প্রতীকী চিত্র।
এ দেশে গবাদি পশু-পাখির থেকেও আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। ২০১৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এই ক্ষেত্রে আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭.৯ শতাংশে। একই সঙ্গে কৃষি সংক্রান্ত মোট মূল্যের সংযোজন ২৪ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০ শতাংশ। ২০১৯ সালের লাইভস্টক সেনসাস অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী গবাদি পশু-পাখির সংখ্যা প্রায় ৫৩ কোটি ৫৭ লক্ষ। অথচ দেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রাণী চিকিৎসকের সংখ্যা মাত্র ৭০ হাজার অর্থাৎ এক লক্ষও নয়। পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যাটা মাত্র ২,৬৬০ জন। ভেটেরিনারি কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে অন্তত দেড় লক্ষ প্রাণী চিকিৎসকের (ভেটেরিনারি স্পেশালিস্ট) প্রয়োজন।
এই পেশায় প্রবেশ কী ভাবে করা সম্ভব ?
রাজ্যে প্রাণী চিকিৎসা বিজ্ঞান বিষয়টি স্নাতক স্তরে পড়ানো হয় পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ে। পাঁচ বছরের কোর্সের সঙ্গে ইন্টার্নশিপ করারও সুযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে দু’বছরের স্নাতকোত্তর কোর্স তো বটেই, তিন বছরের পিএইচডি করারও সুযোগ রয়েছে।
প্রবেশিকার খুঁটিনাটি:
স্নাতক স্তরে এই বিষয় নিয়ে ভর্তি হতে চাইলে থাকতে হবে ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট (নিট) স্কোর। একই সঙ্গে কেউ ভেটেরিনারি কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (ভিসিআই)-এর সর্বভারতীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও রাজ্যের ভেটেরিনারি কলেজে ভর্তি হতে পারবেন। প্রসঙ্গত, সংশ্লিষ্ট কলেজগুলিতে ১৫% আসনে ভিসিআই পরীক্ষার স্কোরের ভিত্তিতে ভর্তি করা হয়।
তবে, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তি নেওয়া হয়ে থাকে। এ ছাড়াও, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ (আইসিএআর)-এর সর্বভারতীয় পোস্ট গ্র্যাজুয়েট এবং পিএইচডি এন্ট্রান্সের মাধ্যমেও ভর্তি হওয়া সম্ভব।
চাকরির সুযোগ:
ভেটেরিনারি সায়েন্স নিয়ে স্নাতক হওয়ার পরে ভেটেরিনারি কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (ভিসিআই) কিংবা ওয়েস্ট বেঙ্গল ভেটেরিনারি কাউন্সিল-এর তরফে দেওয়া হয় রেজিস্ট্রেশন নম্বর। কাউন্সিলে নথিভুক্ত ব্যক্তি প্রাণী চিকিৎসক হিসাবে দেশের যে কোনও জায়গায় স্বাধীন ভাবে প্রাণী চিকিৎসার কাজ অর্থাৎ প্র্যাকটিস করতে পারেন। দেশের বিভিন্ন শহর এবং শহরতলি তো বটেই, গ্রামাঞ্চলেও পোষ্য প্রাণীর সংখ্যা গত কয়েক বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই স্বাধীন প্রাণী চিকিৎসক হিসাবে আয়ের পথও প্রশস্ত হয়েছে।
সরকারি চাকরির ধরন:
এ রাজ্যে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে ২-৩ বছর অন্তর ভেটেরিনারি অফিসার নিয়োগ করা হয়ে থাকে। তবে, ভেটেরিনারি অফিসার হিসাবে কাজে যোগ দেওয়ার আগে অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও ফিনান্স সংক্রান্ত একটি প্রশিক্ষণ সরকারি ভাবে তাঁদের দেওয়া হয়। এর পরে নিযুক্তরা অ্যানিম্যাল রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের অধীনে বিভিন্ন ব্লকে গ্রেড কমিশন ১ গেজেটেড অফিসার হিসাবে কাজ করতে শুরু করেন।
অন্যান্য পেশা:
ভেটেরিনারি বিশেষজ্ঞরা প্রাণী চিকিৎসা ছাড়াও পশু-পাখি সংক্রান্ত বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে তদারকি, পশুপাখি বণ্টনের মতো প্রয়োজনীয় কাজ করার সুযোগ পেয়ে থাকেন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতকরা তাঁদের পছন্দ অনুযায়ী সিভিল সার্ভিস, কলেজ সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার পাশাপাশি, ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রেও পরীক্ষা দিতে পারেন। উল্লিখিত বিষয়ে স্নাতকরা এই ধরনের পরীক্ষায় সাধারণত সফল হয়ে থাকেন।
উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণা:
উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা করতে আগ্রহীরা আইসিএআর পরিচালিত সর্বভারতীয় পোস্ট গ্র্যাজুয়েট বা পিএইচডি এন্ট্রান্স দিয়ে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে জুনিয়র রিসার্চ ফেলো কিংবা সিনিয়র রিসার্চ ফেলো হিসাবে কাজ করার সুযোগ পেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে নিজের পছন্দের বিষয় বেছে নিয়ে ইন্ডিয়ান ভেটেরিনারি রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ন্যাশনাল ডেয়ারি রিসার্চ ইনস্টিটিউটে ভর্তি হতে পারবেন। এ ছাড়া, বিভিন্ন রাজ্যের ভেটেরিনারি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেলোশিপের সাহায্যে ভর্তি হওয়ার সুযোগ তো আছেই।
বিদেশে গবেষণার সুযোগ:
গবেষণার ক্ষেত্রে ভেটেরিনারি মাইক্রোবায়োলজি, ভেটেরিনারি প্যারাসিটোলজি ও ভেটেরিনারি প্যাথলজিতে যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের বাইরে পিএইচডি বা পোস্ট ডক্টরেট করতে আগ্রহীরা লন্ডনের রয়্যাল ভেটেরিনারি কলেজ বা অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ইউনিভার্সিটিতেও আবেদন করতে পারেন। বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ফেলোশিপের সঙ্গে পিএইচডি বা পোস্ট ডক্টরেট প্লেসমেন্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে ভেটেরিনারি সায়েন্সের পড়ুয়াদের জ়ুলজি, ফিজ়িয়োলজি, জেনারেল মাইক্রোবায়োলজি বা বায়োটেকনোলজি শাখার পড়ুয়াদের থেকে বেশি অগ্রাধিকার থাকে, যে হেতু তাঁদের প্রাণীচিকিৎসা সংক্রান্ত জ্ঞান রয়েছে।
ভেটেরিনারি সায়েন্সের পড়ুয়াদের কাছে পছন্দ ও বুদ্ধিমত্তা অনুযায়ী কাজ বেছে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। অন্যান্য বিজ্ঞান নির্ভর বিষয়ের তুলনায় এর বৈচিত্র্যময় কাজের সুযোগ বর্তমানে বহু পেশার পথই খুলে দিয়েছে।
[লেখক পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান]