পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক টেট পরীক্ষা। প্রতীকী ছবি।
সুধী শিক্ষার্থীবৃন্দ, আসন্ন টেট পরীক্ষা নিয়ে আশা রয়েছে সমস্ত যোগ্য প্রার্থীদের। অন্যতম বিষয় বাংলা নিয়ে সকলের প্রস্তুতি তুঙ্গে রয়েছে নিশ্চয়ই। আজ আমরা বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনার পন্থা নিয়ে আলোচনা করব। যেহেতু সমস্ত প্রশ্নই হবে বহুধা উত্তর ভিত্তিক তাই প্রতিটি বিষয়ের খুঁটিনাটি না জানলে উত্তর করা হয়ত কঠিন হতে পারে। প্রথম ভাষা বাংলার প্রশ্ন হবে মোট ৩০ নম্বরের। যার মধ্যে বোধপরীক্ষণ থাকবে ১৫ নম্বরের আর পেডাগগি থাকবে ১৫ নম্বরের। এখন প্রশ্ন হ'ল সমস্ত পাঠ্যক্রম কী ভাবে এত কম সময়ে আয়ত্তে আসবে। দেখা যাক আমাদের স্ট্র্যাটেজি কী হতে পারে —
প্রথমেই বুঝতে হবে বাংলা বিষয়ের পাঠ্যক্রমের কোন কোন বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। যদি পর্যায়ক্রমে বিভাজন করি তাহলে কমবেশি চারটি পর্যায় পাবো।
এমতাবস্থায় প্রত্যেকটি বিষয়ের জন্য শিক্ষার্থীদের পড়া করার ধরন বিভিন্ন হওয়াই বাঞ্ছনীয়। অধ্যায়ের নিরিখে যদি বিচার করা হয় তাহলে---
অতি সহজ বিষয়ের মধ্যে ধ্বনি, বর্ণ, শব্দ, পদ, দল, বর্ণ বিশ্লেষণ ইত্যাদি পড়বে। সাথে পদ পরিচয়, বিভিন্ন ধরনের পদের বিভাগ, পদান্তর ইত্যাদি বিষয়গুলিও সংযুক্ত হবে।
সহজ বিষয়ের মধ্যে প্রথমেই আসবে সন্ধি, কারক, বিভক্তি। এছাড়াও বিপরীত শব্দ, সমার্থক শব্দ, সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দ, শব্দভান্ডার রয়েছে।
মধ্যম কঠিন বিষয়ের মধ্যে সমাস, সমাসের বিভাজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বাক্য-বাচ্য , বাক্য-বাচ্য পরিবর্তন, আকাঙ্ক্ষা-আসত্তি -যোগ্যতা, উদ্দেশ্য-বিধেয়, ইত্যাদি বিষয়গুলি এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য।
কঠিন বিষয় হিসেবে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে প্রত্যয় এবং বিভিন্ন প্রকার প্রত্যয়ের ভাগ, বিশ্লেষণ ইত্যাদি বিষয়।
পরিপ্রেক্ষিত বিচার করে এবার আমাদের ঠিক করতে হবে কী ভাবে এই চারটি পর্যায় পড়ব। প্রথমে আসা যাক অতি সহজ বিষয়ে। এই অংশে যেক’টি বিষয় সবই পড়তে হবে তথ্যভিত্তিক উত্তর নির্ণয়ের লক্ষ্য নিয়ে। যেহেতু বোধপরীক্ষণের জন্য অনুচ্ছেদ বা স্তবক দেওয়া থাকবে তাই সংজ্ঞাভিত্তিক প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তাহলে প্রশ্ন হওয়ার সুযোগ রয়েছে তিন ক্ষেত্রে এক,শব্দ বা পদভিত্তিক; দুই, ব্যাকরণভিত্তিক; তিন বাক্য বা বাচ্য ভিত্তিক। কাজেই এই পর্যায়ে যদি কোনো পরীক্ষার্থী মনোযোগ সহকারে পূর্বোক্ত বিষয়গুলি অনুধাবন করে তাহলে উত্তর করতে পারবে অনায়াসে। দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্ষেত্রে শুধু মুখস্থ নয় পড়তে হবে অনুশীলন ও উদাহরণ পর্যালোচনার ভিত্তিতে। ধরা যাক কারক-বিভক্তি। এ ধরনের বিষয়ের ক্ষেত্রে যদি অনুশীলন না করা হয় তাহলে পরীক্ষার সময় সঠিক উত্তর নির্বাচন করা যথেষ্টই কষ্টসাধ্য হ'য়ে যাবে। তাই যদি প্রকৃত অর্থেই এই অংশে ভালো ফল করতে হয় তাহলে সহজ পন্থা হ'ল উদাহরণ বিশ্লেষণ।
বাংলা বিষয়ের বাকি দুটি পর্যায়ের পঠন-পাঠন একটু অন্য ধরনের সেকথা বলতে দ্বিধা নেই। সমাস এমনই একটি বিষয় যেটি শুধুমাত্র মুখ বা উদাহরণ মনে রাখলেই চলবে না তার সাথে প্রয়োজন প্রতিটি সমাসের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ ও পরস্পরের মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে অবগতি। এমনও অনেক সমাসবদ্ধ পদ রয়েছে যার একাধিক সমাস হয়ে থাকে। তাই শিক্ষার্থী যদি উদাহরণের অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ না করে তাহলে উত্তরে পৌঁছানো বেশ কঠিন। যেমন ধরা যাক 'নির্ভুল' শব্দটি। যদি প্রাণীবাচক বা ব্যক্তিবাচক হয় তাহলে উত্তর হবে নঞ বহুব্রীহি আর যদি অপ্রাণীবাচক হয় তাহলে উত্তর করতে হবে নঞ তৎপুরুষ। একই সমস্যা রয়েছে বাচ্যের ক্ষেত্রেও। একটি উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি স্পষ্ট করা যাক। বাচ্যান্তর বিষয়টি আমাদের সকলেরই জানা। সাধারণত কর্তৃবাচ্য থেকে কর্মবাচ্য বা ভাববাচ্যে বাচ্যান্তর করতে দেওয়া হয়। এখন যদি কোনো কর্তৃবাচ্যের বাক্যে কর্তৃপদের উল্লেখ না থাকে, যাকে ব্যাকরণগত ভাবে উহ্য কর্তা বলা হয়, তাহলে সেই বাক্যের কর্মবাচ্য এবং ভাব বাচ্যের রূপ অভিন্ন হবে। যেমন —রাম ভাত খায় (কর্তৃবাচ্য) – রামের দ্বারা ভাত খাওয়া হয় (কর্মবাচ্য) – রামের ভাত খাওয়া হয় (ভাববাচ্য)। এখন যদি প্রথম বাক্যে 'রাম' না থাকে তাহলে পরের দুটো বাক্য থেকে রামের দ্বারা' এবং 'রামের' অংশ দুটির বিলুপ্তি ঘটবে। লক্ষণীয় সেক্ষেত্রে দুটি বাচ্যের রূপই অনুরূপ হবে। তাই শিক্ষার্থীর বিশ্লেষণ ক্ষমতার বিকাশ ঘটা অবশ্যই প্রয়োজন।
এবার আসা যাক অন্তিম পর্যায়ে। যেখানে বাংলা ব্যাকরণের অন্যতম কঠিন বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে। প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, এক্ষেত্রে আমি একটা কথা সকলের সাথে ভাগ করে নিতে চাই। কোনো বিষয়ের কাঠিন্য বা সহজত্ব সবটাই আপেক্ষিক। তাই ভাবনার দ্বিচারিতাকে কখনো প্রশ্রয় দেবে না। ব্যাকরণের প্রায় সমস্ত বিষয়েই রয়েছে বোধগম্যতার ইঙ্গিত। আর এই ইঙ্গিতবহ দিকটি যদি একবার আত্তীকরণ করা যায় তাহলে প্রত্যয় বা সমজাতীয় সব বিষয়ই হ'য়ে উঠবে 'জলবৎ তরলম্'। অনেকেরই প্রশ্ন থাকে যে কীভাবে প্রত্যয়কে আয়ত্তে আনা যাবে – সেক্ষেত্রে আমার উত্তর হ'ল, বিভাজন ও উদাহরণ সম্পর্কে সঠিক ধারণা তৈরি- -এর প্রথম পদক্ষেপ। সাধারণত প্রত্যয়ও শব্দের শেষের অংশ প্রত্যয় নির্ণয়ে সাহায্য করে। যেমন- ভক্ত একটি প্রত্যয়ন্ত শব্দ। এই শব্দের শেষে রয়েছে 'ক্ত' তাহলে এর প্রত্যয় হবে 'অ'। সম্পূর্ণ বিভাজন হবে, √ ভজ্ + ক্ত = ভক্ত। আমরা যদি সম্পূর্ণ অধ্যায় থেকে প্রতিটা পৃথক প্রত্যয়ের পৃথক উদাহরণ একটু বিশ্লেষণ করে নিতে পারি, তাহলে তথাকথিত 'কঠিন' এই অধ্যায়টি নিঃসন্দেহে সহজ হয়ে উঠবে।
সবশেষে বলব আগামী পরীক্ষার জন্য ব্যাকরণের বিষয়গুলিকে সহজ, বোধগম্য ও সঠিক প্রয়োগ করার দক্ষতা অর্জনের কিছু উপায়ের কথা। এক, নিয়মিত অনুশীলন; দুই, উদাহরণ বিশ্লেষণ, তিন, প্রতিটি বিষয়ের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অবগতি; চার, সমজাতীয় দু’টি বিষয়ের মধ্যে মিল ও অমিল সম্পর্কে জ্ঞান; পাঁচ, ভীতি দূর করে বিষয়ের প্রতি ভালোবাসার সূচনা। একথা অনস্বীকার্য যে কাজটি খুব সহজ নয়, তবে বিশ্বাসের সাথে যদি করা যায় তাহলে নিঃসন্দেহে কৃতকার্য হওয়া যাবে। আশা করি এরপর আসন্ন পরীক্ষার সময়ে বাংলা বিষয় নিয়ে ভীতি অনেকটাই দূর হবে। রাইস এডুকেশন চার দশক ধরে ছাত্রছাত্রীদের সমস্ত সমস্যায় পাশে আছে, আগামী দিনেও থাকবে। তাই চিন্তা নয় সাফল্যের স্বাদ নিতে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের সহযোগিতায় আপনাদের পরিশ্রমে সাফল্যের আলোকে উদ্ভাসিত হবে আগামী ভবিষ্যৎ।
এই প্রতিবেদনটি ‘রাইস এডুকেশন’-এর পক্ষ থেকে টেট পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে সংকলিত।