি-টেক) ইন কসমেটিকোলজি অ্যান্ড পারফিউমারি, ব্যাচেলর অফ টেকনোলজি (বিটেক) ইন পারফিউমারি অ্যান্ড কসমেটিক্স, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন পারফিউমারি-সহ আরও বেশ কিছু ডিগ্রি এবং ডিপ্লোমা কোর্সে পড়ার সুযোগ রয়েছে।
আগ্রহী পড়ুয়ারা পরবর্তীকালে স্নাতকোত্তর স্তরেও পড়াশোনা করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে তাঁদের মাস্টার অফ টেকনোলজি কিংবা মাস্টার অফ সায়েন্স-এর ডিগ্রির আওতায় সম্পূর্ণ করতে হবে ডিগ্রি কিংবা ডিপ্লোমা কোর্স।
কোন কোন প্রতিষ্ঠানে পড়ানো হয়?
ভারতবর্ষে বিনায়ক গনেশ ভেজ় কলেজ, মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয়, কনৌজের ফেগ্ররেন্স অ্যান্ড ফ্লেভার ডেভেলপমেন্ট সেন্টার, ইনস্টিটিউট অফ কেমিক্যাল টেকনোলজি, দেহরাদুনের ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটে এই বিষয়গুলি পড়ানো হয়ে থাকে। এর পাশাপাশি, বেশ কিছু স্বীকৃত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উল্লিখিত বিষয়গুলি পড়ানো হয়ে থাকে।
কাজের সুযোগ কেমন?
যাঁরা সুগন্ধি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের পারফিউমার বলা হয়ে থাকে। সাধারনত, প্রসাধন সামগ্রী এবং সুগন্ধি তৈরির করার গবেষণাগারে প্রয়োজন হয়ে থাকে পেশাদারদের। এর পাশাপাশি, সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থায়ও সমান ভাবে পারফিউমারদের নিয়োগ করা হয়ে থাকে। একই সঙ্গে, চা এবং ওয়াইন শিল্পেও এই পেশাদারদের রয়েছে চাহিদা। সরকারি এবং বেসরকারি ক্ষেত্রে এভালুয়েটর, ফ্রেগরেন্স টেকনিক্যাল ম্যানেজার, ফ্রেগরেন্স টেকনিশিয়ান, জিসিএমএস টেকনিশিয়ান পদেও নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় নিয়মিত ভাবেই।
বেতন:
প্রাথমিক স্তরে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা বেতন হিসেবে পান পারফিউমাররা। তবে কাজের অভিজ্ঞতার নিরিখে সেই বেতনক্রম মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
সুগন্ধি শিল্পে পেশাদারদের কাজ করার ক্ষেত্রে সুগন্ধের প্রতি অমোঘ আকর্ষণ এবং কৌতুহল থাকা প্রয়োজন। যে কোনও ধরণের গন্ধকে সুগন্ধে পরিণত করার আকাঙ্খা এই পেশায় উন্নতি করার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তোলে।