সংগৃহীত চিত্র।
রাজ্যের সরকারি এবং সরকার পোষিত কলেজের অধ্যাপকদের পদোন্নতি থমকে। এমনই অভিযোগ কলেজের অধ্যাপক সংগঠনগুলির। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত যে সমস্ত অধ্যাপকের পদোন্নতি হওয়ার কথা তাঁদের পদোন্নতি করছে না সরকার। প্রায় দু’হাজার অধ্যাপকের পদোন্নতির ফাইল বিকাশ ভবনের টেবিলেই আটকে রয়েছে।
১৯৭৩ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-র বেতনক্রম অনুসারে অধ্যাপকদের পদোন্নতি ও বেতন হয় থাকে। এত দিন পর্যন্ত এই আইন মেনেই রাজ্যের সমস্ত কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পদোন্নতি হত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অধ্যাপকের অভিযোগ, হঠাৎ করেই রাজ্য উচ্চশিক্ষা দফতর এই পদোন্নতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
কোনও অধ্যাপক যখন প্রথম কলেজে অধ্যাপনার কাজে যুক্ত হন তাঁর চাকরির সময়কালে আইন অনুযায়ী মোট তিন বার পদোন্নতি হয়। অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদেই চাকরিতে যুক্ত হন। প্রথমে একই পদে দু’বার পদোন্নতি হওয়ার সুযোগ থাকে। যুক্ত হওয়ার সময় থাকে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ‘স্টেজ ওয়ান’, যা পদোন্নতি হয় অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ‘স্টেজ টু’ এবং ‘স্টেজ থ্রি’ পদে। চতুর্থ বার পদের নাম বদলায়। অর্থাৎ তখন তিনি অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর থেকে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসরের পদে যান।
উল্লেখ্য, যারা পিএইচডি ডিগ্রি প্রাপ্ত তাঁরা অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদে কাজে যুক্ত হওয়ার পর থেকে মোট চার বছর পর উপযুক্ত হন প্রথম পদোন্নতির জন্য। এমফিল থাকলে পদোন্নতি পাঁচ বছরে এবং যাঁদের কোনও ডিগ্রি নেই তাঁরা পদোন্নতির উপযুক্ত হন ছ’বছরে। তৃতীয় বার অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদ থেকে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর পদে পদোন্নতির সময় ডিগ্রির বিষয়টি গ্রাহ্য হয় না। তার পরিবর্তে অধ্যাপনার মেয়াদ বিবেচিত হয়। ২০২১-র জানুয়ারি থেকে কোনও স্তরেই পদোন্নতি হচ্ছে না।
উচ্চ শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক জানান, ২০১৯ রোপা আইন অনুযায়ী অন্তর্বর্তিকালীন ফিকসেশন দেওয়া বন্ধ। ওই আধিকারিক জানা, রোপা আইন অনুসারে রাজ্যের অধ্যাপকদের বেতনক্রম নির্ধারিত হয়। যদিও অধ্যাপকদের দাবি, ইউজিসি-র বেতনক্রম অনুযায়ী তাঁদের মাইনে হয়। এই অবস্থায় অন্তর্বর্তিকালীন ফিকসেশনের প্রশ্ন আসে না।
পশ্চিমবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ওয়েবকুটার ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রবোধকুমার মিশ্র বলেন, ‘‘যে দিন থেকে ইউজিসি-র বেতনক্রম প্রবর্তন করা হয়েছে, আমরা সেই আইন অনুযায়ীই বেতন ও পদোন্নতি পেয়েছি। সে ভাবেই উচ্চশিক্ষা পর্ষদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকে। কিন্তু বর্তমানে রাজ্য সরকার ২০১৬-র ইউজিসি-র বেতনক্রমকে মান্যতা দিচ্ছে না। পরিবর্তে রাজ্যে সরকারের ২০১৯ রোপা আইন অনুসরণ করছে। সেই বিধি উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী পদোন্নতি আটকে দিয়েছে।’’
মূলত পদোন্নতি সংক্রান্ত সমস্ত কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করে বিকাশ ভবন। প্রায় দু’হাজার অধ্যাপকের পদোন্নতির কাগজ বিকাশ ভবনে টেবিলেই পড়ে রয়েছে। আদৌ পদোন্নতি হবে কি না তা নিয়েও সংশয় অধ্যাপক মহলের একাংশের। যদিও অধ্যাপকদের একাংশের দাবি, শীঘ্র সুরাহা না হলে তাঁরা আইনি পথ বেছে নেবেন।